Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলো চীন

সমীক্ষার তুলনায় নির্মাণব্যয় ৭৩ শতাংশ বেশি, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ১৬৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে চীনের ঋণ দেয়ার কথা ছিল। এজন্য গত ৬ জানুয়ারি ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে ঋণ প্রস্তাব পাঠায় রেলওয়ে। কিন্তু সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তুলনায় নির্মাণব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় সেই ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে চীন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২১ জানুয়ারি ঋণ প্রস্তাব ফেরত দিয়ে রেলওয়েকে চিঠি দেয় চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কনস্যুলার। এতে বলা হয়, গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ নির্মাণে চীনের কাছে ঋণ সহায়তার আবেদন করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চায়না জিটুজি ঋণ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় সাজেশন তথা প্রেফারেন্সিয়াল এক্সপোর্ট বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) গ্রহণে আবেদন করে বাংলাদেশ পক্ষ। তবে চীনের পক্ষে এ আবেদন যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
কারণ হিসেবে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, চীনের পিবিসি ঋণের ক্ষেত্রে প্রণীত নতুন নীতিমালা গত বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে ঋণ আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিতে হবে, যার অন্যতম প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ নির্মাণে জমা দেওয়া সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পুরোনো। এতে রেলপথ নির্মাণ ব্যয় অনেক কম দেখানো হয়েছে। আর ঋণ আবেদনে প্রকল্পটির মোট বাজেট অনেক বেশি। এ পরিস্থিতিতে চীনের পক্ষে প্রকল্পটি মূল্যায়ন করা কঠিন। ফলে গত ৬ জানুয়ারির ঋণ প্রস্তাব উভয় পক্ষের জন্য মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে প্রকল্পটির সম্ভাব্য যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন ও ঋণ আবেদন করতে হবে, যাতে চীনের পক্ষে প্রকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়।
জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ১৬৩ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এটিকে ডাবল লাইন ডুয়েল গেজে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালে চীনকে প্রস্তাব দেয় সরকার। এতে সম্মত হয় চীন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস। এতে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার ঋণ দেবে চীন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে জয়দেবপুর- ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। রিজিওনাল কো-অপারেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টের (আরসিআইপি) রেল কমপোনেন্ট শিরোনামে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের অধীনে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এ সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে রেলপথের দৈর্ঘ্য দেখানো হয় ১৭৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার।
রেলপথটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯৪ কোটি ১০ লাখ ডলার বা সাত হাজার ৫২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার বা ছয় হাজার ২২ টাকা ৪০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল চীনের। আর সরকারের ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ প্রস্তাব অনুমোদন করে চীন সরকার। প্রকল্পটি চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত মাসে পাঠানো প্রস্তাবে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল আট হাজার ২৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটি নির্মাণব্যয় এরই মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৪১ কোটি ৬৮ লাখ বা ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত এই নির্মাণব্যয়ের কারণেই চীন তাদের ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দরপত্র ছাড়াই এই রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব পায় চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চীনের ঋণ সংগ্রহ করে দেবে এ শর্তে প্রকল্পটির ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক দর কষাকষির মাধ্যমে নির্মাণব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রকল্পব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। এতে রেলপথ নির্মাণব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে।
নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য বিদ্যমান রেলপথটির কিছু অংশ পুননির্মাণ করতে হবে। আবার প্রকল্পটিতে ছোট-বড় ২০৪টি সেতু নির্মাণ ছাড়াও সাতটি স্টেশন পুননির্মাণ, ১৪টি সংস্কার ও একটি স্টেশন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। ১৫টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে হবে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এসব কাজের অনেক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এসব কারণে ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ব্যস্ত রেলপথ। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট এবং উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা অভিমুখী সব যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন এ রেলপথে চলাচল করে। এ কারণে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর সেকশনে ট্রেন চলাচল ক্ষমতা এরই মধ্যে পূর্ণ হয়েছে। এ রেলপথে নতুন কোনো ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে না। এ কারণেই রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত করা দরকার।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে আন্ত:নগর ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে রাজশাহী সাড়ে ছয় ঘণ্টার বদলে চার ঘণ্টায়; ঢাকা থেকে খুলনা, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট ১০ ঘণ্টার বদলে আট ঘণ্টায় এবং ঢাকা থেকে রংপুর ও দিনাজপুর ৯ ঘণ্টার বদলে সাত ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে প্রকল্প প্রস্তবনায় উল্লেখ করা হয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ