পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : আজ ১৬ মে ৪০তম ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এদেশের লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জনতা। যার ডাক দিয়েছিলেন সারা বিশ্বের মজলুম মানুষের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
আজ থেকে চার দশক আগে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ নেতা। ডাক দিয়েছিলেন ফারাক্কা লংমার্চের। নিযুত কণ্ঠের গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বিশ্ববাসী। সেদিনের ঘোষণা আজও পদ্মা অববাহিকার আকাশে-বাতাসে অনুরিত হয়।
রাজশাহী তথা দেশবাসীর কাছে ১৬ মে এক ঐতিহাসিক দিন। মওলানা ভাসানীর আহ্বানে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাখ লাখ মানুষ ছুটে এসেছিল ফারাক্কা লংমার্চে যোগ দেয়ার জন্য রাজশাহীতে। বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা মানুষের পদভারে রাজশাহীর আকাশ-বাতাস ছিল প্রকম্পিত। ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের অনেকদূর পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিল জনতা। যা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মাদ্রাসা ময়দানের মঞ্চে বিখ্যাত তালের টুপি আর সফেদ লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত মওলানা ভাসানী লংমার্চ নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে যাওয়ার আগে দশ মিনিটের বজ্র নির্ঘোষ ভাষণ দেন, যা ছিল দিকনির্দেশক ও উদ্দীপক। নিযুত কণ্ঠের স্লোগানে একই আওয়াজÑমারণবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। চল চল ফারাক্কা চল। এরপর তার নেতৃত্বে শুরু হয় ফারাক্কার উদ্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাত্রা। ফারাক্কা অভিমুখী লংমার্চের অংশগ্রহণকারীদের খিচুড়ি, চিড়া, গুড়, রুটি, মুড়ি দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগতম জানিয়েছিল এখানকার মানুষ।
খরতাপ আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টির ঝাপটা তোয়াক্কা না করে লংমার্চ এগিয়েছে। যার অগ্রভাগে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। প্রকাশ্যে মওলানা ভাসানী লংমার্চ করলেও এর পেছনের নায়ক ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি মওলানা ভাসানীর এ ইস্যুকে জাতিসংঘ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মওলানা ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করে দিল্লির শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তার লংমার্চ ফারাক্কা ব্যারাজ হতে বেশ কয়েক মাইল দূরে কানসাটে শেষ হয়েছিল। তখনই ভয়ে ভারত সরকার ওই সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছিল।
মওলানা ভাসানী কানসাটে তার সমাপনী বক্তব্যে বলেছিলেন, ভারতের জানা উচিত বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। তিনি মজলুম জনতার আর্তনাদে সাড়া দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান। এতে ব্যর্থ হলে গোটা দুনিয়ার মানুষ ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, গঙ্গার পানি চাই। এটা আমাদের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার আমরা আদায় করে ছাড়ব। আফসোস লংমার্চের ছয় মাস পর ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান সেই মহাপুরুষ। মওলানা ভাসানীর লংমার্চের পর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে পাঁচ বছর মেয়াদি পানি বণ্টন চুক্তি করে।
বিগত হাসিনা সরকারের আমলেও ত্রিশ বছর চুক্তি করে। কোনো গ্যারেন্টিক্লজ ছাড়া। পরিতাপের বিষয় আজ অবধি ভারত সরকার এ চুক্তির মর্যদা দেয়নি। চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশ কখনো পায়নি। বরং পানি প্রবাহের হার সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। তার পানি শোষণ নীতি আরো আঁটোসাঁটো করেছে। উজানে অসংখ্য স্থাপনা করে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। যার পরিণতিতে এপারের বাংলাদেশের পদ্মা নদীসহ অসংখ্য নদনদী খালবিল অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা নামের নদীটি এখন শীর্ণ খালে পরিণত। পদ্মা নামে নদীটি পানির নিচে চাপা পড়ে ফসিলের রূপ নিয়েছে। হারিয়েছে জীববৈচিত্র্য। আবহাওয়ায় ভর করেছে রুক্ষতা। পদ্মা পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনজীবিকা আজ বিপন্ন। এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে এ অঞ্চলের মানুষ। শুধু ফারাক্কা নয় গজল ডোবাসহ অভিন্ন সব নদীকে পণবন্দী করে অসভ্য অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে। গোটা দেশের মানুষকে ধ্বংস করার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে ভারত। এমন ভয়াবহ অবস্থায় ভারতের তাঁবেদার সরকার তো বটেই, কথিত দলকানা পোষমানা সুশীলরা এ নিয়ে কথা বলতে চান না। পাছে যদি দাদা-দিদিরা নাখোশ হয়। আজ ফারাক্কা দিবস হলেও তাদের মুখে ‘রা’ নেই। তেমন কর্মসূচিও চোখে পড়ে না। বেশীর ভাগ মিডিয়ায় উপেক্ষিত দিনটি। কারণ একই। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দেশপ্রেমিক হাতেগোনা কটি গণমাধ্যম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দিনটির কথা। সচেতন বুদ্ধিজীবীরা ঘরোয়াভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে ইতি টানছেন। কী করবেন দলকানা পোষমানাদের সংখ্যা যে বেশী। আর তাই আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণে আসছে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথা। দেশের এই ক্রান্তিকালে তার মতো নেতার বড্ড প্রয়োজন। যিনি ভারতের এই পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে খামোশ বলে গর্জে উঠবেন। যার ডাকে সর্বস্তরের মানুষ ফারাক্কা লংমার্চের মতোই ছুটে আসবে।
গণজমায়েত আজ
এদিকে ফারাক্কা লংমার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফারাক্কা লংমার্চ উদযাপন কমিটি আজ রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পাড়ে আয়োজন করেছে বিশাল গণজমায়েতের। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ বক্তব্য রাখবেন। যার মধ্যে রয়েছেন Ñ ড. এস আই খান, সাবেক পানি ও পানি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আহ্বায়ক ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও প্রতিষ্ঠাতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রফেসর ড, জসিম উদ্দিন আহমদ সাবেক ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কবি ফরহাদ মজহার গবেষক ও পরিবেশবিদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকৌশলী এম ইনামুল হকসহ স্থানীয় পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।