বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে মস্করা করতেই মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশে সহিষ্ণুতার পরিবেশকে কালিমালিপ্ত করে বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়াচ্ছেন আওয়ামী নেতারা। বাংলাদেশ নামক দেশটি আদিম শিকারিদের মতো চালিত হচ্ছে। বিরোধী দলকে বেয়নেট, কার্তুজ,লাঠি পেটা, বোমাগুলি বারুদের দমবন্ধ করা ধোঁয়ার কুন্ডলির মধ্যে ঢেকে রাখার সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। সোমবার (১১মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রীর প্রতি সরকার প্রধানের বিদ্বেষপোষনের কারণেই সরকার তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে না। বার বার পরিবারের ও দলের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও তাদের নির্দয় মনোবৃত্তির কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা জোর করে তাঁকে বিএসএমএমইউতে (পিজি) পাঠাতে চায়। পিজিতে কয়েকমাস আগে বেগম খালেদা জিয়াকে ভর্তি করার পর তাঁকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর রোগ নির্ণয়ের জন্য তেমন কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। যাও দু একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল তাও আবার জুনিয়র ও অদক্ষ টেকনিশিয়ার দ্বারা করানো হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানা হয়নি।
তিনি বলেন, যে পিজি হাসপাতালে অন্য হাসপাতাল থেকে ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি ধার করে আনতে হয়, সেখানে কিভাবে সুচিকিৎসা সম্ভব। আওয়ামী নেতাদের চিকিৎসা সেখানে সম্ভব হয়নি। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার পরও আওয়ামী নেতাদের বিদেশে পাঠাতে হয় চিকিৎসার জন্য। সেটিও আবার রাষ্ট্রীয় খরচে। অথচ বেগম জিয়ার নিজ দেশে নিজ খরচে, বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সুযোগ নেই। শুধুমাত্র বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মিডনাইট ভোটের সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার তুষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলার কারণেই বেগম জিয়া কারান্তরালে এবং তাঁকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জনমত উপেক্ষা করে যারা জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে তাদের কখনোই সংবেদনশীল মন থাকে না। বিরোধী পক্ষকে হয়ারানী, নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতাই হয় তাদের দেশ পরিচালনার প্রধান বাহন।
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন,“খালেদাকে সানগ্লাস পড়া দেখলে মনে হয় না তিনি অসুস্থ”। তিনি বলেন, এমন কোন কি ব্যক্তি আছেন যাদের চোখে অপারেশন হওয়ার পর সানগ্লাস পড়েন না। চোখের ক্ষত না সারা পর্যন্ত রোদ, ধূলা ও পানি থেকে চোখকে নিরাপদ রাখার জন্যইতো সানগ্লাস ব্যবহার করে। রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়েন, বেআইনি পন্থায় দখলকৃত ক্ষমতার অংশীদার হতে প্রধান নেতার মুসাহেবি করার কুৎসিত প্রতিয়োগিতায় নেমে দেশের বিরোধী রাজনীতির সম্মানীত নেতাদের সম্পর্কে অভদ্র ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেও কার্পণ্য করে না। তথ্যমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয় মন্ত্রীত্ব রক্ষার গ্যারান্টির জন্যই আগের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চেয়ে এক ধাপ উপরে থাকতে চাচ্ছেন। সেজন্যই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দিনরাত অশ্রাব্য অশোভন মন্তব্য করতে দ্বিধা করছেন না। কারণ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অশোভন বক্তব্য বিবৃতির প্রতিযোগিতায় যে চ্যাম্পিয়ন হয় তাকেই সরকার প্রধান ক্ষমতার ভাগ দিতে মন্ত্রী সভায় রাখেন।
এসময় রিজভী সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিত ব্যবস্থা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে, কণ্ঠরোধের স্বৈরাচারি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ ভেঙ্গে ফেলতে, মত প্রকাশের অধিকার হরণ ও সন্ত্রাসের বাতাবরণ বন্ধ করতে, গণতন্ত্রের দুর্দিন থেকে সুদিন ফেরাতে, পুলিশি আধিপত্য থেকে দেশকে বাঁচাতে, মৌলিক অধিকারের টুঁটি টিপে ধরা ছাড়াতে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।