পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকার খালবিল, চারপাশের নদ-নদী খেয়ে ভূমিদস্যুরা এখন বেড়িবাঁধ খাওয়া শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাশহর রক্ষা বেড়িবাঁধের দুই হাজার একর জমি খেয়ে ফেলেছে (দখল) ভূমিদস্যুরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন ওই জমি প্রায় ১৫শ’ প্রভাবশালী ব্যক্তি দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ দখলে থাকা পাউবোর জমি উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিদের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি উদ্ধারে দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকা শহরের সমন্বিত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর বন্যা থেকে রক্ষার রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরাতন ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত নির্মিত এই বেড়িবাঁধের ৩২ কিলোমিটারের দু’পাশ দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। প্রায় ১৫শ’ প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মালিকানাধীন ওই জমি উদ্ধারে কয়েক দফা চেষ্টা করা হয়। জমি উদ্ধারে সর্বাত্মক সহায়তা চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠিও দেয়া হয়। কিন্তু পাউবো কোনো সহযোগিতা পায়নি। ফলে উদ্ধারও হয়নি বেদখলে থাকা জমি। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে প্রতিবছর উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় বেড়িবাঁধের অবৈধ দখলি জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাউবোর পাঁচ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে আছে। এসব জমি বেড়িবাঁধ, ছোট ছোট নদী ও জলাশয়ের অংশ। রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালী দখলদাররা এসব জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দখল করেছেন। বেদখলে থাকা জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। পাউবোর অধিগ্রহণ করা এসব জমি ভুয়াভাবে অবমুক্ত দেখিয়ে বিভিন্ন নামে রেকর্ড করা হয়। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাউবো ও স্থানীয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব জমি দখল করেন প্রভাবশালীরা। সম্প্রতি পাউবোর করা এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গত কয়েকদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে মাঠে নেমেছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো মাঠে নামেনি বলে জানা গেছে। তবে মন্ত্রণালয়ে থেকে বলা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা জেলা প্রশাসক ও যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা কাজ শুরু করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেছে বলে ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, জমি উদ্ধারের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের আগেই চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কোথাও কোথাও দখলকারীদের মামলার কারণে জমি উদ্ধারে সমস্যা হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে জমি উদ্ধারে সচেষ্ট রয়েছেন তারা।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়। তখন যমুনার পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অবশ্য এবার সেটি ১২ সেন্টিমিটার উঠে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন ঢাকা মহানগরীকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নব্বই দশকের শুরুতে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর পাদদেশ বাদামতলী-বাবুবাজার, সোয়ারীঘাট, রায়েরবাজার, বসিলা, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা, গাবতলী হয়ে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। ঢাকা শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বাঁধের উভয় পাশে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত দোকান, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, গরুর খামার, হাউজিং কোম্পানী, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বড় বড় শিল্প কারখানা। পাউবোর ১০টি অঞ্চলের অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫ একর। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৫ একর। প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণে সংরক্ষিত জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ৮৯৯ একর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দখলে থাকা এসব ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ তৈরি করে জায়গা দখলে নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছেন তারা। কোথাও কোথাও অন্যদের কাছে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তারা মামলা করে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এসব জমিও অবমুক্ত হচ্ছে না। এমনকি যেসব জমি নিয়ে মামলা নেই, সেসব জমি উদ্ধারেও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সহায়তা পাচ্ছে না তারা। এর পরও আইনি জটিলতা দূর করে সরকারি এসব জমি উদ্ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সচেষ্ট রয়েছে।
ডিসিকে পাঠানো প্রতিবেদন দেখা যায়, দখলদারদের অনেকেই ভূমি অফিস থেকে ভুয়া কাগজ তৈরি করে নিজেদের নামে জমির দলিলও করেছেন। অনেকেই আদালতে মামলা করায় পাউবোর উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে জমি উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা কাজে আসছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলার ডিসিদের কাছে চিঠি পাঠায় পাউবো। এর পরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাচ্ছে না তারা।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো বেড়িবাঁধের অবৈধ দখলদার ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হলেন- মোহাম্মদুপর বেরিবাঁধ এলাকার জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন দখলে ৩ দশমিক ৬৮৯ শতাংশ। মেসার্স এমকে খান টিআর অ্যান্ড স’মিল মালিক মো: মোশারফ হোসেন খানের দখলে ৬ দশমিক ৪২৮ শতাংশ। মো: রফিক মিয়া মৌজা রামচন্দ্রপুর ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। মেসার্স ওয়েলকাম টিআর অ্যান্ড স’মিলের মালিক মো: সাইফুল ইসলাম, তার দখলে ৪ দশমিক ৮২১ শতাংশ জমি। মেসার্স ওকে টিআর স’মিলের মালিক মো: বরকত মিয়া ৪ দশমিক ৮২২ শতাংশ দখল করেছেন। মো: দাউদ হোসেন, পিতা-মরহুম মো: আবুল হোসেন ৪৫৯ শতাংশ দখল করে টিনশেড স’মিল করা হয়, সিরাজ মিয়া দখলে ৫৫১ শতাংশ এর মধ্যে টিনশেড বাড়ি। মো: সিরাজ, পিতা-মরহুম আবুল হাসেম ২৭৫ শতাংশ দখল করে চা দোকান করেছেন। আন্তঃট্রাক চালক ইউনিয়ন দখল করেছে ৬৮৯ শতাংশ, মেসার্স জসিম অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ ৫৬৯ শতাংশ। মিসেস নাজমা বেগম, স্বামী-মো: আবুল কাশেম ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। খোকন মিয়া ২৩০ শতাংশ। মোহাম্মদ হোসেন, পিতা-মরহুম মো: হাফেজ ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ দখল নিয়েছেন। শহিদুল ইসলাম অবৈধ দখল নিয়েছেন ২৭৫ শতাংশ। ফয়সাল হোসেন, পিতা-ফারুক হোসেন ১৪৭ শতাংশসহ তারা সকলেই রামচন্দ্রপুর মৌজার জমি দখলে নিয়েছেন। মোহাম্মদপুর তিনমাথা এলাকার মো: হানিফ অ্যান্ড কোম্পানির মালিক হাজী মো: নান্নু মিয়া ৮ দশমিক ০৩৫ শতাংশ জমিতে ৭ম তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তবে তাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে অনেকবার, তাতেও কাজ হয়নি। হাজী মো: আবু হানিফ কোম্পানী গং পিতা-হাজী নান্নু মিয়া ২ দশমিক ৭৫৫ শতাংশ জমি অবৈধ দখলে নিয়েছেন। মেসার্স আনিসা অটোমোবইল ওয়ার্কশপের মালিক মো: নাসিম আহম্মেদ বুলু। তার দখলে ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: আবু সাঈদ ২ দশমিক ৬৬ শতাংশসহ অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজধানী মোহাম্মদপুরের বরাব মৌজার জমি দখল নিয়েছেন। মো: লোকমান হোসেন ভুইয়া গোড়ান চটবাড়ি লালটেক শাহআলী পাকা বাড়ী নির্মাণ করেছেন ৩৪৪ শতাংশ জমিতে। কৃষিবিদ নার্সারি বিক্রয় কেন্দ্র-১ কৃষিবিদ গার্ডেন সিটি চটবাড়ি মিরপুর ১ দশমিক ১৪৮ শতাংশসহ তিন শতাধিক ব্যক্তি গোড়ান চটবাড়ি মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। মেগা স্টিল সিস্টেম লি:-এর মালিক মো: কাওসার হোসেন, নবাবেরবাগ শাহ আলী থানা এলাকার ২ দশমিক ৮৭০ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। শাহিদা বেগম, স্বামী-আসলাম উদ্দিন নবাবেরবাগ এলাকায় ৬৮৯ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন। মো: এমদাদ বিশিল শাহআলী মৌজার ৬ দশমিক ১৮৯ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা সঠিকভাবে হয়নি। কারণ আমি দখল করেছি ঠিক, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিজের জন্য আবেদন করছি। তারা আমাকে এখনো কোনো চিঠি দেয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।