পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিবিসি’র দিল্লী প্রতিনিধির প্রতিবেদন
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশের বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী যে ইসরায়েলি নাগরিকের সঙ্গে ভারতে বৈঠক করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাকে গুপ্তচর বলে উল্লেখ করায় তার আমন্ত্রণকারীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মেনদি এন সাফাদি নামে ওই ইসরায়েলি একজন গবেষক ও রাজনীতিক এবং তিনি মোসাদের কেউ নন। যে আগ্রা শহরের মেয়রের উপস্থিতিতে মি. সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়েছিল বলে অভিযোগ, তিনিও বিবিসিকে বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হলেও হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মি. চৌধুরীকে গত রোববার ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। মেনদি এন সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য এবং সম্প্রতি ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক ও আরও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে তিনি বেশ ঘন ঘনই ভারতে এসেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে তিনি একটি থিঙ্কট্যাঙ্কও বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালান এবং ভারতের একাধিক বিশেষজ্ঞর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এমনই একজন হলেন মেজর জেনারেল গগনদীপ বক্সী, যার সঙ্গে দিল্লিতে একটি সেমিনারে মি. সাফাদির আলাপ হয়েছিল।
মি. সাফাদিকে বাংলাদেশে একজন গুপ্তচার হিসাবে সন্দেহ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন জেনারেল বক্সি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘দেখুন, ইসরায়েলে তার ভূমিকা নিয়ে আমি জানি না, তবে ইসরায়েল সরকারের খুব উঁচু মহলে তার প্রভাব আছে বলেই আমার মনে হয়েছে। খুব জ্ঞানী লোক, অনেক কিছু জানেন। তিনি ইসরায়েল সরকারের অংশ এবং নিজে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা’।
দিল্লির সেমিনারে যে প্রতিষ্ঠানটি মি. সাফাদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেই ‘ভারতীয় সিটিজেনস সিকিওরিটি কাউন্সিল’ সংগঠন মনে করছে দিল্লিতে এসে তিনি বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করবেন সেটা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য।
সংগঠনের আহ্বায়ক বিজয় কুমার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় আমরা নানা মতের লোকজনকে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম দিই। তাদের সঙ্গে এটুকুই আমাদের সম্পর্ক। মি. সাফাদিকেও এভাবেই আমরা ডেকেছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এসে তিনি আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হবেন এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তিনি আমাদের সেমিনারে দশ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন, ব্যাস এটুকুই’।
বস্তুত আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মি. সাফাদির যে দেখা হয়েছিল সেটা কিন্তু ঠিক দিল্লিতে নয়, হয়েছিল আগ্রাতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আগ্রা শহরের মেয়র ইন্দ্রজিৎ বাল্মিকীও - যার উপস্থিতিতে দু’জনকে মালা পরানো হয়। উপলক্ষটা ছিল আগ্রার সঙ্গে ইসরায়েলের একটি শহর সামারিয়াকে টুইন সিটি হিসেবে ঘোষণা করা।
আগ্রার মেয়র বিবিসিকে বলেন, এই টুইন সিটির প্রস্তাবটা এসেছিল ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের কাছ থেকেই। ‘ওরাই আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, আমি তাজমহলে সেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করি। সেখানেই মি. সাফাদি এসেছিলেন, আরও হয়তো অনেকে এসেছিলেন, সবাইকে তো আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। অনেক বড় দল ছিল’।
কিন্তু আসলাম চৌধুরীও কি সেখানে ছিলেন? মেয়র তা অস্বীকার করছেন না, কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন, আসলাম চৌধুরী যে বাংলাদেশী নাগরিক সেটাই তিনি জানতেন না।
তবে আগ্রার মেয়রের কার্যালয়েরই একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মি, চৌধুরীর ব্যবসার কাজে আগ্রাতেও যাতায়াত আছে, সেই সুবাদেই তিনি হয়তো শহরের মেয়রের আয়োজিত কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকতে পারেন। তবে একই অনুষ্ঠানে মি. সাফাদি ও আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে কোনও বৈঠকের খবর জানা নেই বলেই সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
সম্প্রতি মি. চৌধুরীকে নিয়ে খবর বেরোয় যে, তিনি সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে ইসরায়েলি লিকুদ পার্টির এক নেতার সাথে বৈঠক করেছেন - যাকে ‘মোসাদ-সংশ্লিষ্ট’ বলে উল্লেখ করে কয়েকটি সংবাদপত্র।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে মি. চৌধুরীর সাথে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার বৈঠকের অভিযোগ আসার পর তারা তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। রোববার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেনদি সাফাদিকে গুপ্তচর বলায় ভারতে বিস্ময়
বিএনপি নেতার সাথে দেখা হয়েছে, বিবিসিকে সাফাদি
এদিকে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে দেখা হওয়ার কথা স্বীকার করে ইসরায়েলি রাজনীতিক মেনদি এন সাফাদি বলেছেন, তাদের মধ্যে কোনো গোপন বিষয়ে কথা হয়নি। ইসরায়েল থেকে টেলিফোনে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি, সেখানে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এগুলো সবাই জানেন, আমরা দুজনে সেসব নিয়েই কথা বলেছি, তাও সেটা একটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে। আমরা বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছিলাম বা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিলাম এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতেই পারে না।’
তিনি আরও দাবি করেছেন, ‘সরকার ফেলার চক্রান্ত একটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে করা হচ্ছে, তারপর আবার চক্রান্তকারীরা হাসিমুখে তাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, এ জিনিস কোথাও আবার হয় না কি?’ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মি. চৌধুরীকে গত রোববার ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ আট দিনের রিম্যান্ডে নিয়েছে।
মি. সাফাদি ইদানীং বেশ ঘন ঘনই ভারতে আসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, আগ্রার যে অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর সম্প্রতি দেখা হয়েছিল তাতে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র যুব শাখা। প্রতিবেশী দেশের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে আসলাম চৌধুরীও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। দুজনের আগে থেকে কোনো পরিচয়ও ছিল না। একই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দুই অতিথি হিসেবে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক আলাপ হয়েছিল মাত্র।
‘আসলাম চৌধুরীকে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। উনি কী কাউকে হত্যা করেছেন? উনি শুধু ভারতে এসে একজন ইসরায়েলির সঙ্গে কথা বলেছেন’।
‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিচলিত’
মি. সাফাদি বলেন, মি. চৌধুরী তার দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছেন বলেই তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে তার ধারণা। বাংলাদেশে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে তাকে যে মোসাদের গুপ্তচর বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে সে সম্পর্কেও মি. সাফাদি পুরোপুরি অবহিত।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাকে এমন একজন গুপ্তচর দেখান যিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার গতিবিধি ফেসবুকে পোস্ট করেন, সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান, সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়ান। এরপরও কেউ আমাকে যদি গুপ্তচর মনে করেন তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই’।
মি. সাফাদি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়টি তাকে বিচলিত করে। ‘আমি সারা পৃথিবীতেই সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলি, তাদের জন্য লড়ি, বাংলাদেশও তার কোনো ব্যতিক্রম নয়’। তার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পাতায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কতগুলো পোস্টিং রয়েছে। আসলাম চৌধুরীর আটক নিয়ে ইসরায়েলের একটি নিউজ সাইটে প্রকাশিত একটি খবরও ঐ ফেসবুক পাতায় পোস্ট করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।