Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনে সক্ষমতায় বাংলাদেশ

দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনারের উদ্বোধনীতে বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ৬:২৪ পিএম

স্বাস্থ্যকর জাতি গঠনে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের মানসস্মত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তাই গবেষণা বৃদ্ধি এবং বায়োসিকিউরিটি বাড়িয়ে মানসম্মত উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, একই সাথে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। ‘পোল্ট্রি ফর হেলথ লিভিং’ স্লোগানকে সামনে রেখে দু’দিনব্যাপী ১১ তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার-২০১৯ এর উদ্বোধনী দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিনেই বিশে^র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পোল্ট্রি গবেষকরা তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ওয়াপসা-বিবি সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হোসেন, ওয়াল্ড পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি নিং ইয়ং এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম, ওয়াপসা’র গ্লোবাল সাধারণ সম্পাদক রোমেল মূলডার, ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ।

ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, আমরা যেসব খাবার খাই এবং সেগুলো যে ধরণের পুষ্টির যোগান দেয় তা আমাদের মানসিক ও শারিরিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে, সেজন্য স্বাস্থ্যবান জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে টেকসই এবং সমতাভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের মানুষদের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি আর্থ-সামাজিক মডেল প্রয়োজন। ওই মডেলে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্রমুক্ত সুস্থ্য নাগরিক এবং কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমরা বিশ্বাস করি এগুলোর ভাল সমাধান দিতে পারে পোল্ট্রি শিল্প। কারণ মানসম্পন্ন পুষ্টি সরবরাহে বড় অবদান রাখছে পোল্ট্রি খাত।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভেনকাটেস ওয়ারা রিসার্স এন্ড ব্রিডিং ফার্মস প্রাইভেট লিমিটেডের জেনেটিক রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট গবেষক জি আই জিম। তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী পোল্ট্রি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অধিক খাদ্য ব্যয়, পরিবেশগত প্রভাব, এ্যানিমেল ওয়েল ফেয়ার, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং রোগব্যাধী অন্যতম।

আমেরিকার কব-ভেনটারেস কোম্পানির ডিপার্টমেন্ট অব রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট গবেষষক ফ্রাঙ্ক সাউয়িয়ার্ডট এবং এ্যানুওলুয়াপো ফ্রাঙ্ক এবং মিলিন্ড লাইমি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মিলিন্ড লাইমি বলেন, পুষ্টির উপাদানগুলোর মধ্যে পানি অন্যতম এবং সহজলভ্য একটি উপাদান। মানুষের যেমন বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজন হয় ঠিক একইভাবে পোল্ট্রির ক্ষেত্রেও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। পানির গুনগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহের উপর নির্ভর করে পোল্ট্রি খামারের লাভ-ক্ষতি। বৃহৎ আকারের ক্ষেত্রে তাই গুনগত মানের পানি সরবরাহ করা একটি অপরিহার্য বিষয়। বিশ^ব্যাপী বিজ্ঞানীরা এখন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে।

ভারতের হুভে ফার্মা সিইএ (পুনে) ও পি সিংএ প্রবন্ধে বলেন, ভারতে প্রায় ১২৩ কোটি মানুষ বাস করে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশে^র জনসংখ্যার মধ্যে এশীয়াতে আগামী ২০৩০ সালে মধ্যবিত্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৬৬ শতাংশ হবে। এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি এবং খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। দ্রুত বর্ধনশীল পোল্ট্রি উৎপাদনের মাধ্যমে এই বর্ধিত জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা যোগান দেয়ার সুযোগ রয়েছে। ভারতে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ইউরো এবং ব্রয়লার উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৫-১৬ সালে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন টন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় পোল্ট্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্যের গুনাগুন ও পুষ্টি মান, কাঁচামালের দুস্প্রাপ্যতা, সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সংকট, আধুনিক ভ্যালু এডেড পণ্য উৎপাদন, বায়োসিকিউরিটি এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতাবোধ ইত্যাদি

সাংবদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বাংলাদেশে গোশতের কনজাম্পশন ১০ কেজির ওপরে সেখানে মুরগির গোশতের কনজাম্পশন প্রায় সাড়ে ৬ কেজি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফিডের এফসিআর পৃথিবীতে খুব কম দেশেই আছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে আমাদের ফিডে যে সকল উপকরন ব্যবহার করা হয় বেশ ভাল মানের। একই সঙ্গে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যেন খামারিরা এন্টিবায়োটিক কিনতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে তার উন্নয়ন ঘটাতে হলে পোল্ট্রি শিল্পকেই গুরুত্ব দিতে হবে। পোল্ট্রি বীমা চালু হলে গ্রামের সাধারন খামারিরাও ব্যাংক ঋণের সুবিধা পাবে বলে মন্তব্য করেন খালেদ।

কব ভেনট্রেস ইন্টা ইউ এস এ-এর বিজ্ঞানী ড. ফ্রাঙ্ক এবং ভেংকটেসওয়ারা রিসার্চ এন্ড ব্রিডিং ফার্মস এর জি এল জেইন ভনভন, পোল্ট্রিতে আজকের এই অগ্রগতি অনেক কস্টের ফসল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ