পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিকেট কিনতে পদে পদে হয়রানী : ট্রেন যেনো শুধু ভিআইপিদের জন্যই : কম্পিউটার সিস্টেমের নামে প্রতারণা
বিশেষ সংবাদদাতা : কোঠা পদ্ধতির কারণে ট্রেনের টিকেট পাচ্ছে না সাধারণ যাত্রীরা। সাত সকালে টিকেট কাউন্টারে দাঁড়ালেও মেলেনা কাঙ্খিত টিকেট। বলা হয়, টিকেট শেষ। যা আছে সেগুলো বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষিত। এই সংরক্ষিত টিকেট শেষ পর্যন্ত কী হয় তার খবর কেউ রাখে না। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারগুলো এখন কোটা পদ্ধতির মধ্যে আটকে আছে। সাধারণ যাত্রীদের শীতাতপ বার্থ বা এসি চেয়ারের টিকেট পাওয়ার যেনো কোনো উপায় নেই। ভুক্তভোগিদের মতে, ট্রেন যেনো শুধু ভিআইপিদের জন্যই।
নির্ধারিত কোটা পদ্ধতিসহ নানান দোহাই দিয়ে টিকেট আটকে রাখা এবং বিকল্প পথে সেগুলো বিক্রি করায় কমলাপুরে টিকেট নিয়ে যাত্রীদের হয়রানী দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিটি কাউন্টারের বাইরে স্বচ্ছতার জন্য পৃথক স্ক্রিন বসানো হলেও যে সব টিকেটের চাহিদা বেশি সেগুলো ব্লক করে রাখা হয় মেইন সার্ভার থেকে। কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘সীট খালি নেই’। এভাবেই কম্পিউটার সিস্টেমেরে নামে সাধারণ যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে টিকেট কাউন্টারের কর্মচারীরা বলেন, আমরা উপরের নির্দেশে কাজ করি। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
ট্রেনের টিকেটের ক্ষেত্রে সরকারি কোটা পদ্ধতির কারণে রেলওয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অথবা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে যাওয়ার আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর শীতাতপ ও প্রথম শ্রেণির টিকেটগুলো সংরক্ষিত রাখা হয় কোটা পদ্ধতির দোহাই দিয়ে। ধরা যাক, ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেন তুর্ণা নিশিথার কথা। এই ট্রেনের দুটো এসি কোচে বার্থ আছে মোট ৩২টি। এর মধ্যে এমপি, বিচারপতি, সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, বিজিএমইএ এবং ইমারজেন্সি মিলে মোট কোটায় সংরক্ষিত ১৮টি আসন। বাকী ১৪টি টিকেটের মধ্যে অনলাইনে ছাড়া হয় ৮টি। কাউন্টারের জন্য থাকে মাত্র ৬টি। নির্ধারিত দিনের ৫ দিন আগে কাউন্টার খোলার কয়েক ঘন্টা আগে থেকে শত শত যাত্রী টিকেটে জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। দেখা যায়, প্রথম দুজনেই ৬টি টিকেট নিয়ে গেছে। বাকী শত শত যাত্রীকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। আলাপকালে কয়েকজন ভুক্তভোগি জানান, কাউন্টার থেকে ৬টি টিকেট যদি সত্যি সত্যি দেয়া হতো তাও কেউ না কেউ তা পেতো। প্রকৃতপক্ষে তাও দেয়া হয় না। শুরু থেকেই বলা হয়, এসি বার্থ নাই। ওগুলো কোটায় বরাদ্দকৃত। একজন ভুক্তভোগি বলেন, ভিআইপিদের জন্যই যদি এতো কোটা থাকবে তবে আমাদের জন্য কী? আমরা কি মানুষ না? ট্রেন কি তবে শুধু ভিআইপিদের জন্যই? রেলওয়ের পরিচালক (ট্রাফিক) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম বলেন, আসলে যাত্রীর চাহিদার তুলনায় আমাদের টিকেটের ক্যাপাসিটি কম। এর মধ্যে সরকার নির্ধারিত কোটার কারণে টিকেট দেয়াই সম্ভব হয় না। এখানে আমাদের কিছুই করার নাই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কোটাকে পুঁজি করে পকেট ভরছে কমলাপুরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমপির কোটার কথা বলে যে টিকেটগুলো অবিক্রিত রাখা হয়, সেগুলো ঠিকই পরে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। এ ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা বা নিয়ম না থাকার কারণে দুর্নীতিবাজরা এই সুযোগ নিচ্ছে। বরং এই কোটার দোহাই দিয়ে তারা কাউন্টারের টিকেটও আটকে রাখছে। কয়েকজন সাধারণ যাত্রী বলেন, যেখানে রেলওয়ের এতো সীমাবদ্ধতা, সেখানে এতো বেশি কোঠার প্রয়োজন কি ছিল? সাধারণ যাত্রীদের কথা চিন্তা করে এটাকে সঙ্কুচিত করা উচিত। তা না হলে যাত্রীরা হতাশ হতে হতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ট্রেনের আশা ছেড়ে দিতে বাধ্য। রেল সূত্র জানায়, নির্ধারিত এই কোটা পদ্ধতি রেলওয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সাপেবর হয়েছে। কমলাপুর স্টেশন মাস্টার ও স্টেশন ম্যানেজার এই কোটা পদ্ধতির বিশেষ সুবিধাভোগি। কারণ যেকোনো স্থান থেকেই সুপারিশ করা হোক না কেনো টিকেটের চাবি স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারের হাতে। তারা তাদের ইচ্ছামতো সেগুলো হ্যান্ডেল করেন। অনেক সময় উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই দু’জনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন।
গতকাল রোববার কমলাপুর কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা লম্বা লাইন অতিক্রম করে কাউন্টারে এসে যাত্রীরা টিকেট পাচ্ছে না। টিকেট চাইলেই স্কিনে ভেসে উঠছে, ‘সীট খালি নাই’। অথচ পাশেই দালালরা টিকেটের গ্যারান্টি দিয়ে নির্ধারিত মূল্যে চেয়ে ২/৩শ’ বেশি টাকার বিনিময়ে টিকেটের গ্যারান্টি দিচ্ছে। সিলেটের যাত্রী সেলিম জানান, তিনি প্রায় এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এসি চেয়ারের টিকেট পান নি। পাশে দাঁড়ানো দালাল দুশ’ টাকা অতিরিক্ত দাবি করার পর তিনি দেড়শ টাকা দিতে রাজি হন। এরপর ঠিকই সেই টিকেট পেয়ে গেছেন। কাউন্টারের এসব কারসাজির সাথে যারা পরিচিত তারাই শুধু বিষয়টা বোঝেন। একেবারে নতুন হলে বোঝার উপায় নাই। রেলওয়ের ফেসবুকের এক ফ্যান গতকাল কমলাপুর এসেছিলেন চট্টগ্রাম মেইলের টিকেট কিনতে। তিনি জানান, পুরনো সিস্টেমে চট্টগ্রাম মেইলের টিকেট নিতে এলে রিসিভশন থেকে বলা হয়, নাম লিখে রাখলাম, তিন দিন পর এসে টিকেট নিয়ে যাবেন। তিন দিন পর টিকেটের বিষয়ে গ্যারান্টি চাইলে কাউন্টারম্যান জানান, গ্যারান্টি নেই। নাম লিখে রেখেছি। আসার পর বুঝবেন। ওই যাত্রী বলেন, উপরি কিছু পাওয়ার জন্যই এই সিস্টেম। টাকা দিলেই টিকেট মেলে। না দিলে শেষ সময়ে বলা হয়, সরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।