দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
সততা,পরিশ্রম, পরোপকার, মানবসেবা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ধন্য হয়েছেন তিনি।অধ্যাবসায়, দ্বীন-মাজহাব তথা সুন্নিয়তের নিরলস খেদমত করে জীবনকে জনপ্রিয় করেছেনআল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)।তাঁর জানাযার মাঠে হাজার হাজার মুসল্লিদের সমাগম এ কথার বাস্তবতা সাক্ষ্য দেয়। বরেণ্য এ আলেমে দ্বীন মদিনাতুল আউলিয়া খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদস্থ ওয়াজেদীয়া এলাকায় ১৯৪০ সালে ধরণীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। সদা হাস্যোজ্জ্ব্যল, বিনয়ী, উদার, সহনশীল ও মানবিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ হুজুর ছিলেন একাধারে আলেমে দ্বীন, আমিরুল হুজ্জাজ, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, ইসলামি চিন্তাবিদ। যার পুরো জীবন হাজীদের খেদমতে এবং দুস্থ-অসহায় মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিল। তিনি সর্বপ্রথম হজ্ব পালন করেন ১৯৭৪ সালে। অতঃপর তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, এলমে দ্বীন তথা ধর্মীয় জ্ঞান বিতরণে তাঁর প্রজ্ঞা দেখে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রীত হয়ে তাঁকে ১৯৭৮-৭৯ সালে শহীদ সালাউদ্দীন নামক পানির জাহাজে করে যাওয়া বাংলাদেশী হজ্ব যাত্রীদের চীফ কো-অর্ডিনেটর বা প্রধান সমন্বয়ক তথা ‘আমিরুল হুজ্জাজের’ দায়িত্ব দিয়ে সৌদি আরব পাঠান। উল্লেখ্য, আজ থেকে ৪৫-৫০ বছর আগে বিমান যোগে হজ্বে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিলনা। একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ছিল পানির জাহাজে করে।৩/৪ হাজার হাজীর গ্রুপ লিডার তথা ‘আমিরুল হুজ্জাজ’ হিসেবে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদাকর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ৭৮ বছর হায়াতে তিনি ৪০/৪২ বারের মতো পবিত্র হজ্ব-ওমরাহ পালন করেন। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হাজ্বীদের সেবায় বাংলাদেশের অনন্য মডেল এ মহান ব্যক্তি বৃহত্তর পরিসরে আল্লাহর মেহমানদের আরো বৃহত্তর পরিসরে পরিচ্ছন্নভাবে খেদমত করার লক্ষে চট্টগ্রামে ১৯৯৬ সালে বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাহ আমানত হজ্ব কাফেলা’। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমৃত্যু চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ কাফেলাকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হজ্ব কাফেলায় পরিপূর্ণতা দান করে গেছেন তিনি। ইমামে আহলে সুন্নাত,গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আল্লামা সৈয়দ আজিজুল হক আলকাদেরি তথা শেরেবাংলা (রহ.) এর ইন্তেকালের পর অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ সিদ্দিকী (রহ.) সহ বরেণ্য ওলামাদের নিয়ে মুসলীম সমাজে সুন্নিয়তের হাল ধরেছিলেন। তিনি সারাদেশে ইসলামী সভা সম্মেলনে সুন্নিয়তের উচ্চকণ্ঠ তুলে ধরতেন।তিনি পার্থিব সুখ শান্তি বিশ্রাম দ্বীন ও মাজহাবের কল্যাণে ত্যাগ করেছেন।তাঁর বহু জ্বলন্ত কেরামাত দেখতে ও শুনতে পাওয়া যায়।বর্তমানে হুজুরের ওয়াজেদীয়া এলাকায় যেখানে মাজার শরীফ প্রতিষ্ঠা হয়েছে সে এলাকাটি ছিল একসময় জনমানবহীন অবহেলিত অনুন্নত এলাকা। একসময় দিনের বেলায়ও সেখানে মানুষ চলাচল করতে ভয় পেতো। আল্লাহুর এ অলী‘র জ্বলন্ত কেরমাত হল সে এলাকায় তাঁর মাজার শরীফ প্রতিষ্ঠা হওয়াতে বর্তমানে সেখানে গড়ে ওঠেছে, শাহ আমানত শাহী জামে মসজিদ। আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.) এর নামে মাদ্রসা ও এতিমখানা। এসব প্রতিষ্ঠান সেখানে প্রতিষ্ঠা হওয়ার ফলে সবচেয়ে মূল্যবান ও দামি এলাকায় পরিণত হয়েছে এ এলাকাটি। বর্তমানে হুজুরের মাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ভক্তদের পদচারণায় এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠছে।এ মহান বুজূর্গ ১৪ জানুয়ারী ২০১৭ ঈসায়ী শেষ রাতে মাওলায়ে হাকীকির সাক্ষাত লাভে ধন্য হন। তাঁর মাজার শরীফকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী কমপ্লেক্স গড়ার কাজ এগিয়ে চলছে। তাঁর ২য় বার্ষিক ওরশ শরীফ উপলক্ষে দু‘দিন ব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বিশাল এ ওরশ শরীফে দেশ বিদেশের বরেণ্য আলেমে দ্বীন, মন্ত্রী,মেয়রসহ উচ্চপদস্থ সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।ওরশ শরীফে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উপস্থিতি আশা করছেন এন্তেজামিয়া কমিটির চেয়ারম্যন শাহ আমানত হজ্ব কাফেলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল্লামা আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইয়াছিন। আসুন এ মহান বুজূর্গের ওরশ শরিফে উপস্থিত হয়ে আল্লাহ ও রাসূলের (দ.) রেজামন্দি হাসিল করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।