পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.টি.এম. রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চোরাচালানী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে শাড়ি, থ্রী-পিচ, শার্ট ও প্যান্ট পিচ, থান কাপড়, জিরা, গুঁড়ো দুধ, মসলা, চকোলেট বিস্কুট ও ওষুধসহ নানাধরনের পণ্য সামগ্রী। খুলনার খানজাহান আলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে বিশাল চালানের সোয়া দুই কোটি টাকামূল্যের ভারতীয় কাপড় ও দ্রব্যসামগ্রী জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল রোববার রাতের এঘটনায় রূপসা থানায় মামলা হয়েছে।
জোনাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট বিএনএম ফরিদুজ্জামান খান জানান, রূপসা ব্রিজের টোলপ্লাজা এলাকা থেকে রোববার রাত ৪টার দিকে অবৈধ ভারতীয় ৩ হাজার পিচ শাড়ি, ৫৭টি থ্রি পিছ, ৪ হাজার ৫১০ মিটার থান কাপড়, ২৮ লাখ ৬০ হাজার পিছ বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, ৬ হাজার ৩০০ কেজি বিট লবণ জব্দ করা হয়। এসব অবৈধ ভারতীয় কাপড় খুলনা কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়েছে। যার বর্তমান প্রচলিত বাজার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম ফরিদুজ্জামান খান আরো জানান, সম্প্রতি খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় অবৈধ ভারতীয় পণ্যের চোরাচালানী বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকাসমূহে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক টহল জোরদার করা হয়েছে। কয়েকটি চক্র অবৈধ ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানী শুরু করেছে। তাদের প্রতিরোধে ও চোরাচালানী বন্ধে কোস্টগার্ডের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রমজান ও ঈদুল ফিতরের বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে কয়েকটি অসাধু চক্র অবৈধ পথে ভারতীয় কাপড় ও দ্রব্যসামগ্রীর মজুদ গড়ে তুলছে। তারা সড়ক ও নৌ-পথকে চোরাচালানীরা নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। খুলনার বড়বাজার, রেল স্টেশন, সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল ও গল্লামারী মোড়, দৌলতপুর, বটিয়াঘাটা উপজেলার জিরোপয়েন্ট এবং ডুমুরিয়া থানার কয়েকটি স্থানে সবচেয়ে বেশি চোরাই ভারতীয় পণ্য খালাস হয়। পুলিশকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারীরা তাদের অবৈধ ব্যবসা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। নগরীর বড় বাজারের মসলাপট্টি বা বেনেপট্টিতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জিরাসহ বিভিন্ন মসলা আসছে অবাধে। বিগত সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর জিরা ধরা পড়ার পরও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ম্যানেজ করে চলছে ভারতীয় মালামাল আনার মহোৎসব। বেনেপট্টিসহ বড়বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন অবাধে আসছে জিরাসহ বিভিন্ন চোরাই মালামাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে রমযান মাসের অনেক আগে থেকেই চোরাকারবারীরা ভারত থেকে মালামাল আনা শুরু করেছে। যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরাস্থল বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় বিভিন্ন ডিজাইনের মূল্যবান শাড়ি থ্রী-পিচ, শার্ট ও প্যান্ট পিচ, জিরা, মসলা, গুঁড়ো দুধ, চকোলেট বিস্কুট ও ওষুধসহ নানা পণ্য সামগ্রীর মজুদ গড়ে তুলেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চোরাচালানীরা প্রতিনিয়ত ভারতীয় পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে আনলেও ঈদ এবং পূজাকে সামনে রেখে এদের তৎপরতা বেড়ে যায়। খুলনার বড় বাজার চোরাচালানীদের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। খুলনার একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ চোরাচালানী ও খুনি এরশাদ শিকদারের দোসর দক্ষিণাঞ্চলের চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে এ অঞ্চলে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি আরও রয়েছে বেশকিছু চিহ্নিত চোরাকারবারী। যারা অবাধে চোরাচালানের সাথে যুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসব চোরাচালানীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা ধরে এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে জানায় একটি সূত্র।
সূত্র মতে, চোরাকারবারীদের কারণে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশীয় বস্ত্রের বাজার হারাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশিলাভের আশায় দেশীয় জামা কাপড় বিক্রির পরিবর্তে চোরাইপথে আসা ভারতীয় জামা কাপড় বিক্রি করছেন। ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে দেশীয় বস্ত্রের বাজার হারাচ্ছে শিল্প মালিকরা। আবার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও স্থল বন্দর এলাকার বিভিন্ন সেক্টরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিশাল বিশাল চালান পাচার করার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, কেএমপি’র সকল স্তরের পুলিশ চোরাচালানীদের ধরতে সবসময় কাজ করছে। চোরাকারবারী, মাদক ও অস্ত্র বিক্রেতাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। এদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হবে।
খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, খুলনার ২০/২২ জন চোরাচালানি পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। গেল বছর রোজার শুরুতে এদের ওপর নজর রাখা হলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোজায় পুলিশের এ অভিযান শুরুর অনেক আগেই তারা খুলনা ও আশপাশের এলাকায় ভারতীয় পণ্যের মজুত গড়ে তুলেছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।