পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়েছে। অসহায় হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। র্যাব-পুলিশ সদস্যরাও অজ্ঞান পার্টির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে নগদ টাকা পয়সাসহ মূল্যবান কাজপত্র হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদের খাওয়ানো নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় আবার কেউ কেউ প্রাণও হারাচ্ছেন। অজ্ঞান হয়ে গুরুতর আহত অনেকেই দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নেয়ার পরও পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছেন না। শুধু যে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে তাই নয়, এ চক্রটি নানা কৌশলে যানবাহনের ভিতরেই চোখ-মুখে বিষাক্ত মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। এতে করে অনেকেই স্থায়ীভাবে অন্ধ হযে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি এবং ছিনতাইকারীদের কারণে নগরবাসী রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকেন। কর্মব্যস্ততার একটি মাস শেষে শুরু হয় নতুন মাস। কর্মস্থলভেদে নতুন মাসের প্রায় ১৫ তারিখ পর্যন্ত বেতন পাওয়ার এই সময়টা চাকরিজীবীদের কাছে উৎসবের মতো আনন্দের। কিন্তু অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অনেকের আনন্দ পরিণত হচ্ছে বিষাদে। বেতন নিয়ে আনন্দে বাসায় পৌঁছার পরিবর্তে অচেতন হয়ে সঙ্গে থাকা সব হারিয়ে গন্তব্য হচ্ছে হাসপাতাল। চলতি মাসের অফিস ও ব্যাংক খোলা থাকার প্রথম ১০ দিনেই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২৭ জন। গতকাল পর্যন্ত চলতি মাসের ২৭ দিনে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা এর কয়েকগুণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অনেকেই চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসেন না। মলম বা রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়ার আকস্মিকতা ও তীব্রতায় শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। শুধু রাজধানীতেই ৫ শতাধিক ছিনতাইকারী ও মলমপার্টির সদস্য দিনে রাতে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের হাতে এখন মানুষ প্রায় জিম্মি হয়ে পড়ছেন। গত ৩ বছরে অজ্ঞান ও মলম পার্টির কবলে পড়ে ঢাকা মেটিকেল কলেজ হাসপাতালে সাড়ে ৩ হাজার ভূক্তভোগী মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ফেরি-ফেরিঘাট, বাস টার্মিনাল রেল স্টেশন কোথাও নিরাপদ নয় লোকজন। শুধু সাধারন মানুষই নয়, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। হকার কিংবা সহযাত্রী-বন্ধু সেজে সাধারণ মানুষের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। রাজধানীতে সম্প্রতি এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। আর পুলিশ বলছে, এদের দৌরাত্ম্য থামাতে পুলিশের একটি বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। অনেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তাদের কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এ জন্য পথচারী বা যাত্রী সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মোঃ মারুফ হোসেন সরদার ইনকিলাবকে বলেন, অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা চেষ্টা করছি এদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে । তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এর আগেও অজ্ঞানপার্টির বেশ কিছু সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এসব অপরাধীরা এক জায়গায় থাকে না। এদের বেশির ভাগই ভাসমান, ফলে সনাক্ত করতেও পুলিশের সময় লাগে। এই চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম রাজধানীতে কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো চক্রকে পাকড়াও করা হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আবারও একই কাজ করছে।
ভূক্তভোগীরা বলছেন, এই মূহুর্তে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার নাম অজ্ঞান পার্টি। এদের পাল্লায় পড়ে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। এদের হাত থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত কয়েকদিনে কয়েকজন র্যাব-পুলিশ সদস্য অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়েছেন র্যাবের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হালিম। এ সময় তার কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে হালিমকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন রমনা থানা পুলিশ ও র্যাবের আরেক সদস্য। পরে তার পাকস্থলী পরিষ্কার করা হয়।
র্যাব-১০ এর এক কর্মকর্তা জানান, হালিম র্যাব-১০ এর ধলপুর ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন। তিনি পাবনায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে অফিস থেকে বের হন। ধারণা করা হচ্ছে সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠে গাবতলী যাওয়ার পথে কিছু খাইয়ে কিংবা নাকে কিছু শুঁকিয়ে অচেতন করা হয় তাকে। এরপর তাকে রমনা থানার পাশে ফেলে যায় সংঘবদ্ধচক্রের সদস্যরা। তার কাছে থাকা নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট নিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আব্দুস সালাম নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সব হারান। পরে তাকে শাহবাগ থানার এসআই সফিয়ার রহমান অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। আইডি কার্ডের সূত্র ধরে আব্দুস সালামের পরিচয় মেলে। ওই এসআই জানিয়েছিলেন, পল্টন ইউবিএল ক্রসিংসংলগ্ন ফুটপাতে আব্দুস সালামকে পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা পুলিশকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য। তার মোবাইল ফোন ও পকেটে থাকা মানিব্যাগ না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তার ওই অবস্থা হয়েছিল।
একই দিন প্রায় একই সময়ে গুলিস্তান থেকে অজ্ঞাত (৪০) এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুল খালেক নামের একজন পথচারী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ঢামেক পুলিশের ক্যাম্প ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, ধারণা করা হচ্ছে তিনিও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়েছিলেন।
এছাড়া গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারো ব্যবসার টাকা, কারো জমি বিক্রির টাকা, আবার কেউ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা তুলে নিয়ে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সবকিছু খোয়াচ্ছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন, যেকোনো যানবাহনে ভ্রমণের সময় অপরিচিত কারো এবং কোনো হকারের দেওয়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাউকে সন্দেহ হলে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কামাল আজাদের গ্যানম্যান লুৎফর রহমান (৩৫) অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। এসময় তার কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও খোয়া যায়। পরে খবর পেয়ে রমনা থানার এএসআই আলাউদ্দিন তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি জানান, ওইদিন সন্ধ্যার আগে লুৎফর রহমান পার্কে হাঁটতে গিয়েছিলেন। সেখানে ডাবের পানি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার এ অবস্থা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৪ মে রাজধানীর মহাখালীতে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন রকিবুজ্জামান নামে পুলিশের এক কনস্টেবল। এ সময় তার কাছে থাকা ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটিও খোয়া যায়। রকিবুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। একটি কাজে ঢাকায় আসার পথে তার এ অবস্থা হয় বলে জানান তেজগাঁও থানার এসআই নজরুল ইসলাম।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে অর্থাৎ এক বছরে ‘অজ্ঞান পার্টি’ ও ‘মলম পার্টি’র ২৪৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান করার বিপুল পরিমাণ ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি-ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এ সময় এদের রোধে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়াও সারা বছরই ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে । অভিযান এখন অব্যাহত রযেছে। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ গত এক বছরে দুই শতাধিক অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় এনায়েত উল্লাহ (৪০) নামে এক সেনা সদস্য অজ্ঞানপাটির খপ্পরে পড়েছেন। তাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইএমই করপোরাল জিডি পদে চট্টগ্রামে কমরত। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে যাত্রাবাড়ি থানার সায়েদাবাদ রেল ক্রসিংয়ের পাশে অচেতন অবস্থায় তিনি পড়ে ছিলেন। এ সময় যাত্রাবাড়ি থানার এএসআই সামছুল হক তাকে উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। হাসপাতালের ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তিনি মিশনে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বলে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।