পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : তুরস্ক ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কূটনৈতিক পাড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে এ খবর নিয়ে চলছে বিতর্ক। ওআইসির প্রভাবশালী রাষ্ট্র তুরস্ক যে কারণেই দূতকে প্রত্যাহার করে নিক না কেন; ব্যর্থতার দায় কার? ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এটাকে ইস্যু করা উচিত নয়’ এ সত্যটা কূটনৈতিক পর্যায়ে এতদিনেও আনকারাকে বোঝানো সম্ভব হয়নি কেন? তাহলে কি তুরস্কের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক শীতল হবে? ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল ছাড়া সবার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হলো ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথেই শত্রুতা নয়।’ অথচ কারো সঙ্গে বৈরী আচরণ আবার লাজলজ্জার মাথা খেয়ে কাউকে ‘মহামুরুব্বি’ মানা হচ্ছে। যেসব প্রভাবশালী দেশ জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করছেন, তাদের এক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। আর যারা ভোট প্রসঙ্গ ওঠাচ্ছেন না, তাদের বেলায় অন্য দৃষ্টিভঙ্গি। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য দিলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল বলে প্রচার করা হয়। আর ভারতের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা প্রায়ই রাজনীতির ছবক দিচ্ছেন, তা অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ হয় না? এ কেমন দ্বিমুখী নীতি? ঢাকা-দিল্লি যৌথভাবে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি, টিপাইমুখে বাঁধ ইস্যু, ট্রানজিট, দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য ইত্যাদি ইস্যুতে কাজ করা প্রয়োজন। কিন্তু জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিপাক্ষিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন আছে কি? বাংলাদেশের যে সন্ত্রাস ইস্যু তা আমরা একাই সমাধা করার যোগ্যতা রাখি। সন্ত্রাস-জঙ্গী দমনে ভারত বা আমেরিকার সহায়তার প্রয়োজন নেই। কারণ আমেরিকার সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সমস্যা, ভারতের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সমস্যা আর বাংলাদেশের সমস্যা এক নয়।
পৃথিবীতে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে গোড়াপত্তন করেছে এমন দেশের সংখ্যা খুবই কম। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছি। কাজেই আর দশটা সার্বভৌম রাষ্ট্রের চেয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মর্যাদাই আলাদা। স্বাধীন দেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে থাকবে সেটাই বাস্তবতা। কিন্তু কূটনৈতিক ব্যর্থতা, ক্ষমতাশ্রয়ী নতজানু রাজনীতি এবং কিছু কিছু দেশের প্রতি অতি ভক্তির কারণে সে মর্যাদা বিনষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের ৫৩টি দেশে আমাদের এম্বাসি বা হাইকমিশন ডিপ্লোমেটিক মিশন রয়েছে ৫৯টি। ওই সব এম্বাসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন? আর সরকার সব ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে থাকতে পারছে?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এম্বাসি বা হাইকমিশন ডিপ্লোমেটিক মিশনে যারা কাজ করেন তাদের সর্বাগ্রে মেধা, কথাযুদ্ধে দক্ষতা, দেশপ্রেম ও কূটকৌশল জানা জরুরি। ডিপ্লোমেসি কী? ডিপ্লোমেসি হলো অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা আদায় করা যায়; আরো নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে সেই সুবিধা আরো কত নিজেদের পক্ষে নেয়া যায়; তা যাচাই-বাছাই করে, দেন-দরবার, দর কষাকষি করে নিজেদের অনুকূলে নেয়া। লাখ লাখ ডলার খরচ করেও ওই মিশনগুলো সেই কাজে কতটা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে? যেসব দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা কাজ করে বিপুল রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে সেসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে কি জোরালো সম্পর্ক রক্ষা হচ্ছে? হলে ওইসব দেশ বাংলাদেশী শ্রমিকদের নানা শর্ত এবং ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে কেন?
ওআইসির প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলে লাভ-ক্ষতি কী হতে পারে সে হিসেব কি করা হয়েছে? য্দ্ধুাপরাধী ইস্যুতে তুরস্ক তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে। যুদ্ধারপাধের বিচার চলছে কয়েক বছর ধরে। এতদিন সেখানে আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা দেশের বাস্তবতা তুলে ধরে তুরস্ককে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয়’ যুক্তি দিয়ে বুঝাতে পারেনি কেন? আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোর মধ্যে ওআইসি শক্তিশালী ফোরাম। ওই সংগঠনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে দেশে হাজারো বাধা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা কি এ বাস্তবতা বুঝতে অক্ষম?
সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ যেন হয়ে গেছে গরিবের সুন্দরী বউ। প্রবাদে আছে ‘গরিবের সুন্দরী বউ সবার ভাবি।’ জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করার পর থেকে বাংলাদেশে বিদেশীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। মাঝেমধ্যে কিছুদিন নীরব থেকে হঠাৎ হঠাৎ করে সে আনাগোনা বেড়ে যায়। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া ইত্যাদি ইস্যুতে সে আনাগোনা আবার বেড়ে গেছে। বিদেশীদের এই আনাগোনা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতি কি কার্যকর করছি? নাকি দেশের অদূরদর্শী রাজনীতির মতোই পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিহিংসার পররাষ্ট্রনীতি, তোষামোদের পররাষ্ট্রনীতি, নজজানু পররাষ্ট্রনীতি নানা ধারায় পরিচালিত হচ্ছে? যেসব প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনের পাশাপাশি ‘জনগণের ভোটের অধিকার’ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তুলছেন তাদের সঙ্গে এক ধরনের কূটনৈতিক আচরণ করা হচ্ছে। আর যেসব দেশ জনগণের ভোটের অধিকার উচ্ছন্নে যাক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সবকিছু করা যায়, এমন নীতির বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে অন্য ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা শিংয়ের বক্তব্য ‘যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে’ এ বার্তার মধ্যেই ভারতের নেতা-মন্ত্রী-কর্মচারীদের জন্য বাংলাদেশের সবকিছুই যেন উন্মুক্ত। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এলে সরকার বেশ সতর্ক হয়ে যায়। ওইসব দেশ-সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা কোনো কথা বললে তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। শুধু তাই নয়, ওইসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা ঢাকায় যাতে সুশীল সমাজ, মানবাধিকারকর্মী, কূটনীতিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করতে না পারেন কৌশলে সে চেষ্টা চলে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। যার জন্যই ‘কাজের বেটি মর্জিনা’, ‘সিকি মন্ত্রী’ ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ওই সব দেশের ‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদ করতে না পারলেও তীব্র সমালোচনা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের ক্ষেত্রে এটা দেখা গেছে। কিন্তু ভারতীয় মন্ত্রী, সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বাংলাদেশে এসে রাজনীতি-আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুশীলদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের ব্যাপারে সরকারের কোনো ‘রা’ নেই। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললেই অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ‘নাক গলানো’ হয়। সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ তুলে উদ্বিগ্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। অথচ ভারতের কেউ কথা বললে তা দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলানো’ হয় না? বাংলাদেশ কি ভারতের করদ রাজ্য? ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর ঢাকা ঘুরে গেলেন। তাকে যেভাবে ‘বরণ করা হলো’ তা অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। তিনি ঢাকায় এসেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। সরকার অনুগত সুশীলদের সঙ্গে সোনারগাঁ হোটেলে বৈঠকের আয়োজন করেছে সরকারই। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাগ গলানো নয়? কয়েকদিন আগে আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশওয়াল ঢাকা সফর করে বিভিন্নজনের সঙ্গে বৈঠকের পর জানান, বাংলাদেশ-ভারত-আমেরিকা একসঙ্গে সন্ত্রাস দমনে কাজ করবে। নিশা দেশাইয়ের এ বক্তব্য ভারতের প্রভাবশালী ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। সেখান থেকে ‘কোট করে’ ঢাকার পত্রিকাগুলো ছাপে। সুশীলদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস জয়শঙ্কর জানান, আমেরিকা-ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে সন্ত্রাস দমনের খবর তিনি ঢাকায় এসে শুনেছেন। ড. জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত কীভাবে কাজ করবে? এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আমরা তো বলিনি। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেটা ঢাকার সবাই জানতে পারলেন অথচ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানেন না! টিভি পর্দায় দেখা গেল জয়শঙ্করের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী মাথা নীচু করে এমন ভাব কররেন যে কোনা রাজা মহারাজার সঙ্গে হাত মেলানোর সৌভাগ্য হয়েছে। ধিক! বুদ্ধিজীবী ধিক!! বাংলাদেশের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিকভাবে কাজ করার কি আছে? ঢাকার ‘সন্ত্রাস’ সমস্যা আর ওয়াশিংটন ও দিল্লির সমস্যা কি এক? জয়শঙ্করকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হলো তাতে মনে হয় তিনি যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সমাধার জন্য এসেছেন। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা অনেক। দীর্ঘ ৪৫ বছরে ঢাকা শুধু দিল্লিকে দিয়েই গেছে কিছুই পায়নি। মুজিব-ইন্ধিরা চুক্তি অনুযায়ী সেই ’৭৪ সালে বেরুবাড়ি দেয়া হলেও দিল্লি ৪৪ বছর সময় নিয়ে ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট কার্যকর করায় ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত ট্রানজিট নিয়েছে অথচ তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে, টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বৃহত্তর সিলেটকে মরুভূমি বানানোর চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত বিদ্যুতের লাইন নিয়ে গেছে, অথচ বাংলাদেশ নেপাল রুট ব্যবহারে বাধা দিচ্ছে, নিত্যদিন সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশীরা প্রাণ হারাচ্ছে ইত্যাদি অসংখ্য ইস্যু নিয়ে জয়শঙ্কর আলোচনা করলে সফর হতো তৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তার সফর গুরুত্ব দেয়া যেত। কিন্তু দ্বিপাক্ষিকভাবে জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? ভারত তো এখনো সেভেন সিস্টার্সের স্বাধীনতা কর্মীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে। আমাদের কি সেটাই করতে হবে? গত জানুয়ারি মাসে বিজেপির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শ্রী রাম মাধব ঢাকা সফর করেন। তাকে নিয়ে একাধিক মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-কর্মশালা করেন। তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন। অথচ তার বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো মনে করা হয়নি। ভারতের আরএসএসের ভাবশীর্ষ ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা কারণে-অকারণে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেগুলো নিয়ে কি জয়শঙ্কর আলোচনা করেছেন?
কূটনৈতিক সম্পর্ক এমনÑযে কোনো পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক অটুট রাখা। কোনো কারণে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলে বা কোনো দেশের স্বার্থহানি, সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে ওই দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে নরম-গরম ভাষায় জানিয়ে দেয়া। কূটনীতিক ভাষায় যেমন ‘কড়া প্রতিবাদ’, ‘সতর্ক করা’, ‘জানতে চাওয়া’ ইত্যাদি। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে অনেকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে; জানানো হয়েছে; প্রতিবাদ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদও সেখানে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে একই কাজ করেছে। এর আগে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে একাধিক ঘটনার কারণে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এটাই হয়ে থাকে। কিন্তু সীমান্তে একের পর এক মানুষ হত্যা করছে বিএসএফ। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে উজান থেকে তিস্তার পানি তুলে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মুসলমান সম্পর্কে নানা বক্তব্য দিচ্ছে ভারতের নেতারা। কোনোদিন কি ঢাকায় কর্মরত ভারতের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে; বা এসব ঘটনার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে? ইদানীং কিছু বুদ্ধিজীবী অমুক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো, তমুক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দাও ইত্যাদি বক্তব্য দিচ্ছেন। সম্পর্ক ছিন্ন করার পর কী হবে তা কি ওই বুদ্ধিজীবীরা ভেবে দেখছেন? দেশে দেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক কি মাটির হাঁড়ি! ইচ্ছে হলেই ভেঙে দিলাম?
সংস্কৃতি বিনিময়ের নামে এদেশের মা-মাটি-মানুষের হাজার বছরের সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আউল-বাউল-জারি-সারি-ভাটিয়ালির বদলে কীর্তন-ভজনের চর্চাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভারতের সিনেমা ঢাকায় দেখানো হচ্ছে। ভারতের সিনেমা যেভাবে ঢাকায় দেখানো হয় এবং ভারতের শিল্পীদের বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভিগুলোতে প্রতিদিন যেভাবে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে সেটা কল্পনা করা যায়? মূলত ভারত বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোই দেখায় না। অথচ বিশ্বের তাবৎ দেশের ক্ষেত্রে এক ধরনের পররাষ্ট্রনীতি দৃষ্টিভঙ্গি আর ভারতের ক্ষেত্রে অন্য নীতি? ভারত এমন একটি হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী রাষ্ট্র যে বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই। অথচ আমাদের কাছে নেতানেত্রীদের কাছে দিল্লির লাড্ডু এতই মিষ্টি? আমাদের নেতানেত্রীদের বোঝা উচিত ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ কারো দয়ায় দান নয়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে সাফল্য দেখিয়েছে। ক্রিকেট খেলা লাল-সবুজের পতাকাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। অতএব...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।