Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগরীতে অটোরিকশায় নৈরাজ্য

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পুরনো সিএনজি অটোরিকসার পরিবর্তে নতুন অটোরিকসা প্রতিস্থাপন, নামমাত্র মূল্যে গ্যাস সরবরাহ ও কয়েক দফায় ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও অরাজতকতা রয়ে গেছে অটোরিকসা সেক্টরে। যাত্রী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বারবার নানা উদ্যোগ নিলেও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। অটোরিকসার বিদ্যমান সংকট নিরসনে সমিতির পক্ষ থেকে সাত দফা সুপারিশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ‘প্রতিস্থাপনের পর কেমন চলছে অটোরিক্সা’ শিরোনামে এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করা হয়। গত ১ থেকে ১০ মার্চ সপ্তাহব্যাপী রাজধানীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৫৬টি অটোরিক্সায় যাত্রী সেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ৩১০ জন যাত্রীর সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকসার ৯৮ ভাগ চুক্তিতে চলাচল করছে। মিটারে চলাচলকারী ৯২ শতাংশ অটোরিকসা ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিস দাবী করে। তবে বৃষ্টি বা সরকারি ছুটির আগেরদিন অথবা গণপরিবহন সংকটকালীন সময়ে এই বকশিসের পরিমাণ বেড়ে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়া ৮৮ শতাংশ অটোরিকসা অটোরিকসা যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা যায়, প্রাইভেট অটোরিকসা এবং ঢাকা জেলার (মহানগরীর বাইরের) অটোরিকসা বেআইনীভাবে মহানগর এলাকায় ঢুকে বেআইনিভাবে চলাচল করছে। এর সংখ্যা ৬২ শতাংশ। পর্যবেক্ষণকালে যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ফকিরাপুল, ফার্মগেইট, মালিবাগ, মিরপুর-১০, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, বিমানবন্দর, মহাখালী এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। পর্যবেক্ষণকালে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব এলাকায় বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ বা অন্যকোন সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি।
পর্যবেক্ষণকালে যাত্রীরা অভিযোগে বলেন, রাত ৯টার পর এবং সকাল ৮টার আগে কোন অটোরিকসা মিটারে চলতে চায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া বা চালকের পছন্দের গন্তব্যের বাইরে যেতে চায় না। চুক্তিতে চলা অটোরিকসা মিটারের চেয়ে নিচে ৫০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৭১০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যা অ্যাপসভিত্তিক ১৩০০-১৫০০ সি.সি. প্রাইভেট কারের ভাড়ার চেয়েও বেশি।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গত ১৫ বছরে ঢাকা মহানগরীর যাত্রী সংখ্যা এবং যাত্রীসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা প্রায় ৩ গুণ বাড়লেও একটি অটোরিকসাও বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় কম থাকায় চালকদের কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর জিম্মি হয়ে আছে। চুক্তিতে চলার সময় যাত্রীদের মিটারে চলছে বলে মিথ্যা বলতে দেখা গেছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের টোলের নামে চাঁদা, ফ্লাইওভারের টোল ও যানজটের জরিমানা ও ওয়েটিং বিলের নামে পুরো টাকাটাই যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয়।
সাত দফা সুপারিশ প্রস্তাব
অটোরিকসার বিদ্যমান সংকট নিরসনে সমিতির পক্ষ থেকে সাত দফা সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে- ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার নতুন অটোরিক্সা নামানো, গণমালিকানার পরিবর্তে কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকসা পরিচালনা, মিটারবিহীন ও প্রাইভেট অটোরিকসা চলাচল বন্ধকরণ, জমা ও ভাড়া বৃদ্ধি; সিলিং নির্ধারণ ও মনিটরিং কমিটিতে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব রাখা, নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলাচলকারী অটোরিকসা ১ বছর আটক রাখার বিধান তৈরি, আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার ও আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া এবং নতুন অটোরিকসা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের সুপারিশ করা হয়।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ