Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আলোর অভিযাত্রীর ফেরার দিন আজ

প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.কে.এম. এনামুল হক শামীম : আজ ১৭ মে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষের জন্য এক আনন্দ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিন। ১৯৮১ সালে এইদিনে আলো হাতে আঁধারের কান্ডারি হয়ে-বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় ফিরে এসেছিলেন জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এইদিনে ঝড়-বৃষ্টিকবলিত প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক বৈরী হাওয়ার মুখে তিনি এসেছিলেন আলোর দিশা নিয়ে। স্রোতের বিপরীতে সেই যে উজানে নাও বাওয়া শুরু করেছিলেন জাতির জীবনে সাফল্যের পালক পরিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। জীবনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে কুড়িবারের বেশি। তখনও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজন ও জাতীয় চার নেতার রক্তের দাগ শুকায়নি। তখনো গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে বঙ্গবন্ধুবিহীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ওপর। তখনও চলছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শাসক ও নানা পথের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গোয়েবলসকে হার মানানো অপপ্রচার। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সময়টিতে শ্বাসরুদ্ধকর অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হয়েছিল গোটা জাতিকে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে এদেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন। কিন্তু সেদিনের দিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। শেখ হাসিনার চলার পথও ছিল না কুসুমাস্তীর্ণ। রাজনীতির ময়দানের কঠিন পথের পাশাপাশি প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। দিনটি ছিল রোববার। সেদিন কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিলকে। অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা সেদিন গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে আকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে ও একনজর দেখতে। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল নেত্রী কখন আসবেন সেই প্রতীক্ষায়। অবশেষে বিকাল চারটায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। তখন জনসমুদ্রের জোয়ারে ছিল উত্তাল ঢেউ। ১৯৮১ সালের এইদিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুলপড়–য়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। সেদিন গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। জনস্রোত তখন কুর্মিটোলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিস্তৃৃত। গোটা এলাকা জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পিতা-মাতা, ভাই-ভাবি হারানো পরিবারের বড় কন্যা শেখ হাসিনা। দেশের মাটিতে পা দিয়ে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে আমার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।
’৮১ সালের ফেব্রুয়ারির আওয়ামী লীগের ইডেন কাউন্সিলে দলটি যখন দ্বিতীয় দফা ভাঙনের মুখোমুখি তখন ঐক্যের কা-ারি করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। এরপর থেকে শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে বারবার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারসহ তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের সব হিসাব-নিকাশ যেন মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেল। দেশের মাটিতে নেমেই অন্ধকার দুঃসময়ে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি নামলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। গণমানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে নিরন্তর সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণই ঘটালেন না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে দেশের জনগণকে সুসংগঠিত করে ঐক্যের রাজনীতির শুভ সূচনা করলেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ সম্পন্ন করে জাতির কাছে করা ওয়াদা পূরণ করেছেন। জাতির কলংক মোচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি হাজারও প্রতিকূলতার মধ্যে ইস্পাত দৃঢ় মানসিকতায় চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে পাঁচজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকিগুলোর মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সেনাশাসন ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার তেজস্বী নেতৃত্বের মহিমায় ’৭৫-উত্তরকালে দল ভেঙে যারা চলে গিয়েছিলেন তাদেরও ফিরিয়ে আনলেন আওয়ামী লীগের পতাকাতলে। একজন উদার গণতন্ত্রী হিসেবে তিনি দলে সবাইকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে আওয়ামী লীগকে এক শক্তিশালী গণসংগঠনে পরিণত করলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে এসে তার স্নেহছায়ায় ধন্য হলো আমাদের জীবন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার লড়াকু সংগ্রামমুখর জীবন এতটাই উদ্ভাসিত হয়ে উঠল যে, মানুষ তার দিকে স্রোতের মতো ছুটেই গেল না, ভালোবেসে তাকে কখনো গণতন্ত্রের মানসকন্যা, কখনো বা জননেত্রী বলে দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উচ্চাসনে অভিষিক্ত করলেন। আপসহীন দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে গণমানুষের সংগ্রামে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙ্গাতে লাগলেন। গোটা বিশ্ব অভিভূত হয়ে দেখল একজন সংগ্রামী নেত্রীর রাজনৈতিক সাফল্যের উত্থান। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর স্নেহসান্নিধ্য পাইনি তারা তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্নেহসান্নিধ্যে ধন্য হলাম। আমরা তার স্নেহছায়ায় কাছে থেকে দেখলাম দুঃখী বাংলার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও আস্থা এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। তার সাহসী সংগ্রামের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি তিনি কীভাবে একের পর এক প্রাণনাশের আঘাত, হামলা, নির্যাতনের মুখে অমিত সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্বই দিলেন না, আমাদের বুকের ভেতরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুনও জ্বালিয়ে দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে কত ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছে! তিনি ছিন্ন করেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণের বাতি জ্বালিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে বৈরী স্রোতের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন। তার স্নেহছায়ায় জাকসু ভিপি থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে একজন সাধারণ কর্মী হয়ে রাজনীতির পথ-পরিক্রমায় খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি এই মহান নেত্রীকে। বঙ্গবন্ধুর হƒদয়ের বিশালত্ব দিয়ে তিনি ভালোবেসেছেন তার মাটি ও মানুষকে। দলের কর্মীদের জন্য তার কোমল হƒদয়খানি বার বার কেঁদে উঠতে দেখেছি। কর্মীদের কাছে কখনো তিনি এক স্নেহময়ী মা, মমতাময়ী বড় বোন, কখনো বা আদর্শ অভিভাবক। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে রাখতে তিনি বয়সের সীমানাই টেনে দেননি, আমাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন বই-খাতা-কলম। ছাত্রলীগের কর্মীদের আগে পড়ালেখা, মানুষ হওয়া, তারপর রাজনীতির তাগিদ তিনি বার বার দিয়েছেন। এই মহান নেত্রীর রাজনীতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জীবনকেই ধন্য করেনি, গণতন্ত্রকামী অসাম্প্রদায়িক শক্তির পায়ের তলার মাটি শক্ত করেনি, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। গোটা বিশ্ব তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে অভিভূত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু করতে তিনি প্রাইমমিনিস্টার আওয়ার্স চালু করে প্রতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে এনে সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীদের বদলে সদস্যদের বসিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি। নারীর ক্ষমতায়নে ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি যে ইতিহাস নির্মাণ করেছেন অনাগত প্রজš§ তা ইতিহাসের ক্যানভাসেই তুলে আনবে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গণমানুষের সমর্থন বাড়ানোর পরও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তবুও গণতন্ত্রের পথে তার অবস্থান ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের ঘাটতি দেখা যায়নি। দমন-নির্যাতনের মুখে তিনি গণমানুষকে নিয়েই তার সংগ্রাম করেছেন। একুশের গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত কায়দায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্লজ্জ ও অশুভ আঘাত করা হয়েছে। তিনি দমেননি। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে কোনো ডর-ভয় তাকে দমাতে পারে না। তিনি ফের প্রমাণ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম তার সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র উšে§াচন করে গণতন্ত্র ও ব্যালটের পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন এই দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতেও তিনি কার্পণ্য করবেন না। তিনি সব সময় বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ করবেন। সংগ্রামমুখর জীবনের পরতে পরতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। আমরা যারা তার কর্মী তাদের জীবনকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন। মাইনাস ফর্মুলার ষড়যন্ত্র, কারা নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি। শুধু জনগণের ওপর ভর করা এই সাহসী নেত্রী ফের বিজয়ী হয়ে জনরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এই মানবিক হƒদয়ের অসীম সাহসী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে কাছে থেকে দেখতে দেখতে অভিভূত হতে হয়। মানুষ ও কর্মীর জন্য তার দরদ, গরিবের জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়, বোঝানো যায় না। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে রাত শেষ হয়, ফজরের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে তার দিন শুরু হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই সাদামাটা। তিনি নিজে রান্না করতে যেমন পছন্দ করেন, তার চেয়ে বেশি আতিথেয়তার সঙ্গে খাওয়াতে পছন্দ করেন। বিশ্বে এমন ক›জন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব। একজন সভ্রান্ত পরহেজগার মুমিন মুসলমান হলেও তার চিন্তা ও চেতনাজুড়েই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি জায়গা নিয়েছে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে তিনি দ্বিধা করেন না। খোলা বইয়ের মতো তার রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উš§ুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন। তার সারল্যতা শিশুর মতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তার হাতের কাছেই শোভা পায়। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে তাকে দেখেছি। তিনি নিজে যেমন পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন, তেমনি আমাদেরও পড়াশোনার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইতিমধ্যেই সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি নিজের ছেলে-মেয়ের চেয়ে কর্মীদের ভালোভাসেন নিজ সন্তানের মতোই। মায়ের স্নেহ-মমত্ববোধ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করে তা কর্মীদের নির্দ্বিধায় দেন। অসহায় বিপন্ন মানুষের কাছে ব্যাকুল চিত্তে তিনি ছুটে যান মানবিক হƒদয় নিয়ে, মায়ের ভূমিকায় পাশে দাঁড়ান। তার মতো স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী যেভাবে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন, দেশের স্বার্থে যেভাবে আপসহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে এসেছেন তা ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দেবে। বিশ্ববরেণ্য নেতারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িখানিও তিনি জনগণকে দিয়েছেন। লোভ, মোহের ঊর্ধেŸব পথ চলা বিশ্ববরেণ্য নেত্রী আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়িপথেই হাঁটবে, ততদিন গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হতেই থাকবে, ততদিন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। দেশ হবে তার স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। আজ তার এই দেশে ফেরার শুভ দিনে মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্থ, কর্মঠ ও দীর্ঘ জীবন প্রত্যাশা করি। এই দেশ ও মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই মহান নেত্রীর ভাগ্যের সঙ্গে। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন আমাদের মনের দোয়া কবুল করুন। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক: সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও সাবেক জাকসু ভিপি এবং সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-কেন্দ্রীয় কমিটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলোর অভিযাত্রীর ফেরার দিন আজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ