পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশ ও জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনায় প্রথম প্রয়োজন ‘সুন্দর স্বপ্ন’। দ্বিতীয়ত ‘স্বপ্নময় পরিকল্পনা’। তৃতীয় ও শেষ ধাপে ‘স্বপ্নের পরিকল্পনার সময়োচিত সার্থক রূপায়ন’ অর্থাৎ ‘সফল বাস্তবায়ন’। জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ সেই তিনটি ‘প্রয়োজন’ মন-মগজে ধারণ এবং বাস্তব কাজে-কর্মে দেখিয়ে দিয়েই আজকের বিশ্বে উন্নতির আকাশ ছুঁয়েছে। তাই বলে বাংলাদেশ কী পেছনের কাতারে পড়ে থাকবে? দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। যার উজ্জ্বল নজির দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। বৃহত্তর চট্টগ্রামের উত্তরে মীরসরাই থেকে বন্দরনগরী হয়ে দক্ষিণে আনোয়ারা থেকে পূর্বে কক্সবাজার-বান্দরবান পর্যন্ত সরকারের গৃহীত বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের জোয়ার চলছে। দেখলে মনে হবে এ এক অন্য বাংলাদেশ! চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০টি মেগাপ্রকল্প ও মাঝারি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। আর বছর তিনেক পর চট্টগ্রামকে চেনা যাবে না।
দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগে বৃহৎ অবকাঠোমো সুবিধা গড়ে তোলাসহ বহুমাত্রিক উন্নয়নের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত সরকারের মেয়াদে সফল পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নিজের গড়া স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। অর্থনীতিবিদগণ ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, বঙ্গোপসাগরের কোলে, নদ-নদী, পাহাড়-সমতল, উপত্যকা, বন-জঙ্গল ঘেরা চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক অবস্থানটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং অপার সম্ভাবনার ধারক। পটেনশিয়াল এই জনপদকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সোপান হিসেবে কাজে লাগাতে চায় সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা ব্যবসায়ী, শিল্প গ্রুপগুলো আকৃষ্ট হয়েছে। এরফলে নিবিড় ও ব্যাপকভিত্তিক উন্নয়নের ধারায় সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম। আগামী দশ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামই হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন রাজধানী। ঢাকা যেমন প্রশাসনিক রাজধানী, চট্টগ্রাম যেমন বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দরনগরী, তেমনি চট্টগ্রামের খ্যাতির পালকে নতুন তকমা যোগ হবে অর্থনীতির নতুন রাজধানীরূপে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, সারাদেশে উন্নয়নের যে জোয়ার শুরু হয়েছে তা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি কেন্দ্র, বে-টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ ও কর্ণফুলী টানেল যুক্ত হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের চলমান বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হলে ২০২১-২২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারীর পর রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন নির্মাণ এবং এর পাশাপাশি মহাসড়ক প্রসারিত হলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন-ভারত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘কুনমিং ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তব রূপ লাভ করবে। আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে দাঁড়াবে চট্টগ্রাম। এরফলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ‘হাব’-এ (কেন্দ্রবিন্দু) পরিণত হবে চট্টগ্রাম। সরকার সারাদেশে একশ’টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক জোন ও স্পেশাল অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। এসব অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়নের সাথে সাথে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। কেননা বাণিজ্য ও শিল্পায়ন দেশের অর্থনীতির প্রধান অনুষঙ্গ।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন প্রধান মেগাপ্রকল্প, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ট্রান্স এশিয়ান রেলসংযোগের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম ডুয়েল গেজ রেললাইন, ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রুট’ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চীনের কুনমিন পর্যন্ত মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল, বন্দরসীমা মহেশখালীর বহির্নোঙর পর্যন্ত বর্ধিতকরণ, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, মীরসরাই অর্থনৈতিক জোন, আনোয়ারা চীনা অর্থনৈতিক জোন, কর্ণফুলী নদীতীরে লাখ টনী জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতে ডক ও শিপইয়ার্ড (বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন), আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়ন, পানিবদ্ধতা নিরসন ও খাল সংস্কার, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ বৃদ্ধি, মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর-জ্বালানি হাব, মহেশখালী-চট্টগ্রাম-পতেঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি এলএনজি এবং জ্বালানি তেল সরবরাহে পৃথক পাইপলাইন প্রকল্প, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকমানে উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটসহ ক্রীড়া কমপ্লেক্স, তিনটি আইটি সিটি স্থাপন, তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে যোগাযোগ অবকাঠামো ও পর্যটন সুবিধা প্রসার ইত্যাদি।
অর্থমন্ত্রীর সেই প্রত্যয় ও বাস্তব রূপায়ন
আজ থেকে মাত্র তিন বছর আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব পালনকালে বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (৩১ জানুয়ারি ২০১৬ইং) বলেছিলেন, “চট্টগ্রামকে ঘিরেই বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জাতীয় উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছি। সব বড় প্রকল্প চট্টগ্রামে দিয়েছি। দেশের রাজস্ব আয়ের ৮০ শতাংশ চট্টগ্রাম থেকে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই হয়। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্যরকম এক বাংলাদেশ উপহার দিতে সরকার কাজ করছে”।
তিনি আরও বলেন, “এখন সময় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার। প্রত্যেক জাতির সামনে সুযোগ আসে। আমাদেরও সুযোগ এসেছে। ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশের মতো। যদি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারি তাহলে ২০৪০ সালে বাংলাদেশ থাকবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। তখন আমাদের অর্থনীতি হবে পৃথিবীর ২৩তম অর্থনীতি। এমনকি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ার উপরে থাকব আমরা। এখন আমাদের রূপান্তরের সময়। সেই সুবর্ণরেখায় পৌঁছাবই। সব সূচকেই বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে। জাপান, চীন ও ভারত আমাদের সঙ্গে আছে। তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। আমাদের (বাংলাদেশ) বাদ দিয়ে তারা এগিয়ে যেতে পারবে না”।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘দ্য বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেল অ্যান্ড দ্য মেরিটাইম সিল্ক রুট’ শীর্ষক সারগর্ভ প্রবন্ধ পাঠ করেন এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশবরেণ্য শিল্পপতি ও গবেষক সালাহউদ্দিন কাশেম খান। বৃহত্তর চট্টগ্রামের সময়োপযোগী উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বাস্তবমুখী পথ-নির্দেশনা এবং রূপরেখা বেরিয়ে আসে সফল পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উপস্থিতিতে সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।