Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে আজ থেকে বিশেষ অভিযান

প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উমর ফারুক আলহাদী : রাজধানীতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। রমজান মাসকে সামনে রেখে এ বিশেষ অভিযান চলবে টানা দুই মাস পর্যন্ত। প্রয়োজনে মেয়াদ আরো বাড়ানো হতে পারে। জঙ্গি দমন, নাশকতা প্রতিরোধ এবং তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে এ সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র একাধিক কর্মকর্তা। এর আগে রাজধানীর সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ উদ্যোগ নেয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেন্ট্রাল ডাটাবেজ সেন্টারে প্রত্যেক সন্ত্রাসীর জীবনবৃত্তান্তসহ সামগ্রিক তথ্যই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তালিকায় দাগিসহ কয়েক শ্রেণীর সন্ত্রাসী রয়েছে। এসব অপরাধীর অপরাধের কৌশলও ভিন্ন ভিন্ন। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
পুলিশ জানায়, সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সন্ত্রাসীদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংবলিত ফাইল তৈরী করা হয়েছে। সন্ত্রাসীর নাম ক্লিক করলেই ডাটাবেজের সফটওয়্যার তার সব তথ্য বলে দেবে। যদি কোনো সন্ত্রাসী তার পরিচয় পাল্টিয়ে পুলিশকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে তাতেও কোনো লাভ হবে না। বিশেষ করে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রসীরা কোনো কৌশলেই পার পাবে না। কারণ, একবার গ্রেফতার হলেই ডিজিটাল ডাটাবেজে চিরকালের জন্য তার তথ্যাদি সংরক্ষিত থাকবে। তাছাড়া প্রতিটি থানাকেই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলেই তার সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর মামলা-জিডিসহ সব ধরনের অভিযোগের নথি উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠান হয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীদের মধ্যে যাদের বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ আছে, তাদের তালিকা করার বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বনের কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আসন্ন পবিত্র শব-ই-বরাত ও মাহে রমজানে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নাগরিকদের চলাচলকে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ পুলিশি অভিযান। তিনি আরো বলেন, অপরাধীদের জীবনবৃত্তান্ত পুলিশের সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত হচ্ছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রমজান মাসে মার্কেটগুলোতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি ও ইভটিজিং-এর মতো অপতৎপরতা ঠেকানোর জন্য এবার থাকছে পূর্বপরিকল্পনা ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। এ অভিযানে সকল ধরনের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেফতার, মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা, গ্রেফতারী পরেয়ানা তামিল, তদন্তাধীন মামলার আসামী গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বস্তি, মেস ও আবাসিক হোটেল ব্লকরেইড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, চুরি, দস্যুতা, ডাকাতি, মারামারি, শুটিং ইনসিডেন্ট, খুন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির অপতৎপরতা ঠেকাতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপ-পুলিশ কমিশনার ও থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালাবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার (ডিবি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করতে এবারই বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রযুক্তির কাছে কারো কোনো কিছু গোপন করার সুযোগ থাকবে না। সেন্ট্রাল ডাটাবেজে প্রত্যেক এলাকার সন্ত্রাসীর জীবনবৃত্তান্ত ফাইল থাকবে। আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এবার নতুন ফর্মুলায় তালিকা তৈরি করছি। এতে প্রযুক্তি জানা দক্ষ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, কারাবন্দী সকল অপরাধীর জীবনবৃত্তান্তসহ তাদের অপরাধের ধরন ও কর্মকা- ডাটাবেজ করা হয়েছে। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে তারা গ্রেফতার হলেই সকল তথ্য সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। এতে অপরাধ অনেক কমে আসবে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, সশস্ত্র ছিনতাইসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তাদেরসহ দাগি ও পলাতক সন্ত্রাসীদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা হত্যা মামলার নির্দেশদাতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি সৃষ্টির সাথে জড়িত, টেন্ডারবাজি নিয়ে গুলি এবং খুন, বিভিন্ন সড়কে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি, মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি এবং নিয়মিত লোক পাঠিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে যাদের বিরুদ্ধে এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে রাজধানীর সব কয়টি থানা এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আগে পুরনো মামলার রেফারেন্স নিতে গোডাউনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। এখন কয়েকটি ক্লিকেই মামলার সকল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কয়েক মিনিটে। মামলা পরিচালনা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই তথ্যভা-ার তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কাজের গতি বাড়াতে সক্ষম হবে।
পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন বিভাগ সূত্র জানায়, কাজের গতি বাড়াতে ২০১০ সালে পুলিশের এই ডাটাবেজের কাজ শুরু করা হয়। এর আগে ছোট পরিসরে এর নাম ছিল ভিলেজ ক্রাইম নোটবুক (ভিসিএনবি)। ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে দায়ের হওয়া সকল মামলার নথিপত্র এই ডাটাবেজে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে বিগত ৭ বছরে প্রায় ১৫ লাখ মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এই ডাটাবেজে। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তেই এই ডাটাবেজ হালনাগাদ (আপডেট) হচ্ছে। এ কাজের জন্য পুলিশ সদর দফতর ছাড়াও সারাদেশে মেট্রোপলিটন, জেলা ও থানাগুলোতে রয়েছেন প্রশিক্ষিত অপারেটর। যাদের কাজই হচ্ছে প্রতিদিনের মামলাগুলো ক্রাইম ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা। অনেক জেলায় ২০০৫ সালের আগের মামলাগুলোও নথিভুক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া জঙ্গিবাদের ঘটনায় ডাটাবেজে ২৭৮টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হিসেবে দুই হাজার ৭৩ জন জঙ্গির নাম রয়েছে। জঙ্গিদের ছবিসহ পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত ও কার বিরুদ্ধে কতটি মামলা সেটাও রয়েছে। ওই ডাটাবেজ শুধু পুলিশের হাতে নয়, র‌্যাবের কাছেও রয়েছে।



 

Show all comments
  • Mukul Sarker ১৪ মে, ২০১৬, ১১:৪৮ এএম says : 0
    অভিজানের খবর অাগে প্রচার করে সন্ত্রাসীেদর সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীতে আজ থেকে বিশেষ অভিযান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ