পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে ভিন্নমতাবলম্বী সউদী সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিহত হন। সিআইএ-র তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় যে, সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর থেকে বিশে^র অধিকাংশ দেশ তাকে পরিহার করে। সেই সাথে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। যেমন এ-তালিকার নির্বাহীরা তার রিয়াদ বিনিয়োগ ফোরাম (যাকে মরুভ‚মিতে দাভোস সম্মেলন বলা হয়) থেকে সরে যান, নভেম্বরে তিনি তিউনিসিয়া সফরে গেলে তার বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়, মরক্কো সফরে গেলে সে দেশের বাদশা ষষ্ঠ মোহাম্মদ তার সাথে সাক্ষাৎ করেননি। তবে এ সপ্তাহের প্রথমে তিনি পাকিস্তান সফরে গেলে এ রকম কিছু ঘটেনি। বরং দেশটি তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাবে ভ‚ষিত করে, তাকে স্বর্ণখচিত বন্দুক উপহার দেয় এবং দু’দিনের সফরকালে তার সম্মানে সোমবার ইসলামাবাদে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রোববার বলেন, সউদী আরব আমাদের সর্বসময়ের বন্ধু, সে কারণে আমরা এ বন্ধুত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সউদী আরবের কার্যত লিডার যুবরাজ পাকিস্তানের পেট্রোকেমিক্যাল, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও খনি প্রকল্পগুলোতে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
পাকিস্তানে এই বিস্ময়কর পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণার পাশাপাশি এমবিএস ইমরান খানের অনুরোধে সউদী আরবে কারাগারে আটক ২ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি বন্দিকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দর থেকে যুবরাজকে নিজে গাড়ি চালিয়ে নিজ সরকারি বাসভবনে নিয়ে আসা ইমরান খান পরে টুইটারে লেখেন, মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানিদের হৃদয় জয় করেছেন।
ইসলামাবাদে এমবিএসের এ সফরকে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তার ক্ষয়ে আসা আস্থা পুনরুদ্ধারের একটি চেষ্টা হিসেবেই ব্যাপকভাবে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের পর তিনি ভারত সফর শেষে চীন সফরে রয়েছেন। এমবিএস খাসোগি হত্যা বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ পাকিস্তানে সউদী বিনিয়োগ নিছক গণসংযোগ প্রচেষ্টার চেয়ে বেশিকিছু।
পাকিস্তানের সউদী সাহায্য প্রয়োজন কেন?
সউদী আরবের পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় অর্থ সহায়তা, ১৯৯০-এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অর্থ সাহায্য প্রদান, ২০১৪ সালে পাকিস্তানে রুপি বির্যয়ের পর ১৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান।
তবে সর্বশেষ বিনিয়োগের ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে যখন ইসলামাবাদ এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। দেশটি এখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। যে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পাকিস্তান দেশের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় তেল কেনে তার মজুদ ৮শ’ কোটি ডলারেরও কমে দাঁড়িয়েছে। গত আগস্টে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বন্ধু দেশগুলোর কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদনের পাশাপাশি জনপ্রিয় এ নেতা সরকারি পর্যায়ে ব্যাপক কৃচ্ছ্রতা অভিযান শুরু করেন।
এর পরিণতিতে তার সরকার গত অক্টোবরে ৩শ’ কোটি ডলার বিলম্বে পরিশোধ সাপেক্ষে ঋণসহ ৬শ’ কোটি ডলার সউদী অর্থ সাহায্য লাভ করে।
সউদী অর্থনৈতিক প্রণোদনা
হৃদয়-মন জয়ের লক্ষ্যে উদারভাবে ব্যয়ের জন্য ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত সউদী আরব আজ আর্থিক সীমাবদ্ধতার শিকার। দেশটির জন্য তার তেলনির্ভর অর্থনীতি বহুমুখী করা জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রিয়াস ক্রিয়েগ বলেন, ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে সউদীরা যে বদান্যতা প্রকাশে সক্ষম ছিল, সাম্প্রতিককালে আমরা তা দেখিনি এবং নিশ্চিতভাবে এমবিএসের সময়েও না। ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রæতি তারা শুধু পাকিস্তানকে পছন্দ করে বলে তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্যই শুধু দেয়নি, তাদের উদ্দেশ্য হল পাকিস্তানের স্থিতি এবং ভবিষ্যতে আসলে তার প্রতিদান পাওয়া নিশ্চিত করা।
প্রতিশ্রæত তহবিলের মধ্যে ৮শ’ কোটি ডলার ব্যয় হবে পাকিস্তান-চীন অর্থনৈতিক করিডোরের গোয়াদরে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণে। এখানে সউদী আরবের প্রতিবেশি ও মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতও বিনিয়োগ করেছে। চীন যখন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড মেগাপ্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক করিডোরে ৬২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তখন সউদী আরব পাকিস্তানে তার তেলের বাজারকে ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে চলেছে।
সউদী বিনিয়োগের আঞ্চলিক প্রভাব
লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের এসোসিয়েট ফেলো ফারজানা শেখ বলেন, ইমরান খানের সরকার সউদী ২০ বিলিয়ন বিনিয়োগের প্রতিশ্রæতিকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে এটা সেই জিনিস যার মধ্যে ঝুঁকি আছে।
তিনি বলেন, গোয়াদর বন্দরের অবস্থান পাকিস্তানের গোলযোগপূর্ণ বালুচিস্তান প্রদেশে। ইরানের একই প্রকার গোলযোগপূর্ণ সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের সাথে এর সীমান্ত রয়েছে। ১৩ ফেব্রæয়ারি সীমান্তের ইরানি অংশে হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ২৭ সদস্য নিহত হয়। একটি সুন্নি জঙ্গি গ্রæপ এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ইরান জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে এবং শিয়া ইরানের বিরুদ্ধে সুন্নি সহিংসতা লালনের জন্য সউদী আরবকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান এই গোলযোগপূর্ণ এলাকাকে এ অঞ্চলে সউদী ও ইরানি স্বার্থ এবং বিশে^র এ অঞ্চলে উভয়ের স্ব স্ব আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সউদী বিনিয়োগ ভারতের সাথে পাকিস্তানের সংঘাতকে আরো সম্প্রসারিত করতে পারে। ১৪ ফেব্রæয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পটভূমিতে এমবিএস মঙ্গলবার ভারত সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। ফারজানা শেখ বলেন, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গ্রæপ জইশে-মোহাম্মদ এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে যাতে কমপক্ষে ৪০ জন ভারতীয় আধা সামরিক পুলিশ নিহত হয়। গ্রæপটি সউদী আরবের উৎস থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করবে। কিন্তু নয়াদিল্লি তার শত্রæ দেশে সউদী আরবের বিপুল বিনিয়োগে উদ্বিগ্ন।
এমবিএসকে বহনকারী বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় পৌঁছনোর পর সেটিকে জঙ্গি বিমানের প্রহরায় নিয়ে আসা হয়। সৈন্যদের একটি দল তাকে ২১ বার গান স্যালুট প্রদান করে। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র আরব নিউজকে বলেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সউদী ভাইদের পাশে দাঁড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট গেøাবাল ফায়ারপাওয়ারের মতে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালী ২০টি সেনাবাহিনীর একটি। সে সাথে দেশটি বিশে^র ঘোষিত ৮টি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের একটি। অন্যদিকে গেøাবাল ফায়ারপাওয়ার পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের সামরিক বাহিনীকে বিশে^র চতুর্থ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বাহিনী বলেছে।
পাকিস্তান উপসাগরীয় দেশগুলো, বিশেষ করে সউদী আরবে সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। ক্রিয়েগ বলেন, এসব দেশ পাকিস্তানি সৈন্য ছাড়া চলতে পারে না। সউদী আরবে ৬৫ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আছে বলে ধারণা করা হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হলে বিশাল সামরিক যন্ত্র চালানোর মত আরেকটি জনশক্তির উৎস সউদী আরবের নেই।
অন্যদিকে গুজব আছে যে, সউদী আরব পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য পাকিস্তানকে আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছে। সিএনবিসি জানায়, যদিও রিয়াদ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশ থেকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জ¦ালানি উপমন্ত্রী বলেছেন যে, শুধুমাত্র বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে বলে নিশ্চয়তা ছাড়া ওয়াশিংটন পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়নে সউদী আরবকে সাহায্য করবে না। ক্রিয়েগ বলেন, এশিয়ায় অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরোপের সাথে রিয়াদ তার সামরিক সম্পদের সরবরাহ বহুমুখী করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ, তারা প্রযুক্তি সংগ্রহ করে যা সংগ্রহ করতে এ পর্যায়ে আর কেউ আগ্রহী হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।