Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের ব্যাপারে নাক গলাবা না; বরদাশত করা হবে না যুক্তরাষ্ট্রকে শেখ সেলিম

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : নিজেদের ইজ্জত নষ্ট করে বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ফিরে আসায় দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা আছেন বলেই, যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তির দোসরা এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা একদিন দেশ থেকে বিতাড়িত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলাচনা সভায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
সভাপতির বক্তব্যে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি ইজ্জত নষ্ট করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। মোসাদের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠক সেটাই প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানো আর সহ্য করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলছে, অথচ তারাই আমাদের মানবাধিকার শেখাতে আসে। এটি মানবতার জন্য লজ্জার। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে নিষেধ করছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে তাদের (আমেরিকা) বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ নিয়ে নাক গলাবা না। বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না। বঙ্গবন্ধুও কারও কাছে মাথানত করেনি, শেখ হাসিনাও করবে না। শেখ হাসিনা বাপের বেটি। ভাঙবেন তবুও মচকাবেন না। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে।
সেলিম আরও বলেন, জিয়া ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করছেন। সেলিম সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে বেঈমানি করেন না। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেই রাজনীতি করছেন। তিনি চাইলে লন্ডন থেকে সরাসরি বাংলাদেশে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তা না করে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। দুর্দিনে ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। আশরাফ বলেন, শেখ হাসিনা ফিরেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বেশি সংগঠিত। তিনি যখন প্রবাস জীবন যাপন করছিলেন, তখন লন্ডন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছিলেন। যে নেতৃত্বই ১৭ মে, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন হত্যা করা হয় তখন শেখ হাসিনা ও তার একমাত্র বোন রেহানা ছিলেন জার্মানীতে। পরে তিনি যান ভারতে। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে তিনি আবার লন্ডনে ফিরে যান। তখন আওয়ামী লীগ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তখন শেখ হাসিনা লন্ডনের ইয়র্থ হলে জনসভা করেন। ওই জনসভাই প্রমাণ করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। সেখানে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ফলে ইউরোপ, লন্ডনসহ সমস্ত এলাকায় বাংলাদেশী রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হল। জননেত্রী ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের বড় বড় শহরগুলোতে গেলেন। সংগঠন করলেন, জনসভা করলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেন। আস্তে আস্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে পরিগণিত হয়।
শেখ হাসিনার প্রবাস জীবনের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে আসলেন, তখন অনেকেই লন্ডনে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) পরামর্শ দিতেন, যে আপনি সরাসরি লন্ডন থেকে ঢাকায় যাবেন, ভারত হয়ে নয়। ভারত হয়ে গেলে আপনাকে তারা (তৎকালীন সরকার) ভারতের চর হিসেবে বলবে। শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে তাদের সঙ্গে আমি বেঈমানী করবো না। যারা তার উপকার করেছেন তিনি তা মনে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের উপেদষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, প্রতিমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আলোচিত হচ্ছে। তার জঙ্গি দমন সকলের কাছে প্রশংসিত হচ্ছ। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের কাঠামো পরিবর্তন করেছিলেন। জিয়ার কারণেই যুদ্ধাপরাধীরা পুনর্বাসিত করা হয়। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই আজ খুনি-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।
আমু বলেন, শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলেই, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে আমরা উন্নয়নের স্বাক্ষর রাখতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেতৃত্ব নেই বলেও মন্তব্য করেন আমু।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় সরকার উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছেন। খালেদা জিয়ার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে কোনও ষড়যন্ত্রই হালে পানি পাবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। খালেদা জিয়া গাড়িতে জাতীয় পতাকা দিয়েছিলেন, আর শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও ভুল বুঝাবুঝি হয়। সে সময় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। আজকে তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। দেশও আজকে অন্ধকার থেকে আলোরপথে। শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। আজকে শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব হতো না। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান খুনিদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। দেশকে কলঙ্কিত করেছেন। শেখ হাসিনার যুুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের বিচার করে কলঙ্কমুক্ত করছেন।
তিনি বলেন, দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারী নানা চক্রান্ত শুরু করেছে। আজকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিএনপি নেতারা ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তারা কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সিনিয়র এ আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, সেদিন শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার দিয়ে আমরা আজকে ধন্য। তিনি জাতির আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক।
শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জিয়া প্রতিরোধ কমিটি গঠন করছিল। কিন্তু জিয়ার ষড়যন্ত্র টেকেনি। জিয়া রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশে ফেরায় জিয়ার রাজনীতিই কঠিন হয়ে উঠল।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেলিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশের ব্যাপারে নাক গলাবা না; বরদাশত করা হবে না যুক্তরাষ্ট্রকে শেখ সেলিম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ