Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈষম্যের শিকার পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস

নানা সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম-সিলেট রেল রুট

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক নগরী দু’টির মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ থাকলেও তা মানসম্মত নয়। তারপরেও যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেদিকে রেল কর্তৃপক্ষের নজর নেই। ভুক্তভোগীরা জানান, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে মাত্র দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। রুটভেদে গুরুত্বপূর্ণ হলেও ট্রেন দু’টি বৈষম্যের শিকার। যাত্রীর তুলনায় কোচ কম। নেই এসি কোচ। উদয়নে একটা এসি কোচ থাকলেও মাঝে মধ্যে তা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কাটা পড়ে। এ ছাড়া কোচগুলো অপরিচ্ছন্ন, টয়লেটে পানি থাকে না, চলতে পথে হকারদের উৎপাতসহ আরও কতো ঝামেলা পোহাতে হয় যাত্রীদের। তবে রেলওয়ের পূর্ব জোনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের ট্রেন কখনওই বৈষম্যের শিকার হতে পারে না। বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করেই সব ট্রেন যেমন চলছে, এই রুটের ট্রেনও ঠিক তেমনি। একজন কর্মকর্তা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন কোচ আসলে এই রুটের ট্রেন দু’টির চেহারা পাল্টে যাবে। দু’টি ট্রেনেই নতুন কোচ দেয়া হবে। অন্তত একটি ট্রেনে লাল সবুজ কোচ লাগবে, আরেকটা পাবে সাদা কোচ।
চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেন আছে মাত্র দু’টি। পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস। পৃথক সেট কোচ নেই বলে এই দু’টি ট্রেনের অবস্থা ঘুরে ফিরে একই। ভুক্তভোগীদের মতে, চালু হওয়ার পর থেকে এই দু’টি ট্রেন বৈষম্যের শিকার। যাত্রীর তুলনায় কোচ কম। এ কারণে টিকেট নিয়ে চলে কাড়াকাড়ি। গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রেন দু’টির কোচ খুলে অন্য কম গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে লাগানোর নজিরও আছে। যে কোচগুলো দিয়ে ট্রেন দু’টি চলছে সেগুলো নিম্নমানের। অনেকের মতে, চট্টগ্রাম ও সিলেট পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। দেশ-বিদেশ থেকে সারা বছরই এই দুই জেলায় হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে। শীতের মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বাড়ে। সে সময় ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট অথবা সিলেট থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে আসা যাওয়া করতে চান অনেকেই। কিন্তু ট্রেনের বেহাল দশা এবং চাহিদা মতো ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা প্রথম শ্রেণীর কোচ না থাকায় অনেক যাত্রীই হতাশ হয়ে ফিরে যান। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ফয়জুল্লাহ কবীর বলেন, আমরা যারা নিয়মিত ভ্রমণ করি তারা প্রথমে ট্রেনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কারণ ট্রেন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং ভ্রমণ আরামদায়ক। কিন্তু ট্রেনের অবস্থার কথা শুনলে পিছপা হতে হয়। তখন বাস ছাড়া আর উপায় থাকে না। তিনি সিলেট রুটকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা করে বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের উচিত এই রুটকে গুরুত্ব দেয়া। সিলেট মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলিম বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কেউ সিলেটে আসার পর চট্টগ্রাম যেতে চান। যারা দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরতে আসেন তারা মূলত পূর্বাঞ্চলে এলে এই দুই জেলা বা বিভাগের পর্যটন এলাকাগুলো একই সাথে ঘুরে দেখতে চান। সেক্ষেত্রে সিলেট থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগ্রহ থাকে। কিন্তু মানসম্পন্ন ট্রেন নেই বলে হয়তো মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করে। তিনি বলেন, শুধু দুটো কোনো এই রুটে আরও ট্রেন দেয়া উচিত। একই সাথে ট্রেনগুলোতে সেবার মান উন্নত করলে যাত্রীর অভাব হবে না।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট রুটের ট্রেন চলাচল করে কুমিল্লার লাকসাম হয়ে। এ কারণে সময় অনেক বেশি লাগে। চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যেতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘন্টা। যাত্রীদের মতে, এই সময়টা আরও কমিয়ে আনা দরকার। আলাপকালে বেশ কয়েকজন যাত্রী এই রুটের ভ্রমণকে ‘বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর প্রধান কারণ এই সময়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সকালে ছেড়ে যাওয়া পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে কোনো এসি কোচ নেই। তবে রাতের উদয়ন এক্সপ্রেসে একটা এসি কোচ আছে। এজন্য এসি বার্থের টিকেটের জন্য যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অন্যদিকে, পাহাড়িকাতে যাত্রীর তুলনায় কোচ সংকট প্রকট। এই কোচ সংকটের কারণে পাহাড়িকাতে ভিড় বেশি হয়। গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করে এই আন্তঃনগর ট্রেন।
আলাপকালে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সিলেট যাওয়ার পথে মৌলভীবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল। প্রথম শ্রেণীর রেলওয়ে স্টেশন হলেও এই স্টেশনে টিকেটের স্বল্পতা প্রকট। এ নিয়ে শ্রীমঙ্গলবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন সরব দীর্ঘদিন থেকে। তাদের দাবি, শ্রীমঙ্গলের যাত্রী সংখ্যা অনেক। সে তুলনায় আসন সংখ্যা খুবই কম। এই আসন সংকটের কারণে এখানকার যাত্রীরা হতাশ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় এই স্টেশনের পরিবেশও ততোটা ভালো নয়। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ এই একটা স্টেশন থেকে বছরে ৫ কোটি টাকারও বেশি আয় করে থাকে। যাত্রীদের মতে, চাহিদা অনুযায়ী সেবার মান বাড়ালে এবং আসন সংকট কাটলে শুধু শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকেই বছরে বর্তমান আয়ের দুই/তিন গুণ বেশি রাজস্ব আয় করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৈষম্যের শিকার পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ