পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : মোবাইল ফোন গ্রাহকদের সিম নম্বর অপরিবর্তিত রেখে সকল অপারেটরের সেবা গ্রহণের সুযোগ দিতে চালু হচ্ছে মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি)। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে চালু হচ্ছে এই সুবিধা। ইতোমধ্যে মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) নীতিমালার সংশোধিত খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় এমএনপি সেবা চালু করতে এই নীতিমালা বিটিআরসিতে পাঠানে হবে এবং এরপরই কমিশন এমএনপি সেবার কাজ নিলামের প্রস্তুতি নেবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। নিলাম প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ করতে এবং আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে সংশোধিত নীতিমালায় ৯টি মানদ-ের ভিত্তিতে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এমএনপি বাস্তবায়নের কাজ কারা পাবে, সেই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে কয়েকটি মূল্যায়ন মানদ- যুক্ত করে গত জানুয়ারিতে এমএনপি নীতিমালার সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এরপর তা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। নীতিমালার সংশোধিত খসড়া কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন করেছে বলে ডাকা ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর আগে এমএনপি বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরও এই কাজের লাইসেন্স দেয়ার নিলাম পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কোন প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে তা নিয়েও কথা হয়। ফলে পূর্বের নীতিমালা সংশোধন করে যোগ্যতার নতুন শর্ত যোগ করার উদ্যোগ নেয় টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় খসড়া সংশোধন করে কয়েকটি বিষয় নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগ।
নিলাম প্রক্রিয়ায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে আগে নীতমালায় সুনির্দিষ্ট কোনো মানদ-ের উল্লেখ ছিল না। সংশোধনের পর সেখানে ৯টি মানদ-ের ভিত্তিতে মূল্যায়নের কথা বলা হয়। এসব মানদ-ের মধ্যে রয়েছে, এমএনপি পরিচালনার অভিজ্ঞতা, টেকনিক্যাল ও সিস্টেম ডিজাইনের অভিজ্ঞতা, গ্লোবাল ফুট প্রিন্ট (কয়টি দেশে অপারেশনে রয়েছে), টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি, ফিনানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আর্থিক বিশ্লেষণ), রোল আউট ম্যানেজমেন্ট, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট। এই ৯টি মানদ-ে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে আগ্রহী দরদাতাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর আগ্রহীদের আবেদনের সঙ্গে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কমিটি যোগ্যতা নিরূপণ করে নম্বর দেবে। এরপর যোগ্যপ্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে বিটিআরসি। সেই ‘যোগ্য’ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়েই নিলামের আয়োজন করা হবে।
চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া নীতিমালা অনুযায়ী, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটরা একজন গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয় আগেই বিষয়টি অনুমোদন করেছে। একবার এমএনপি সুবিধা নেয়ার পর গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, নিলামের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য একটি কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। নিবন্ধিত যোগ্য কোম্পানি, বাংলাদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি নিলামে অংশ নিতে পারবে। বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশি অংশীদার লাগবে। এক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ মালিকানা ৫১ শতাংশ হতে পারে। ‘নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বাংলাদেশে লাইসেন্সধারী মোবাইল অপারেটরের মালিক, পরিচালক, অংশীদার, বিনিয়োগকারী, শেয়ার হোল্ডার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিলামে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ লাইসেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে একাধিক দেশে ন্যূনতম তিন বছর এমএনপি সেবা প্রদানে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বার্ষিক লাইসেন্স ফি হবে ২০ লাখ টাকা ও লাইসেন্স ইস্যুর পর দ্বিতীয় বছর হতে এমএনপি অপারেটর সরকারকে ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রদান করবে। নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বিড আর্নেস্টমানি পাঁচ লাখের বদলে ১০ লাখ টাকা, বেইজ প্রাইস ৫০ লাখের জায়গায় এক কোটি টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স নবায়ন ফি ১০ লাখের বদলে ২০ লাখ টাকা এবং ব্যাংক গ্যারান্টি ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়। এছাড়া নীতিমালায় এমএনপি সংশ্লিষ্ট ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস) দেয়ার সুযোগ, এক শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে কার্যক্রম (রোলআউট অবলিগেশন) শুরুর বিধান রাখা হয়েছে। রোলআউট অবলিগেশন’ পূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে নিলামে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে এই নীতিমালায়।
বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী, এমএনপি বাস্তবায়ন হলে মোবাইল গ্রাহকরা তাদের ব্যবহৃত নম্বর (যে কোন অপারেটরের) অপরিবর্তিত রেখে অন্য অপারেটরের গ্রাহক হতে পারবে এবং সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে যেতে পারবে খুব সহজেই। বেছে নিতে পারবে পছন্দের নেটওয়ার্ক, সাশ্রয়ী কলরেট ও ডাটা ব্যবহারের সুবিধা। গ্রাহক সন্তুষ্টি ও বৈধ প্রতিযোগিতার জন্য এমএনপি চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, এমএনপি চালু হলে অপারেটরদের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং গ্রাহকরা কাক্সিক্ষত সেবা পাবেন। তিনি বলেন, কলড্রপসহ অন্যান্য সমস্যা হলে গ্রাহক অন্য অপারেটরে চলে যাবে। গ্রাহক ধরে রাখতে তাই অপারেটররা প্রতিযোগিতা শুরু করবে, তাদের সেবা উন্নত হবে। গ্রাহকরাও তাদের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ি মোবাইল অপারেটরদের এমএনপি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। সবগুলো অপারেটরদের সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এটি হবে যা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে বিটিআরসি। তবে মোবাইল অপারেটরগুলো এ বিষয়ে তেমন কোন সাড়া দেয়নি। তাদেরকে দুই বছর সময় দিয়েও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সেবাটি চালুর জন্য শুনানির মাধ্যমে গ্রাহকদের মতামত নেয়া হয়। গ্রাহকরা এমএনপি চালু করার পক্ষেই মতামত দিয়েছেন। কমিশন নিজেদের তত্ত্বাবধানে তৃতীয় পক্ষের মডেলে এমএনপি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে নীতিমালা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সেটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সামগ্রিকভাবে লাভবান হন গ্রাহক। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে কোনো অপারেটর গ্রাহক হারাতে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গ্রাহকদের অনেক সেবা কম মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে দিতে হতে পারে। নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে টেলিযোগাযোগের দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলো এমএনপি চালু করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এমএনপি সার্ভিস চালু রয়েছে। মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি সুবিধা প্রথম সিঙ্গাপুরে চালু হয় ১৯৯৭ সালে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানে এমএনপি সার্ভিস চালু হয় ২০০৭ সালের মার্চে। ২০১১ সালে ভারতও এই সেবা চালু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।