পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হলে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা কাটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যে ক্ষেত্রে আইনী বাদ্ধবাধকতা নেই সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত একটি হোটেলে ‘দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে শেয়ারবাজারের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিজনেস আওয়ার টুয়েন্টিফোর ডটকম যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভীর সভাপতিত্বে এবং ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন সান্নামাতের সঞ্চলনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেচক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী।
প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।
দেশে সুস্থ পুঁজিবাজার থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে এবং এ বিনিয়োগ কাঙ্খাতি পার্যায়ে থাকলে তা পুঁজিবাজারের গতি সঞ্চরে সহায়ক হবে উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন ভালো প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। ভালো কোম্পানি কেন আসতে চাই না, সেই প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
যে ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তিতে আইনী বদ্ধবাধকতা নেই, সে ক্ষেত্রে সমঝোতাই একমাত্র পন্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভালো কোম্পানি আনতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিরবিচ্ছন্ন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ভালো কোম্পানিকে ভালো প্রিমিয়াম দেয়া যেতে পারে। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যে প্রাইসিং হচ্ছে তা অনেক ক্ষেত্রেই যথার্থ না। এ জন্য বিএসইসিকে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে- যোগ করেন সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।
বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এক দশক পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। অর্থাৎ এক দশকে বেসরকারি বিনিয়াগ মাত্র দুই শতাংশের মতো বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দুর করা গেলে তা শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে এবং অর্থমন্ত্রী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এমনকি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করে দীর্ঘ স্থায়ী স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে কাজ করছি। আইন মেনেই আমরা আইপিও অনুমোদন করি। কোন কোম্পানি শেয়ার দাম ধরে রাখতে পারছে, আবার কেউ পারছে না। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু থাকে না। আইপিও’র আগে আমরা কোম্পানি পরিদর্শন করি না, পরিদর্শন করে স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্চেন্ট ব্যাংক।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে মানসম্পন্ন আইপিও আনার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আইপিও অনুমোদনের জন্য আবেদন করা কোম্পানির কাছ ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও অনেক কোম্পানি নয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোন উত্তর দিচ্ছে না। এতে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন আটকে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আইপিও আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হয়। এমনকি কোম্পানি লোকসান করলেও সুদ পরিশোধ করতেই হবে। কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে অর্থ নিলে কোম্পানিকে কোন সুদ দিতে হয় না। শুধু বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিলেই হয়। তাও কোন কোন বছর না দিলেও চলে। এরপরও খুবই নগন্য একটি অংশ পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। সবাই ছুটছে ব্যাংকে।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত হলে সব থেকে বড় সুবিধা পাওয়া যায় কর্পোরেট ট্যাক্সে। এতো বড় সুবিধা পাওয়ার পরও আমাদের কোম্পানিএ সুযোগ নিচ্ছে না। এর কারণ হলো আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্সের কথা বলা আছে, কিন্তু এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা কেউ ক্ষতিয়ে দেখে না।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে ভালো কোম্পানির বিকল্প নেই। গত ৮-১০ বছরে হাতে গোনা দুই-একটি ছাড়া ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি।
শাকিল রিজভী বলেন, ভালো কোম্পানির জন্য দুই-তিন বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। ভালো কোম্পানি আনতে যে যে সুবিধা দেয়া যায় দিতে হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল বলেন, যদি কোন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার ওপরে হয়, তাহলে ওই কোম্পানিকে ঋণ নিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাদ্ধবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।