পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বিশ্বব্যাপি প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে। আর তাই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হতে পারে পাট।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সোমবার (১৮ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে এর বহুমুখীকরণ: সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, পৃথিবীর প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট ও পাটজাত পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এধরনের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতিবছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী পাট ও পাট পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য এর বহুমুখীকরণ অত্যন্ত অপরিহার্য এবং পাট খাতের আধুনিকায়নে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও চতুর্থ শিল্প বিল্পবের সুফল কিভাবে এখাতে ব্যবহার করা যায়, তার ওপর গুরুত্বারোপের আহবান জানান। তিনি জানান, বর্তমানে আমাদের দেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রায় ২৩৫ ধরনের পাট পণ্য উৎপাদন করেন এবং প্রায় ৫ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের সাথে সম্পৃক্ত। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি পাট ও টেক্সটাইল শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাট খাতের পুনরুত্থান এবং পাট হতে কাগজ প্রস্তুুতকে উৎসাহিতক করার জন্য ‘জুট পাল্প অ্যান্ড পেপার অ্যাক্ট’ প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরোও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পর পাটই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, তাই এ খাতের উন্নয়নে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার একান্ত আবশ্যক।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, বিশ্বব্যাপি প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের ফলে আমাদের পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদার নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে এবং এ সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, পাটের বীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন এবং পাট পণ্যের বহুমুখীকরণে গবেষণার কোন বিকল্প নেই এবং এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এ উপমহাদেশে পাটের মাধ্যমেই কৃষি পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে এবং কালের পরিক্রমায় পাট আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, পাট পণ্য শতভাগ মূল্য সংযোজনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে। তিনি বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী পাট পণ্যের সম্প্রসারণের জন্য ইতিবাচক ব্রান্ডিং পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডিসিসিআই পরিচালক মো. রাশেদুল করিম মুন্না মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে, বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদনের ঊদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে পাট পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে পাটের উৎপাদন প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপ এর সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী পাটের তৈরি শপিং ব্যাগের চাহিদা প্রায় ৫০০ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে পাটের তৈরি ব্যাগের বাজার মূল্য হবে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বাংলাদেশের পাটখাতের উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা, বিনিয়োগ সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন, মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশেষায়িত পাটকল স্থাপন, বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের উৎপাদিত পাট পণ্যের ব্রান্ডিং বাড়ানো এবং ‘জুট পেপার অ্যাক্ট’ প্রণয়নের আহবান জানান।
আলোচনায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং নির্বাহী পরিচালক জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) রীনা পারভীন, বাংলাদেশ পাট গবেষণা কেন্দ্রের (বিজেআরআই) মহাব্যবস্থাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান এবং এসিআই এগ্রোবিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এফ এইচ আনসারী অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দ পাটের নতুন বীজ উৎপাদনে গবেষণা পরিচালনা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো গতিশীল করা, সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, প্রয়োজনীয় নীতিমলা প্রণয়ন ও অবকাঠমো নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।