পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে ঃ জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষাসহ অরণ্যে আগুন দস্যুদের অপতৎপরতা ঠেকাতে এবার বন সন্নিহিত লোকালয় জুড়ে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে এই রেঞ্জের ভরাট হয়ে যাওয়া খালসহ মিঠা পানির মাছের খনি খ্যাত ছোট-বড় অর্ধশতাধিক বিলের অধিকাংশে খনন করা হবে এক বা একাধিক পুকুর।
পাশাপাশি আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে এসব নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে সব ধরনের সম্পদ আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকা অবস্থায় আগুন দস্যুদের অপতৎপরতা ঠেকাতে কড়া নজরদারীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের ইতিহাসে এক মাসের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গহীন অরণ্যে ৪ বার ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী দুর্ঘটনাস্থল পরির্দশনের পর পরই এসব কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত প্রকল্প তৈরি করে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মংলা উপজেলার বন সন্নিহিত লোকালয়ের চাঁদপাই রেঞ্জের বৈদ্যমারী থেকে শুরু করে কাটাকালী, বরুইতলা, জিউধরা, আমুরবুনিয়া, গুলিশাখালী, কলমতেজী ও ধানসাগর স্টেশন থেকে নাংলী টহল ফাঁড়ি পর্যন্ত ওয়াচ টাওয়ারসহ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা কবে। একই সাথে চাঁদপাই রেঞ্জের পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবৈধ উপায়ে মিঠা পানির মাছ চাষ ও আহরণ বন্ধে ছোট-বড় সব বিলের প্রতিটিতে খনন করা হবে এক বা একাধিক পুকুর। খনন করা এসব পুকুরের মাটি দিয়ে অবশিষ্ট বিল ভরাট কওে সেখানে ম্যানগ্রোভ প্রজাতীর বনায়ন করা হবে। যাতে করে সুন্দরবনে আর কোনো বিলের অস্তিত্ব না থাকে। বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীর চাহিদা মিটাবে খননকৃত ওইসব পুকুরের মিঠা পানি। একই সাথে খনন করা হবে ছোট-বড় খালগুলো। পবিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আসার পর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ এখন দ্রুত প্রকল্প তৈরি করতে কাজ শুরু করেছে। মাত্র এক মাসে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে ৪ দফা পরিকল্পিত অগ্নিকা-ের পর সংরক্ষিত এই বনকে নাশকতার আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে শুরু হয়েছে এ তোড়জোড়।
সুন্দরবনসহ উপকূলের অপরাধ জগতের হালনাগাদ খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক সূত্র বলছে, শুধু চাঁদপাই রেঞ্জেই রয়েছে ছোট-বড় ২৩টি মিঠা পানির মাছের বিল। এসব বিলে অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণকারীদের নাশকতার আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে একমাত্র বাদুরতলা বিলটি।
সূত্র জানিয়েছে, বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় বন সন্নিহিত চারজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিসহ কবির তালুকদার, বাঘ তেনজিন, শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারী, বাঘ জাকির, বাঘ মিলন, জাল মাসুম, জিয়ল ছগির, ডিলার মিলন, সুমন মেম্বরের মতো শাসকদলের প্রভাবশালীরা এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কথিত ইজারার নামে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের ৩৫টি বিলের কৈ, শিং, মাগুর, কাইনমাগুর, ফলইসহ বিভিন্ন প্রজাতি মিঠা পানির মাছ চাষ ও আহরণ করে থাকে। এজন্য তারা শুকনা মৌসুমে মাছের বিল ও জাল পাতার স্থান পরিষ্কার করতে পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৯০ এর দশকের শুরুতে চাঁদপাই এবং শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জে উপজেলার বন সন্নিহিত লোকালয়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভোলা নদী ও শাখা খালসমূহ ভরাট হয়ে যাবার কারণে সুন্দরবনের পাশের অংশে পলি পড়ে উঁচু হয়ে যায়। এ কারণে এই দু’টি রেঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বন মরে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ৩৫টি বিলের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে ওইসব বিল মিঠা পানি প্রজাতীর মাছের ভান্ডারে পরিণত হয়। সুন্দরবনের বিলে বৈধভাবে মিঠা পানির মাছ চাষ ও এককভাবে তা আহরণের কোনো সুযোগ না থাকায় শাসকদলের প্রভাবশালী ৫/৬টি গ্রুপ সুন্দরবনের অসাধু কর্মকর্তাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এসব বিল অবৈধ উপায়ে দখলে নিয়ে উচ্চমূল্যে তা আবার মৎস্য আড়ৎদার ও জেলেদের কাছে বিক্রি করে থাকে। গত ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র এক মাসে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনভুক্ত নাংলির পচাকোড়ালিয়া, টেংরা ও তুলাতলা বিলের মিঠা পানির মাছ আহরণ ও জাল পাতার স্থানসমূহ পরিষ্কার করতে দুর্বৃত্তরা গহীন বনে চার দফায় পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. আনু মোহাম্মদ বলেছেন, সরকারের নিস্ক্রিয়তা ও সুন্দরবনকে গুরুত্বহীনভাবে দেখার কারণেই সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। সরকারকে আমরা ১৫ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা অথবা সরকার প্রকাশ্যে আলোচনায় না আসে তাহলে আমরা ১৭ মে ঢাকাতে আন্দোলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। আর ২০ মে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গত শুক্রবার বিকালে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সুন্দরবন সন্নিহিত বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও যশোর আঞ্চলিক কমিটির প্রতিনিধি সভায় তিনি একথা বলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।