পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের মিরেজ জঙ্গি বিমান বহর গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে কথিত সন্ত্রাসী শিবিরগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এতে ২৫০ থেকে ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে ভারত দাবি করেছে। তবে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইসলামাবাদ জানায়, ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাল্টা ধাওয়ার মুখে তড়িঘড়ি করে বোমা বর্ষণ করে সেগুলো ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়া সময়মতো ভারতের এ হামলার জবাব দেয়া হবে বলেও পাকিস্তান জানিয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার জবাব দিয়েছে ভারত। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে জম্মু ও কাশ্মিরে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায় ভারতের মিরেজ-২০০০ জঙ্গি বিমান বহর। এতে জইশে মোহাম্মদ-এর সবচেয়ে বড় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করার দাবি করেছে ভারত। বলা হয়েছে, বালাকোট, চাকোটি এবং মুজাফফরাবাদে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে জইশে মোহাম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন এবং লস্করে তৈয়বার যৌথ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। ভারতীয় সেনা সূত্রে বলা হয়, ভারতীয় সময় ভোর সাড়ে ৩টা নাগাদ অভিযান শুরু হয়। গোয়াালিয়র থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা অভিমুখে রওনা দেয় লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমা বোঝাই ১২টি ‘মিরেজ ২০০০ জঙ্গিবিমান। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভাতিন্ডা থেকে একটি বিমান রওনা দেয়। আগ্রা থেকে রওনা দেয় মাঝআকাশে জ্বালানি সরবরাহকারী বিশেষ বিমান। গোপন জায়গা থেকে নজরদারি চালাতে পাঠানো হয় হেরন ড্রোন।
প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পাকিস্তানের আকাশে দাপিয়ে বেড়ায় ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে অভিযান চালায় বিমান বাহিনী। প্রায় ২১ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ করে নির্দিষ্ট টার্গেটে। পরপর বোমা বর্ষণ করা হয় বালাকোট, মুজাফ্ফরাবাদ এবং চকোটিতে। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় জইশের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩। ধ্বংস করা হয় হিজবুল ও লশকরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিও। ভারতীয় বিমান বাহিনী সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশপথে ঢোকার পর পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এগিয়ে এলেও ভারতীয় মিরেজ জঙ্গি বিমান দেখে সেগুলো ফিরে যায়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০। তার মধ্যে রয়েছেন জইশের শীর্ষ কয়েক জন নেতাও।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর স্ট্রাইকের মাঝে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্র থেকে জানা গেছে সীমান্ত পেরিয়ে যে স্ট্রাইক হয়েছে তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে মোদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, কেন্ত্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মতো প্রবীণ মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও ছিলেন বৈঠকে। ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও।
এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর জানান, ভারতীয় বিমানবাহিনী কাশ্মিরে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে। তিনি আরো দাবি করেন, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলি তাড়াহুড়ো করে ফিরে যায়। তিনি জানান, মুজফফরাবাদ থেকে ভারতীয় বিমানগুলি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তার দাবি, বালাকোটে বোমা ফেলেই চলে যায় ভারতীয় বিমানগুলি। এই হামলায় বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। এ সময় ভারতের একটি মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছে বলেও দাবি করেন মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।
ভারতের বিমান হামলার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপত্তদা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠক শেষে এক বিবৃততে বলা হয়, সীমান্তে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অনুপ্রবেশের ‘সময় মতো জবাব দেয়া হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসী স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার ভারতীয় দাবি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। তবে পাকিস্তানি অংশে প্রবেশ করে ভারত যে আগ্রাসন চালিয়েছে যথাসময়ে ও যথাস্থানে এর জবাব দেয়া হবে।’
অন্যদিকে এ ঘটনায় জাপান সফর স্থগিত করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। তিনি গতকাল ইসলামাবাদে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ভারত যা করেছে, তা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণরেখার লঙ্ঘন। এতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিপদাপন্ন। পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এই ঘটনার জবাব দেয়ার সব রকমের অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তান সেই জবাব দেবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
এদিন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখেল সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হানা দেওয়া হয়েছে। যেখানে জইশের কয়েকশ’ জঙ্গির আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করেছিল, বালাকোটের ঠিক সেখানেই হানা দেয়া হয়েছে। এই হানাতে বড় সংখ্যায় জয়েশ জঙ্গি, তাদের প্রশিক্ষক এবং জয়েশের প্রথম সারির কমান্ডারদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি স্পষ্টই জানান, এই হামলা কেবলমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে। পাকিস্তানের কোনও সামরিক ঘাঁটি বা আসামরিক জায়গায় হামলা চালানো হয়নি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওই শিবিরের দায়িত্বে ছিলেন মওলানা মাসুদ আজাহারের শ্যালক মওলানা ইউসুফ আজাহার। বিমান হামলায় ওই জয়েশ নেতার মৃত্যু হয়েছে কি না স্পষ্ট নয়।
অভিযান সম্পন্ন হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খবর দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তারপর সরকারের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি মঙ্গলবার রাজস্থানের এক জনসভায় বলেন, ভারত তার হাতে নিরাপদ। তিনি পুলওয়ামা হামলার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিশোধ নিয়েছেন। সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন এবং ভালবাসেন বলেই আমি এত কাজ করতে পারি। আর আপনাদের বলে রাখি আমাদের সরকার ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়।’
এদিকে, বিমান বাহিনীর ওই অভিযানকে ভারতের প্রধান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।
জঙ্গি শিবিরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মিরে ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিয়মিতভাবে গোলাগুলি বিনিময় করলেও কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম উভয়পক্ষই জঙ্গি বিমান মোতায়েন করেছে।
পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বড় মাপের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, পাকিস্তান আর এ ধরনের শিবির পরিচালনা করে না। জঙ্গি গ্রুপগুলোকে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লীতে বিশ্লেষক ও ক‚টনীতিকরা বলেন, ভারতীয় বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু পরিষ্কার নয়। কারণ পুলওয়ামা হামলার পর নরেন্দ্র মোদি প্রতিশোধ নেয়ার কথা ঘোষণা করার পর সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় থাকা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের অবস্থান করার কথা নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান ভারতের হামলার জবাব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডনভিত্তিক জেন’স ইনফরমেশন গ্রুপের বিশ্লেষক রাহুল বেদি বলেন, পাকিস্তানিরা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে বাধ্য। তবে কখন ও কোথায় তা হবে তা শুধু তারাই বলতে পারে। এ এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে পারে।
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, উত্তেজনা হ্রাসে তৃতীয় কোনো দেশের অনুপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হতে পারে।
ভারতে আসন্ন নির্বাচন ও মোদির জন্য বিজয় দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ার মধ্যে ভোটাররা চায় নয়াদিল্লী কাশ্মির হামলার ঘটনায় কঠিন জবাব দিক। বেদি বলেন, তারা যেখানে হানা দিয়েছে, বলছে যে, সন্ত্রাসী শিবিরে আঘাত হানা হয়েছে। কিন্তু বহু গোয়েন্দা সূত্রেই বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঐসব শিবিরগুলো তুলে দেয়া হয়েছে। আসলে এটা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতীকীবাদ। নির্বাচনের আগে মোদি ভারতের পক্ষ থেকে কিছু দৃশ্যমান ব্যবস্থা জনগণকে প্রদর্শন করতে চান। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, আনন্দবাজার, দি ডন ও নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।