Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তনুর খুনীদের চিহ্নিত করা সিআইডি’র জন্য চ্যালেঞ্জ

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনুকে সেনানিবাসের কোন স্থানটিতে কারা খুন করেছে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের নাম এখনো জানা না গেলেও কারা তনুর লাশ জঙ্গলে এনে ফেলেছিল তাদের ব্যাপারেও যথেষ্ট ধারণা ও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সিআইডি’র হাতে। সিআইডি কুমিল্লা-নোয়াখালি অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কাছে সোমবার রাত সাড়ে দশটায় তনুর ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানান। এসময় তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে তনুর খুনিদের চিহ্নিত করা সিআইডির জন্য চ্যালেঞ্জ এবং খুনিদের চিহ্নিত করতে সিআইডিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
মোড় ঘুরতে শুরু করেছে দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যা মামলা। মামলা তদন্তের প্রায় ৫০দিনের কাছাকাছি সময়ে এসে সিআইডি তদন্ত সহায়ক দলের অন্যতম কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান সোমবার রাত সাড়ে দশটায় তনুর ডিএনএ টেস্টের খবর দিয়ে সারা দেশবাসীকে আলোচিত মামলাটির বিষয়ে জাগিয়ে তুলেছেন। প্রায় তিন মাস ঘনিয়ে এলেও তনু হত্যার যখন কোন কূলকিনারা মানুষ দেখছিল না, দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসছিল না এবং ভেবেছিল মামলাটি ধীরে ধীরে হিমাগারে চলে যাচ্ছে, ঠিক এরকম মুহূর্তেই সোমবার রাতে সিআইডি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানান, দিলো কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ডিএনএ রিপোর্টের বরাত দিয়ে সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান বলেছেন, তনুর দেহে তিন ব্যক্তির বীর্য পাওয়া গেছে। ওই তিনজনের পৃথক প্রোফাইল শনাক্ত করেছে সিআইডি’র তদন্ত দল। তনুর গোপনাঙ্গ ও কাপড়ের নমুনা পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
প্রথম ময়না তদন্তের রিপোর্টে খুনের কারণ এবং ধর্ষণের আলামতের বিষয়ে কোনকিছুই উল্লেখ না থাকায় দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি নেয় আগের তদন্ত সংস্থা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওসি মনজুরুল আলম। ২৯ মার্চ মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত হয় সিআইডি’র উপর। ৩০মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। ওইসময় সিআইডি আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্টের জন্য তনুর চুল, দাঁত, নখসহ প্রয়োজনীয় অঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করে। এছাড়াও আগের তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে লাশ উদ্ধারের সময় পরনের কাপড়ও ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের মাধ্যমে সিআইডি যেমন নিশ্চিত হয়েছে খুনের আগে তনুকে ধর্ষণ। ঠিক তেমনি মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সিআইডি বেশ সতর্কতার সাথে এগিয়েছে মামলাটি নিয়ে। তনুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ম্যাসেজে ১৯ মার্চ থেকে ২০ মার্চ খুন হওয়ার সম্ভাব্য সময়ের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন নম্বর এবং ওই দুইদিন যেসব ম্যাসেজ আদান-প্রদান হয়েছে তা খতিয়ে এবং ইতিপূর্বে তনুর পরিবারের লোকজনসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের নানা তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে সেনানিবাসের ভেতরে কোন বাসা-বাড়িতে তনুকে মেরে লাশ গাড়িযোগে জঙ্গলে এনে ফেলেছে।
কেবল তাই নয়, সিআইডি’র ওই কর্মকর্তা মনে করেন, তড়িঘড়ি করে প্রথম ময়না তদন্ত রিপোর্ট দেয়া এবং দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট দিতে সময় ক্ষেপণের পেছনে মেডিকেল বোর্ডের ভূমিকা রহস্যজনক। কেননা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরাই বলেছেন, তনুর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত নেই। অথচ ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. কেপি সাহা বলছেন, ডিএনএ রিপোর্ট পেলে দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট সহসা দেয়া যাবে। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের এরকম আবদার ছেলেমানুষি বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান বলেন, তদন্তে অগ্রগতিসহ চাঞ্চল্যকর মামলাটির কূলকিনারা দিনদিন সহজ হয়ে উঠছে। তবে ডিএনএ টেস্টে যে তিন পুরুষের প্রোফাইল শনাক্ত করা হয়েছে সেই তিন পুরুষই খুনের সাথে জড়িত এবং তাদের চিহ্নিত করাটা সিআইডি’র জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দাবী করেন, ঘটনাস্থল সেনানিবাস এলাকায় হওয়ায় মামলাটি নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না সিআইডি।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু টিউশনি সেরে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজ আবাসিক এলাকায় খুন হন। গণধর্ষণের পর তনুকে দুর্বৃত্তরা খুন করে সেনানিবাসের ভেতরে তার বাড়ির কাছাকাছি জঙ্গলে ফেলে রাখে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তনুর খুনীদের চিহ্নিত করা সিআইডি’র জন্য চ্যালেঞ্জ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ