পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : বর্ষা দ্বারপ্রান্তে। এরপরও ফারাক্কা বাঁধ গড়িয়ে পানি আসছে না; মিলছে না গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা। ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হয়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগির যে সূচনা ঘটেছিল ১ জানুয়ারি, আর ১৬ দিন পরেই আগামী ৩১ মে তা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম দশ দিনে ভারত বাংলাদেশকে দিয়েছে মাত্র ১৬ হাজার ৬৪৮ কিউসেক পানি। আর গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ওই দশদিনে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি। যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন রেকর্ড। পানির এই দূরাবস্থায় গোটা পদ্মা অববাহিকাজুড়ে চলছে হাহাকার।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে না আসা পর্যন্ত ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। পরবর্তিতে বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে দশ (২১ এপ্রিল ১৯৭৫ থেকে ২১ মে ১৯৭৫) দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা হতে ৩১০ থেকে ৪৫০ কিউসেক পর্যন্ত পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত গঙ্গা নদী হতে ১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে পশ্চিমবঙ্গের ভাগরথি-হুগলি নদীতে প্রবাহিত করে। এরপর থেকে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
ভারতকে পানি অপসারণে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ এই বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে। ২৬ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ভারতকে বাংলাদেশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টির সুরাহার করার নির্দেশ দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কয়েকবার বৈঠকের পর উভয় দেশ ৫ নভেম্বর ১৯৭৭ সালে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত পরবর্তি পাঁচ বছরের (১৯৭৮-৮২) জন্য শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি ভাগ করে নেবে। ১৯৮২ এর অক্টোবরে উভয় দেশ ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে পানি বণ্টনের আরেকটি চুক্তি করে। নভেম্বর ১৯৮৫ সালে আরও তিন (১৯৮৬-৮৮) বছরের জন্য পানি বণ্টনের চুক্তি হয়। কিন্তু একটি দীর্ঘ চুক্তির অভাবে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উনয়নের জন্য গঙ্গার পানি ব্যবহারে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
কোনো চুক্তি না থাকায় ১৯৮৯ সালের শুষ্ক মৌসুম থেকে ভারত একতরফা প্রচুর পরিমাণ পানি গঙ্গা থেকে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি প্রবাহের চরম অবনতি ঘটে। ১৯৯২ সালের মে মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারত বাংলাদেশকে সমান পরিমাণ পানি দেবার ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল কিছু করবে। এরপর দুই দেশের মধ্যে কোন মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে বৈঠক বসেনি।
১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই করেন।
এদিকে, গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হলেও সে মোতাবেক পানি জুটছে না বাংলাদেশের ভাগ্যে। এতে করে দেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মায় আজ পানি নেই। ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধশত নদী বিলুপ্তির পথে। অন্য দিকে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে স্থানভেদে ২৫ ফুট থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
অপরদিকে, গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির প্রায় ১৯ বছর হতে চলল তবুও পানি বণ্টন চুক্তি রিভিউ করা হয়নি। চুক্তি মতে ফারাক্কায় যে পানি জমছে তাই ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গা নদীর পুরো পানির ভাগাভাগির প্রসঙ্গ চুক্তিতে উল্লেখ নেই। তাই পদ্মা নদীতে চুক্তির পানি দিয়ে চাহিদার অর্ধেকও পূরণ হচ্ছে না। আবার ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল মোতাবেক বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দেয়ার কথা, তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জেআরসি’র তথ্যানুযায়ী, গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ওই দশদিনে ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে। যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানির রেকর্ড। আর ১ থেকে ১০ মে পর্যন্ত পেয়েছে ১৬ হাজার ৬৪৮ কিউসেক পানি। ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে ১১ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই দশদিনে ফারাক্কা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন পানি পাওয়ার রেকর্ড ছিল ১৭ হাজার ৫১৯ কিউসেক। ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার পানি আটকে রাখায় পদ্মা অববাহিকার সকল নদ-নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে।
এ ব্যপারে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এবছর অনেক খরা গেছে। ফলে গঙ্গায় পানির প্রবাহ কম ছিল। যেটুকু পানির ফারাক্কা পয়েন্টে জমেছে, তাই উভয় দেশ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এরপরও আমরা পানি কম পাওয়ার বিষয়টি ভারতকে জানিয়েছি।
তবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের সহযোগিতার কারণে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পানি নিয়ে তারা যা করছে এটি বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ নয়। পাকিস্তান আগে গুলি করে আমাদের মারতো, আর ভারত এখন পানি না দিয়ে আমাদের মারবে; সেটি তো মেনে নেয়া যায় না। তিনি গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা চুক্তি দ্রুত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।