Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনীতিকে বিশৃঙ্খল করতে পারে

নতুন ব্যাংক নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম

দেশের অর্থনীতির যে পরিসর, তাতে করে চলমান ব্যাংকগুলোই যথেষ্ট। নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই, এমনটিই মনে করেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি করা এক জরিপেও দেশের ৯৫ শতাংশ ব্যাংকারই বলেছেন, নতুন কোনো ব্যাংক প্রয়োজন নেই। এ খাতের বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশে নতুন কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশে ছোট দেশ হিসেবে ব্যাংক বেশি। ব্যাংকের সংখ্যা বরং কমিয়ে আনা দরকার। তাদের মতে, ভালোভাবে চলতে না পারলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে। এতে করে ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন বাহিনী ও শিল্প গ্রুপ তা মানতে নারাজ। তাদের পক্ষ থেকে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স চেয়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চলছে জোর লবিং-তদ্বির। এ পরিপ্রেক্ষিতেই গত রোবাবর নতুন করে আরো তিনটি বেসরকারি ব্যাংককে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার অর্থনৈতিক কোনো যুক্তি নেই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই অনুমোদনে ব্যাংকিং খাতে মঙ্গলজনক কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যাংকগুলোই ঋণ খেলাপিসহ নানা সমস্যায় ঠিকমতো চলতে পারছে না। এই অবস্থায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন এই খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। নতুন ব্যাংক না দিয়ে বরং পুরনো ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা দরকার ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেউদ্দিন আহমদ বলেন, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। বিশেষ করে সরকারের টানা তিন মেয়াদের প্রথম মেয়াদ দেওয়া ৯টি নতুন ব্যাংকের বেশিরভাগই কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। তারা জনগণের কোনো আস্থাও অর্জন করতে পারেনি। উল্টো ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় নানা ক্রটি দেখা গেছে। এই অবস্থায় নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, দেশের সিভিল সোসাইটি, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ সবাই নতুন ব্যাংক অনুমোদনের বিরোধিতা করেছে। এরপরও রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন দিলে কী করার আছে? তিনি বলেন, এসব ব্যাংক চালানো যে কত কষ্টকর, যারা ব্যাংক নিয়েছেন তারা বুঝবেন। অনেক ব্যাংককে সরকার টাকা দিয়ে রক্ষা করছে।
আবু আহমেদ বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। এতে করে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তিনি বলেন, অনেক ব্যাংক অনিয়ম করলে সরকার পাবলিকের কথা চিন্তা করে দায়টা কাঁধে নেয়। এতে করে যারা ব্যাংক লুট করে, তারা বেঁচে যায়।
উল্লেখ্য, গত রোববার বেসরকারি খাতে নতুন করে আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ। ব্যাংকগুলো হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক এবং সিটিজেন ব্যাংক। এর আগে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন ৩টি নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে ৪৪টি বেসরকারি, ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৯টি বিদেশি মালিকানার ব্যাংক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ৯টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। পরে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ নামের আরেকটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে বিশেষায়িত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বাণিজ্যিক লেনদেনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ