Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিকে অগ্নিঝুঁকির মধ্যেই চিকিৎসা

৪২৩টির মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে ১০৫, ঝুঁকিপূর্ণ ৩১১

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি প্রতিরোধে জলাধার, ভবনের ধারণ সক্ষমতা, হিট ডিটেক্টর, জরুরি নির্গমন সিড়ি ও পর্যাপ্ত লিফটসহ যেসব ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন তার অধিকাংশই নেই ঢাকা শহরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। বছরের পর বছর ধরে অব্যবস্থাপনার মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলা সত্তে¡ও কোন প্রতিকারের উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। 

নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য রাজধানীতে ৪২৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে অগ্নিকান্ডের খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ১০৫টি। এর মধ্যে ৩১১টি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অগ্নিঝুঁকির ক্ষেত্রে মাত্র ৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সন্তোষজনক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগুনের ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। আমরা সব হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখব। এছাড়া হাসপাতালগুলোর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তার ঠিক আছে কি না-তাও খতিয়ে দেখা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালই এ সতর্কবার্তা আমলে নেয়নি। রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করে ঝুঁঁকি নিরূপণ করে অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করার জন্য লিখিতভাবে অন্তত তিন দফা মন্ত্রণালয়েও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কার্যত খুব বিশেষ কোন অগ্রগতি হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বার বার সর্তক করা হলেও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অগ্নিনির্বাপনের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ৪২৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে ২০১৭ সালের শেষদিকে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিঝুঁকিতে থাকা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্নিঝুঁঁকি হ্্রাসে কিছু পরামর্শও দেয়া হয়। কিন্তু সেসব পরামর্শের কোনোটিই আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা।
উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় তিন ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। হাসপাতালে থাকা প্রায় এক হাজার ২০০ রোগীকে তাৎক্ষণিকভাকে বিভিন্ন হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমারকে প্রধান করে সাত সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন এখন সংসদে পাশ হয়নি। এটি সংসদে পাশ হলে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অগ্নিনির্বাপনের বিষয়টি দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তদারকির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস। ৪২৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে মাটির নিচের জলাধারের ধারণ ক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্থতা, স্মোক/হিট ডিটেক্টর, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়।
অগ্নিঝুঁকিতে থাকা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে, শমরিতা হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড, ধানমন্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লি. ও মেরিস্টোপ বাংলাদেশ।
ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার মধ্যে রয়েছে-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল। এছাড়া তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিঝুঁকির মধ্যেই চিকিৎসা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ