পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আচমকা এক শ্বাসরোধকর বিমান ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা। বৈমানিক ও ক্রুদের বিচক্ষণতায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিৎ পদক্ষেপের ফলে বিমান জিম্মি করার ঘটনার দ্রুত অবসান হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনা কমান্ডোসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ। মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে কুপোকাত হয় অস্ত্রধারী। তার নাম মাহাদী বলে জানা গেছে। বয়স ২৫ থেকে ২৮ বছর। বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক সেই অস্ত্রধারী যুবকটিও পরে মারা গেছে। বিমানের ১৩৪ যাত্রী, ১৪ ক্রুসহ ১৪৮ জন আরোহীর সবাই নিরাপদে। এরফলে সারাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। বিমানটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই ছিল শেষ গন্তব্য।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজটি (বোয়িং-৭৩৭-৮০০) ঢাকা-চট্টগ্রামের মাঝ আকাশে থাকতেই হঠাৎ এক যাত্রীবেশী যুবক অস্ত্র এবং বোমাসদৃশ বস্তুর ভয় দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা চালায়। প্রথমে এক ক্রুকে ধাক্কা দিয়ে সে নিজেই বলে উঠে ‘আমি বিমান ছিনতাই করবো’। এ ঘটনা বিকেল ৫টা নাগাদ ঘটে মাঝ আকাশে বিমান ১৫ হাজার ফুটের কিছু বেশি উপরে থাকাবস্থায়। তৎক্ষণাৎ কেবিন ক্রু গোপন সংকেতের মাধ্যমে পাইলট ও কো-পাইলটকে অস্ত্রধারীর বিমান ছিনতাইয়ের অপচেষ্টার বিষয়টি জানিয়ে দেন। তখনই পাইলটদ্বয় ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন। পৌনে ৫টা ৩৩ মিনিটে বিমান জরুরি অবতরণ করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এর পরের ঘটনা ছিল একের পর এক নাটকীয়, শ্বাসরুদ্ধকর। ঘটনার খবর পেয়েই সেনাবাহিনীর চৌকস একটি প্যারা কমান্ডো দল বিমানবন্দরে গিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সাথে র্যাব-পুলিশ, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সোয়াত টিম, এপিবিএন এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মিলে সমন্বিত অভিযান এবং উদ্ধারের পুরো প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী দু’টি প্রকল্প উদ্বোধনে চট্টগ্রাম আগমন করেন। এ প্রেক্ষাপটে তার সফর শেষে কয়েক ঘণ্টা পরই উক্ত বিমান ছিনতাই চেষ্টা ও জিম্মি দশার ঘটনায় সবার মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করে।
এদিকে সফল অভিযান শেষে রাত পৌনে ৯টায় অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা দেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মতিউর রহমান। তিনি বলেন, মাত্র ৮ মিনিটের সফল অভিযানে জিম্মি দশার অবসান হয়েছে। আমাদের সাথে গোলাগুলিতে আহত অবস্থায় আটক অস্ত্রধারী কিছুক্ষণ পর মারা গেছে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযান পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তা লে. কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বে প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিমানবাহিনী, বিমান কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তিনি বলেন, জিম্মিকারী প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন এবং তার স্ত্রীর সাথেও কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা তার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে মানসিকভাবে ব্যস্ত রাখেন। আর অন্যদিকে চলে কমান্ডো অভিযান। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে, তবে কোন বোমা পাওয়া যায়নি।
পাইলটের সাহসিকতা, সেনা, প্যারা কমান্ডো অভিযানের তোড়জোড় এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের কৌশল ও দূরদর্শিতায় পন্ড হয়ে যায় বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা। সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়। পাইলটও নেমে যান নিরাপদে। আর এরমধ্যে দুইজন কেবিন ক্রুকে এক ঘণ্টার বেশি সময় জিম্মি করে রাখা হয়।
বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা যেভাবে নির্দেশনা পেয়েছি। সেভাবেই জানমালের রক্ষা করে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারীকে প্রতিহত করা হয়েছে। তার বিস্তারিত পরিচয় জানার চেষ্টাও চলছে। তবে বিমানের কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবাই সুস্থ রয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিমান বাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, হয়তো বা সে মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে। আমরা জানি না। তাকে আমরা মূলত কথা বলে ব্যস্ত রেখেছি। সে আমাদের কোন তথ্য দেয়নি। এমনকি স্ত্রীর সাথে কথা বলার দাবি করলেও তার মোবাইল নম্বরও দিতে পারেনি। তিনি বলেন, তার উদ্দেশ্য বের করার চেয়ে অভিযানের মাধ্যমে বিমান এবং যাত্রীদের নিরাপদ করাই ছিল আমাদের টার্গেট। অভিযানের পর বিমানটিতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে সেটিকে উড্ডয়নের জন্য রাতেই নিরাপদ ঘোষণা করা হয়। এরআগে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা ছিলেন সীমাহীন টেনশনে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিমানটি হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিল। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তবে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। সবাই অক্ষত রয়েছেন। বিমানেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি বোয়িং-৭৩৭-৮০০ মডেলের। ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রুসহ ১৪৮ জন আরোহী নিয়ে বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাচ্ছিল।
ক্রু ও যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ময়ূরপঙ্খী আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপরের দিকে উড়ে যাচ্ছিল। তখন উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনে থাকা এক ব্যক্তি উঠে ককপিটের দিকে আসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি এক ক্রুর কাছে যান। কাছে গিয়ে তিনি ওই ক্রুকে ধাক্কা দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি পিস্তল ও বোমাসদৃশ একটি বস্তু বের করে বলেন, আমি বিমানটি ছিনতাই করব। আমার কাছে পিস্তল ও বোমা আছে। ককপিট না খুললে ওই যাত্রী বিমান উড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। এরমধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তা দেন যে, উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। ঠিক এ সময় উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছিল।
এরমধ্যে পাইলট মোঃ শফি ও সহকারী পাইলট মোঃ জাহাঙ্গীর ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন এবং কৌশলে জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান। প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা বলেন, ককপিটের দরজা না খোলায় অস্ত্রধারী ব্যক্তিটি চিৎকার করছিলেন। ততক্ষণে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তবে ওই অস্ত্রধারী ফ্লাইট স্টুয়ার্ট সাগরকে একপর্যায়ে আটকে রাখেন। উড়োজাহাজ অবতরণের পর কৌশলে উড়োজাহাজের ডানার পাশের চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাত্রীরা নেমে পড়েন। উড়োজাহাজে থাকা এক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি নেমে আসা পর্যন্ত ক্রু সাগর ছাড়া ককপিটের ভেতরে তখন পর্যন্ত দুজন পাইলট ছিলেন।
বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর উড়োজাহাজটি থেকে গুলির শব্দও পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে দুবাইয়ের যাত্রীদের বিমানে আর তোলা হয়নি। বিমানে অস্ত্রধারী থাকার বিষয়টি পাইলটের কাছ থেকে জানতে পেরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উড়োজাহাজটি ঘিরে রাখেন। পুরো বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরে ছুটে যান। বিমানটিকে ঘিরে অবস্থান নেন কমান্ডো বাহিনী। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরাও ছুটে যান সেখানে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিমানবন্দরে অবস্থান নেন। মজুদ রাখা হয় একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেয়া হয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি। অচল হয়ে যায় পুরো বিমানবন্দর। বিকেল থেকে রাতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সব ধরনের বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্রধারী ককপিটে ঢুকতে না পেরে ক্রুদের জিম্মি করেন। যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে দেয়ার পর নেমে যান পাইলটও। শেষপর্যন্ত সেখানে দুই কেবিন ক্রুকে জিম্মি করা হয়। বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর কেবিন ক্রুদের মাধ্যমে ওই অস্ত্রধারীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। তাকে আত্মসমর্পণ করতে আহবান জানানো হয়। একপর্যায়ে ওই অস্ত্রধারী বিমানের আশপাশ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরিয়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়। কৌশল হিসাবে কিছুটা দূরে সরিয়ে নেয়া হয় বিমানটিকে ঘিরে রাখা অভিযানের জন্য প্রস্তুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর এ সুযোগে ভেতরে ঢুকে পড়েন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা। এরপর তাকে বিমানের ভেতর থেকে আটক করে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যদিয়ে জিম্মি দশার অবসান হয়। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ১৩৪ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরমধ্যে ৮৬ জন ছিলেন দুবাইগামী যাত্রী। বাকি ৬১ জন অভ্যন্তরীণ যাত্রী, তারা চট্টগ্রামে নামার কথা ছিল। আর চট্টগ্রাম থেকে দুবাইগামী বাকি যাত্রীদের ওঠার কথা ছিল। উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।