Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আ’লীগের কাউন্সিল - উৎকণ্ঠা বাড়ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের

প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : দলের নেতাকর্মীদের বহুল আকাক্সিক্ষত কাউন্সিলের সময় বাকী আর মাত্র এক মাস। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীরা সজাগ হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েক মাস আগ থেকেই। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীরা ততোই উজ্জীবিত হচ্ছেন। বর্তমানে তা নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ এনে দিয়েছে। একদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ, অন্যদিকে কাউন্সিলের প্রস্তুতি। রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলটির সভাপতির কার্যালয়ে এখন উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজনৈতিক এই কার্যালয় প্রাঙ্গণে। অন্যদিকে, দলের ২০তম কাউন্সিল যতই ঘনিয়ে আসছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। দলের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের ভোটে পদ-পদবী নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছা বা নির্দেশের বাইরে কিছুই হবে না। সঙ্গত কারণে পদ-পদবীর আশা-নিরাশার দোলাচলে কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মধ্যে যারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা মোকাবিলায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হননি; যারা বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত এবং যাদের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক নেই- তারা বর্তমান পদটি ধরে রাখতে পারবেন কি-না তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এইসব কেন্দ্রীয় নেতারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার বর্তমান পদটি হারাতে হবে। আর যারা সবকিছু সঠিকভাবে পালন করেছেন, তাদের পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী ১০ এবং ১১ জুলাই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাউন্সিলকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি।
ইতোমধ্যেই কাউন্সিল সফলে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোকে নিয়ে এগারটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে স্ব-স্ব বিভাগের অভিজ্ঞদের। এগার উপকমিটিতে চারশ’র মতো সদস্য রয়েছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা উপ কমিটিগুলোর সম্মিলিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠকে বসছে এসব উপ-কমিটি। বৈঠকে কাউন্সিলের নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে এবং তা গণমাধ্যমকেও নিয়মিত জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কাউন্সিল উপলক্ষে সভাপতির কার্যালয় ঘিরে গণমাধ্যমকর্মীদেরও কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। একই দিন একাধিক উপকমিটিরও বৈঠক বসছে। উৎসাহী নেতাদের কেউ কেউ আবার ভূরিভোজেরও আয়োজন করছেন।
এসব কর্মকা-ে অংশ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরাও বর্তমানে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। প্রতিদিনই চলছে তাদের মহড়া। পদ প্রত্যাশী নেতারা আসছেন বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে। কর্মীরা আসছেন নেতাদের ছায়াসঙ্গী হয়ে। কাউন্সিলের পর দলে জায়গা পেতেই এমন মহড়া। সব মিলে ধানমন্ডির এই কার্যালয়টিতে চলছে ধুম রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কাছে অনেকটা কমগুরুত্ব পাওয়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও বর্তমানে সরগরম হয়ে উঠেছে। দিনের শেষ ভাগ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে হাজারও নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই পুরো এলাকা ঝাঁ-চকচকে গাড়ীতে ভরে উঠে। শত শত মোটর সাইকেল ও নেতাকর্মীদের ভিরে সেখানে দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কথা হয় দলটির প্রচার উপকমিটির সদস্য আমেনা কোহিনূরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মানেই বিশেষ আয়োজন। ঐতিহ্যবাহী এ দলের প্রতিটি কাউন্সিলই বিশেষ বার্তা দিয়েছে জাতিকে। এবারও তাই ঘটবে।

কাউন্সিলের প্রস্তুতি কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রতিদিন কার্যালয়ে কাজ করছেন দফতর উপ পরিষদের সদস্য আহম্মদ আলী মোল্লা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। মোল্লা বলেন, নিজ দায় থেকেই এখানে আসছি। নেতারা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এতে দলের প্রতি নিজের দায়িত্ব অনুভব করছি। বড় দলের কাউন্সিল। আয়োজনও বড়। এ কারণেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা সারোয়ার হোসেন শাহীন বলেন, মাসে দু’একবার রাজধানী ঢাকায় আসি। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমন্ডিতে আসি। এখানে না আসলে সবকিছু অপূর্ণতা রয়ে যায়। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে কার্যালয়টি উৎসবমুখর মনে হয়।
এদিকে, গত ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউপি নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ১০ ও ১১ জুলাই এ কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। কাউন্সিল উপলক্ষে ইতোমধ্যে অভ্যর্থনা উপ-কমিটি, অর্থ উপ-কমিটি, ঘোষণাপত্র উপ-কমিটি গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি, খাদ্য উপ-কমিটি, সাজসজ্জা উপ-কমিটিসহ মোট ১১ টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিগুলোও একের পর এক বৈঠক করে নিজ নিজ দায়িত্ব গুছিয়ে নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা যার যার দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেননি। অথচ বঙ্গবন্ধুর এ দলে রাজনীতি করতে চান মাথায় হাত বুলিয়ে। অন্তত পক্ষে তাদের জন্য বিপদ আসবেই। আওয়ামী লীগ তেল দেয়া রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে দলটি বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করার পর দুই দফায় সরকার গঠন করে দলটি। এ সুযোগে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই ধরাকে সরাজ্ঞান করেন। এমনকি এদের অনেককে এক এগারোয় সংস্কারপন্থী হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিবর্তে তিরস্কারই জুটবে। আর যারা দলের দুঃসময়ে কাজ করেছেন, ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের দলের জন্য উৎসর্গ করেছেন, তাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) পুরস্কৃত করবেন বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব আসবেন। আর তাই যারা ডাকসাইটের নেতা বলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের কর্মকা- সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এদের মধ্যে অনেকেই পদ-পদবীর নাম ভাঙিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তাদের জন্য কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দুঃসংবাদ আসছে। তাই তারা উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলেও মনে করেন তারা।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এক সভাপতিম-লীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের ত্যাগী নেতারা স্থান পাবেন। এখানে সততা, মেধা ও যোগ্যতা বেশি বিবেচনায় নেয়া হবে। তিনি তরুণ বা প্রবীণ হতে পারেন; দুইয়ের সমন্বয়েই পদ-পদবী দেয়া হবে। তবে তরুণদের প্রাধান্য বেশি দেয়া হতে পারে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। যার কারণে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই আশঙ্কায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, যারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা মোকাবিলায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি, পদ ভাঙিয়ে এমন কোনো কাজ নেই, যা করেননি। তারা বর্তমান পদটি ধরে রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে নিজেরাই সন্দিহান রয়েছেন। তাই এখানে কারও পদোন্নতি বা পদাবনতি হতে পারে। দলকে ভালোবেসে যারা সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন, সেইসব নেতারা যোগ্য স্থান পাবেন বলেও মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমান কমিটি থেকে একেবারে বাদ পড়ার সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছেন ৭ থেকে ৮ জন। এরমধ্যে সভাপতিম-লীর ৩ জন, সম্পাদকম-লীর ৩জন ও কেন্দ্রীয় সদস্য ২জন এ তালিকায় রয়েছেন। তবে পদ-পদবীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন-পুরোনোদের পদোন্নতি বা পদাবনতি করে সেখানে রাখা হতে পারে। তবে নতুন কেন্দ্রীয় সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগ থাকবেন সাবেক ছাত্র নেতারা। এছাড়াও নারী নেতৃত্ব আরও বাড়ানোয় তারা নতুন পদে আসীন হবে বলেও জানা গেছে।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, কাউন্সিলে বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি পদ যেহেতু বাড়ানো হবে, সে জন্য রদবদল কিছু হতেই পারে। আর নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া হবে তা দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আগেই বলে রেখেছেন। যারা দলের জন্য কাজ করেননি তারা হতাশ হবেন, এটা স্বাভাবিক বলেও মনে করেন তিনি।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, কাউন্সিলে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ-পদবি দেয়া হবে। যাদের দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে তারাই নতুন কমিটি থাকবেন। আর যারা দলের জন্য তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি তারা তো ঝরে পড়বেন। এখানে কারও উদ্বেগ বা উৎকন্ঠায় থাকার কোনো কারণ নেই বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ’লীগের কাউন্সিল - উৎকণ্ঠা বাড়ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ