পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানুষের বুকফাটা কান্না নিয়ে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে গতকাল শেষ হয়েছে ছারছীনা দরবার শরিফের বার্ষিক ইছালে ছওয়াব মাহফিল। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন পীর সাহেব হজরত মাওলানা শাহ মোহম্মদ মোহেব্বুল্লাহ। মোনাজাতে জীবনের সব গোনাহর জন্য পানাহ চেয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাত তোলেন লাখ লাখ মানুষ।
আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনার পীর হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মাঃজিঃআঃ) বলেন, যার আমল ঠিক তার ঈমান ঠিক। আমল ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে না। আপনারা এই মাহফিলের তিন দিনে এখানে এসে যা শুনেছেন বুঝেছেন তা ঠিকমত আমল করবেন। উপমহাদেশের ইসলামি শিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় ছারছীনা মাদরাসার তিন দিনব্যাপী ১২৯তম বার্ষিক ঈসালে ছওয়াব মাহফিলের আখেরী মোনাজাতের আগে ময়দানে উপস্থিত লাখো ভক্ত ও মুনিদানের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন। বুধবার যোহর নামাজ বাদ আখেরী মোনাজাত পূর্বে পীর ছাহেব আরো বলেন, আপনারা পীরের কাছে বয়আত হয়েছেন আল্লাহকে পাওয়া জন্য; পীরকে নয়। এই দরবার থেকে পাওয়া সবকিছু বেশি বেশি করে আমল করবেন। এ দরবারে একটা আদর্শ আছে। সেই আদর্শ অনুযায়ী চলবেন। আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়্যাত যদি ঠিক থাকে এই দরবারে কেন আসলাম, তাহলে আল্লাহ আপনাদের মনের নেক বাসনা পূরণ করবেন। যার আকিদা ঠিক তার আমল ঠিক। আকিদা দ্বারা বুঝে নিতে হবে এ দরবারের মুরব্বিদের আকিদা কী ছিল, আমল কী ছিল। কীভাবে তারা আমল করেছেন। সর্বদিক থেকে তা খেয়াল করা। লেবাসে, পোশাকে, চেহারা-সুরাতে আমলে, আখলাকে সর্ব দিক থেকে খেয়াল করা। পীর ছাহেব আরো বলেন, দাদাহুজুর মরহুম পীর ছাহেব আমল করে আল্লাহওয়ালা হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এ দরবার তরীকাভিত্তিক দরবার। আপনারাও এ তরীকাপন্থী হয়ে আল্লাহওয়ালা হোন। আপনারা এখানে বয়আত হয়েছেন, সার্বিক শরীয়াত ও মারেফাতের সমন্বয়ে আল্লাহওয়ালা হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হোন। মাহফিল মঞ্চে মোনাজাতে অতিথি হিসাবে অংশ নেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল, পটুয়াখালী কলাপাড়ার এমপি প্রিন্সিপাল মহিবুর রহমান। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মোনাজাতে অশং নেন।
পীর ছাহেব হুজুর কেবলা মাহফিল ময়দানে উপস্থিত ধর্মপ্রান মুসলমানদের উদ্দেশে আরো বলেন, আপনারা সবাই এখানকার জমিয়াতে হিযবুল্লাহর সদস্য। তাই সবাই এ দরবারের সিলসিলায় চলবেন। খাঁটি আল্লাহওয়ালা হতে হলে আপনাদের সন্তানদের দ্বীনিয়া মাদরাসায় পড়াবেন এবং নিজ নিজ এলাকায় দ্বীনিয়া মাদরাসা গড়ে তুলবেন। এ দরবার আমার নয়, আমি এখানকার একজন খাদেম মাত্র। এ দরবারের আপনারা সবাই রক্ষক। আপনারা যে যেভাবে পারবেন সব দিক থেকে দরবারের ভালোর জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।
গতকাল বাদ জোহর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ এবং হামদ ও নাত পরিবেশনের পরে তিনি সমবেত মুরিদান ও মুসল্লিদের উদ্দেশে এবারের বার্ষিক মাহফিলের আখেরি বয়ান শেষে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন। প্রায় ৩০ মিনিটের এ মোনাজাতে ছারছীনার পীর সাহেব হজরত মাওলানা শাহ মোহম্মদ মোহেব্বুল্লাহ গোটা মুসলিম বিশ্ব ছাড়াও মুসলিম জাতির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত ও দয়া ভিক্ষা চান। তিনি ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরসহ গোটা বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের জন্যও দোয়া করেন।
মোনাজাত পরিচালনাকালে লাখ লাখ মুসল্লি বুকফাটা কান্নায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে পানাহ চান। এ সময় মুরিদানরা পীর সাহেবের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেও দোয়া করেন।
আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ছারছীনা দরবার শরিফের তিন দিনের মাহফিল শেষে গতকাল দুপুরের পর থেকে হাজার-হাজার মুসল্লির কাফেলা আপন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। বিশেষ লঞ্চ ও বাস ছাড়াও ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের কাফেলা ছারছীনা দরবার শরিফ থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।