পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী থেকে : মিনিস্ট্রি অডিট করতে এসে চাকরি বাঁচানোর কথা বলে ২ অডিটর হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা সদরস্থ সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ ও গোমদ-ী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত এপ্রিল মাসে অডিট করতে এসে দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতায় এ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে সরকারের শিক্ষা ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২ অডিটর যথাক্রমে বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সালেহ উদ্দিন শেখ ও সহকারী পরিদর্শক প্রলয় দাশ চয়ন অডিট কার্যক্রমে আসে বোয়ালখালীতে। এ সময় তারা উপজেলার সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ, গোমদন্ডী পাইলট, কধুরখীল বালিকা, সৈয়দপুর বহুমুখী, পশ্চিম কধুরখীল, শাকপুরা আদর্শ, উত্তর গোমদন্ডী, খরণদ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও জ্যেষ্ঠপুরা সিনিয়র মাদ্রাসাসহ প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সময় তারা নানা অজুহাত তুলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে টাকা দিলে সব ঠিক করে দেয়ার কথা বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, এর জন্য প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীর ২ মাসের বেতনের টাকা দাবী করে বসে তারা। আর এসব কথা কেউ ফাঁস করলে তাকে চাকরি হারাতে হবে বলেও শাসিয়ে দেয় তাঁরা। পরবর্তীতে একপ্রকার নিরুপায় হয়ে দফা-রফার মাধ্যমে সরকারী স্কেল অনুযায়ী ১ মাসের বেতনের সমুদয় টাকা তুলে দিতে হয় তাদের হাতে। এভাবে ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী থেকে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। তাদের এ চাঁদাবাজির কাজে জোড়ালো আনজ্াম দেয় গুটিকয়েক এখানকার প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রধানগণ চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে ভয় দেখিয়ে একপ্রকার জোর করে প্রতিজনের কাছ থেকে যার যত টাকা স্কেল তত টাকা নগদ আদায় করে ২ পরিদর্শকের ঢাকাস্থ আরকে মিশন রোড যুগিবাগের বাসায় পৌঁছে দেয়। এ কাজে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন উপজেলা সদরের গোমদন্ডী পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঈনুল আবেদীন নাজিম।
১০ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক জানান, অডিটের নামে জালিয়ত চক্রের সাথে আঁতাত করে এখানকার হেডমাস্টাররা কৌশলে আমাদের কষ্টার্জিত বেতনের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে হেডমাস্টারদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও রহস্যজনক ভূমিকা কথিত অডিটর এবং তাদের ভাগ-বাটোয়ারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে। তারা বলেন, যদি তা না হয় গত ১৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের কাছ থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে এসব টাকা ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার রিস্ক বা দুঃসাহস করলেন কিভাবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা আরো বলেন, যেখানে মাসের শেষে বেতন নিয়ে পরিবার, ছেলে-সন্তান নিয়ে পুরো মাসের খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে পুরো মাসের টাকা যদি অবৈধ কারো হাতে তুলে দিতে হয় তার থেকে দুঃখের আর কী হতে পারে? যেখানে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও ঘুষ বন্ধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে কিছু দুর্নীতিবাজের কারণে তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। এ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কথিত অডিটরসহ তাদের কাজে সহযোগিতাকারী প্রধান শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে ছেলে-সন্তান, পরিবার-পরিজনের ন্যায্য হক ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এ ব্যাপারে জ্যৈষ্ঠপুরা ইসলামীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ মোহছেন (মহসিন) টাকা দেয়ার বিষয়টি সরাসরি না বলে অন্যরা যেভাবে করেছেন আমিও সেভাবে করেছি বলে কৌশলে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার মিসেস হোসনেয়ারা বেগম বলেন, এ বিষয়ে আমি শুনেছি, কিন্তু প্রমাণ করার মত কোনো উপাদান পাচ্ছি না। এতগুলো শিক্ষক টাকা দিল, অথচ কেউ কাউকে জানায়নি, ভাবতে অবাক লাগে। যারা ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা দেবেন, তারাই যদি অকপটে ঘুষ দিয়ে দেন তাহলে কে কাকে বুঝাবে? আমার মনে হচ্ছে পুরো বিষয়টি ফাউ। তিনি বলে অডিট হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের একটি প্ল্যান, এটা সম্পর্কে সবারই ধারণা খারাপ। এখানে আসল আর চুপিসারে এতগুলো টাকা নিয়ে গেল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে সমস্যা থাকতেই পারে, তাই বলে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষকরা এত ভয় পায় কেন? তিনি বলেন, আপনারাও লিখেন, তবে ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় খুব আন্তরিক মানুষ। এ অডিটর কারা এদের চিহ্নিত করে সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।