Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তবুও খুলছে না দ্বার

মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার খুলতে সরকারী তৎপরতা অব্যাহত : প্রবাসী মন্ত্রী কাতার যাচ্ছেন ২ ফেব্রুয়ারী

প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধ শ্রমবাজার এখনো খুলছে না। বিগত সাড়ে তিন বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। দেশটির নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে শুধু গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) নিচ্ছে। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৪ হাজার ৩শ’ ৭ জন নারী কর্মী চাকরি লাভ করেছে। জনশক্তি রফতানির বৃহৎ বাজার সউদী আরবে ২০০৯ সাল থেকে অঘোষিতভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে হাতে গোনা কিছু পুরুষ কর্মী যাচ্ছে। ২০০৯ সালে সউদীতে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পেয়ে মাত্র ১৪ হাজার ৬শ’৬৬ জনে দাঁড়ায়। এর আগে ২০০৭ সালে সউদী আরবে ২ লাখ ৪ হাজার ১শ’১২ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছিল। ২০০৮ সালে সউদীতে ১ লাখ ৩২ হাজার ১শ’২৪ জন কর্মী চাকরি লাভ করে। সউদী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে সউদী-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর দেশটিতে গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) বিনা খরচে ব্যাপক হারে যাওয়া শুরু হয়। জনশক্তি রফতানিতে বিগত কয়েক বছর যাবত মন্দা অবস্থা বিরাজ করায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিরুপায় হয়ে সউদী আরবে নারী কর্মী প্রেরণের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ইতিমধ্যে দু’শ রিক্রুটিং এজেন্সি সউদীতে নারী কর্মী পাঠাতে মাঠে নেমেছে। ২০১৫ সালে সউদী আরবে ৫৮ হাজার ২শ’৭০ জন কর্মী চাকরি লাভ করে। এর মধ্যে সউদীতে শুধু ২০ হাজার ৯শ’ ৫২ জন নারী কর্মী বিনা খরচে হাউজ মেইড হিসেবে চাকরি লাভ করেছে। এসব নারী কর্মীর মধ্যে অনেকেই নানা অভিযোগের কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশে ফিরে আসছে। ফলে সউদীতে নারী কর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকে কুয়েতের শ্রমবাজার যাবত বন্ধ রয়েছে। তবে ২০১৫ সালের শেষের দিক থেকে কুয়েতে স্বল্প সংখ্যককর্মী যাচ্ছে কুয়েতে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধ শ্রমবাজার খুলতে সরকারী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র নেতৃত্বে ৬ সদস্য প্রতিনিধি দল আগামী ২ ফেব্রুয়ারী কাতারে যাচ্ছেন। কাতার শ্রম ও সমাজসেবা মন্ত্রীর আমন্ত্রণে এ প্রতিনিধি দল কাতার যাচ্ছে। আগামী ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন অবকাঠামো বিনির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কাতারে ব্যাপক কর্মীর প্রয়োজন হবে। সে চাহিদা পূরণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশী কর্মী নেয়ার বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এতথ্য জানান।
বাংলাদেশিদের সম্পর্কে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে গত সাড়ে তিন বছরে বহু আলোচনা করেও মেলেনি কোনও সুসংবাদ। বর্তমানে আমিরাতে বাসায় হাউজ মেইড ছাড়া অন্য কোনও পেশায় ভিসা দিচ্ছে না আমিরাত সরকার। ২০১২ সালের আগস্ট থেকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য তার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। জানা গেছে, এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন কারণে দেশটিতে অভিযুক্ত আসামি। এরমধ্যে বেশ কয়েক জন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত এবং ১০৪ জন যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামি। তারা খুন, ডাকাতি, চোরাকারবারি, জুয়ার আসর বসানো থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনসংখ্যা এখন প্রায় ৯০ লাখ। এর মধ্যে স্থানীয় আরব আছে নয় লাখ। বাকিরা বিভিন্ন দেশের অভিবাসী। বাংলাদেশি রয়েছে ১০ লাখের মতো। স্থানীয়রা সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে নিরাপত্তাজনিত বিষয় ও বেআইনি কার্যপলাপে আমিরাতের স্থানীয়রা বেশ স্পর্শকাতর।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী নারী কর্মীর (হাউজ মেইড) কদর দিন দিন বাড়ছে। বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ বিভিন্ন দেশে ৫৬ হাজার ৪শ’ গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) চাকুরি নিয়ে বিদেশে গেছে। ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ৭৬ হাজার গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) চাকুরি লাভ করেছে। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৩ হাজার ৭শ’ ১৮ জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) চাকুরি লাখ করেছে। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সব চেয়ে বেশি গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) কর্মসংস্থান লাভ করেছে। একই বছর জর্ডানে ২১ হাজার ৭শ’ ৭৬ জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড), সউদী আরবে ২০ হাজার ৯শ’ ৫২জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড),ওমানে ১৬ হাজার ৯শ’ ৮০জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড), লেবাননে ৮ হাজার ৭শ’ ৮২জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড), বাহরাইনে ৮ হাজার ৬শ’ ৪২জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড), মরিশাসে ১ হাজার ৩শ’ ৩৯জন গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) চাকুরি লাভ করেছে। ২০১৫ সালে সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সব চেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। একই বছর সউদী আরব থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৯৮৯ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৫৩৫ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে, সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে দালালদের মাধ্যমে গৃহকর্মী (হাউজ মেইড) যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিপাকে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে নারী কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ব প্রতিরোধ করতে বায়রার নেতৃবৃন্দ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খন্দকার ইফতেখার হায়দারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী সচিবের সাথে বায়রার নেতৃবৃন্দ ও ফিমেল মাইগ্রেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতৃবৃন্দ বৈঠককালে এই হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। বায়রার সভাপতি মোঃ আবুল বাসার ও বায়রা ফিমেল মাইগ্রেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী সচিব কম বয়স্ক মহিলা ও অযোগ্য মহিলারা যাতে বিদেশে যেতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকার অনুরোধ জানান। সচিব বিভিন্ন টিটিসি’র প্রধানদের নিদের্শ দিয়েছেন যাতে দালালদের পাঠানো কোন মহিলাকে প্রশিক্ষণে ভর্তি করা না হয়। একমাত্র বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির পাঠানো মহিলাদেরই প্রশিক্ষণে ভর্তি করতে হবে। এদিকে, লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দরুণ বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের উপর নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। বায়রার একজন কর্মকর্তা গতকাল ইনকিলাবে বলেন, লিবিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় পাঠানো লিবিয়ার প্রায় ৫ হাজার কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পথে। এছাড়া বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে লিবিয়ার অনেক ভিসা জমা পড়ে রয়েছে বলে ঐ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তবুও খুলছে না দ্বার

২৮ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ