পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সাবেক প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে নিন্ম ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ভোগ্যপণ্য কিনতে ৭০ শতাংশ বেশি মূল্য গুণতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের পণ্যমূল্যের ব্যবধান কমাতে পারতো তাহলে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের সংখ্যা যেহারে কমছে সেটা আরও ত্বরান্বিত হতো।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার (৯ মার্চ) বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত ‘টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য পরিষদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্য ৭০ শতাংশ বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। এটি দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে। পণ্যের উপযুক্ত মূল্য মিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গুটি কয়েক মানুষের লাভের জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি। পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সবকিছু করবে। সিন্ডিকেট করে পণ্যে অবৈধ মজুত গড়ে তুলে কৃত্তিম উপায়ে মূল্য বৃদ্ধি করা সুযোগ দেয়া হবে না। বাজারে পন্যের চাহিদা ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে।
টিপু মুন্শি বলেন, মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে পবিত্র রমজান মাসের আগেই পণ্যের অবৈধ মজুত ও দাম বৃদ্ধির সুযোগ দেযা হবে না। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা না থাকলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করতে দেয়া হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশে পণ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ অনেক তলানি থাকার কারণে আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। কারণ পণ্য বিক্রি করে যে পরিমাণ লাভ করা সম্ভব ব্যবসা শুরু করতেই প্রায় সে পরিমাণ ব্যয় করতে হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন ) বলেন, আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই। সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি বেশকিছু ভালো পরিকল্পনা নেয়া হলেও স্বল্পমেয়াদি ভালোমানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন টেন্ডার আহ্বান করলে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যে, টেন্ডারে নতুনরা অংশগ্রহণই করতে পারে না। এমনকি কেউ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করলে তারা একটা ক্লাবে ঢুকে যায়। ফলে অটো তাদের ঋণ রিসিডিউল হয়ে যায়। অথচ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লস করলে দেউলিয়া হয়ে যেতে হয়। তাদের এক্সিটের কোনো উপায় থাকে না। সরকারকে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান ব্যবসায়ী এ নেতা।
শফিউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও লাভ করে। তারা বেসরকারি ব্যাংকের সুদে স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদের পার্থক্য) ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে শিল্প খাতে ঋণের সুদ হারই হচ্ছে ২ শতাংশ। এভাবে অধিক সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা শিল্প স্থাপন করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ৭০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। এ আয়ের অধিকাংশই বেসরকারি খাত থেকে আসবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কমিশনের চেয়ারপার্সন মো. ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।