Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ লাখ শহীদের তালিকা প্রকাশের দাবি গয়েশ্বরের

প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশসহ প্রতিটি এলাকায় শহীদদের নাম উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ দাবি জানান।
দলীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কষ্ট হয়, নেত্রী যখন একটি কথা বললেন আমরা সবাই মুখে তালা মারলাম। নিজের ভালোমন্দ ও মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন না করে বুক টান করে রাজপথে হাটেন।
বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে
যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে। তার ওই বক্তব্যের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সরকারের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গুনে গুনে ত্রিশ লক্ষ শহীদের পরিবারের নামের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করুন। তারপর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত পারেন, প্রয়োজনে ত্রিশ লক্ষ মামলা করেন।
ত্রিশ লক্ষ শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। তাদের তালিকা থাকবে না কেনো? প্রত্যেকটি এলাকায় নাম উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ করতে হবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদদের পরিবার অধিকার রাখে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার। সেজন্য মামলা যতই দেন লাভ হবে না। আগে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ করুন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে- স্থায়ী কমিটির ড. আব্দুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, আবুল খায়ের ভুইয়া, তাইফুল ইসলাম টিপু, বজলুল বাসিত আঞ্জু, ইউনুস মৃধা, মকবুল হোসেন টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদদের সংখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের পর দলের দায়িত্বশীলরা ওই বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য না দেয়ার সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কষ্ট হয়, নেত্রী যখন একটি কথা বললেন আমরা সবাই মুখে তালা মারলাম। তার সমর্থনে কোনো কথা বললাম না। অন্যদিকে ভালো হোক মন্দ হোক শেয়ালের মতো সব একসুরে বলে। যেখানে বিএনপির নেত্রীর কথা সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিলে মামলা হবে এই ভয়ে কথা বলি না, সেখানে বিবেচনা করতে হবে আমাদের বিএনপির করার যোগ্যতা কতটুকু রয়েছে?
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, সারদেশের এই প্রতিবাদ ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে। অচিরেই এর প্রতিবাদে সভাও হবে। কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সত্য বললে রাষ্ট্রদোহিতা আর মিথ্যা বললে দেশ প্রেম, এই কথায় আমরা বিশ্বাস করি না। সত্য যত নির্মমই হোক সত্য সত্যই। গল্প আর ইতিহাস এক কথা নয়।
তিনি বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা- এই কথাগুলো আমাদের উৎসাহ, নয় মাসের যুদ্ধের উদ্দীপনা। তখন ছিলো ৭ কোটি, এখন যদি বলি, ১৭ কোটির মানুষের রক্ত বঙ্গোপসাগরে ফেলা হয়, তাহলে তো সাগরের পানি এক ইঞ্চিও বাড়বে না। সুতরাং গল্পে যা মানায়, কবিতায় যা মানায়, ইতিহাস তা গ্রহণ করে না। ইতিহাস সঠিকভাবেই লিখতে হয়।
মামলা ভয়ে কৌশল না নিয়ে রাজপথে থাকতে দলের নেতাকর্মী প্রতি আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া সন্তানের মায়া ত্যাগ করে দেশের জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের পানে তাকিয়ে আছে। আপনারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েন না। নিজের ভালোমন্দ ও মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন না করে বুক টান করে রাজপথে হাটেন। এতে দেশ বাঁচবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। আমরা যতই চুপ থাকি না কেন, মামলা আমাদের ছাড়বে না। যত চুপই থাকি না কেন, গুমের তালিকা কিন্তু অনেক বড় হয়েছে।
তিনি বলেন, শহীদদের রক্তের বেদিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। সেই ঋণ শোধ করতে হলে রক্ত দিয়েই গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই আরাফাত রহমান কোকোর আত্মা শান্তি পাবে এবং তার প্রতি যথাযথ মর্যাদা দেয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিজেদের উৎসর্গ করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রসঙ্গে টেনে গয়েশ্বর বলেন, এটি বলতে পারি টিআইয়ের রিপোর্টে সরকার সন্তুষ্ট হবে না। দুর্নীতিতে একধাপ এগিয়েছে মানে বোঝাই যায় কি হচ্ছে?
আরাফাত রহমান কোকোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও আরাফাত রহমান ছিলেন শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। ভালো ক্রীড়া সংগঠক।



 

Show all comments
  • আবদুল মোতালেব ২২ মার্চ, ২০২২, ৯:৫৪ পিএম says : 0
    তালিকা প্রকাশ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৩০ লাখ শহীদের তালিকা প্রকাশের দাবি গয়েশ্বরের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ