Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রয়োজন বুঝে প্রকল্প নিন প্রধানমন্ত্রী

সেই অনিক-হৃদয়কে অভিনন্দন

প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৪:৩০ এএম, ১৩ মে, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের দিকে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যখনই কোনো প্রকল্প নেয়া হয়, প্রকল্পটা কী পরিমাণ প্রয়োজনীয় ওটাই যেন বিবেচ্য হয়। প্রকল্প করার সময় একটা অনুরোধ করব যে, কোথায় কোন প্রকল্পটা সত্যিকারভাবে প্রয়োজন সেটাই করবেন। আর কতটুকু প্রয়োজন ওইটাও কিন্তু একটু মাথায় রাখবেন। অহেতুক অর্থ নষ্ট করার যৌক্তিকতা নেই, মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অকাজে অহেতুক অর্থ যেন অপব্যবহার না হয় সে বিষয়টাও মনে রাখতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও ৩৯তম কাউন্সিল উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র প্রতিষ্ঠাতা একেএমএ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো.শামসুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কাজগুলো আমরা করছি, তা যেন খুব দ্রæতই সম্পন্ন হয়। তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সেই কাজগুলো পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়। তাই সরকার প্রকল্পগুলো দ্রæত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নে আন্তরিক হবার জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কোন খেলা খেলতে না পারে সেটা আপনারা দেখবেন।
দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করাই তার সরকারের লক্ষ্য। জনসংখ্যাকে সংকট বলে মনে করি না। এটা সম্পদ। আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি বলে অনেকে মনে করলেও আমি মনে করি, এ বিশাল জনগোষ্ঠী আমাদের সম্পদ, যা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই নেই। এ সম্পদকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে সরকার কাজ করছে। জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে তার সরকারের সময় নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা
দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সারাদেশে মেয়েদের জন্য ৪টিসহ আরো ২৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা স¤প্রসারণের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি কারিগরি স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রতি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষার স¤প্রসারণ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সরকার সকল বিদ্যালয় এবং কলেজে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং কোর্স’ অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, সারাদেশে এক হাজার ৮০০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে তিনটি মহিলা পলিটেকনিকসহ ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারি পর্যায়ে চারশ’রও বেশি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। সরকারি ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফট চালুর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা স¤প্রসারণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালের মধ্যে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত এক লাখ শিক্ষার্থীকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স কোর্সে ভর্তি করার লক্ষ্যে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার অনেক কাজ করছে। উন্নয়ন বাজেট ৫ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এত বিশাল বাজেট অতীতে কোন সরকার করতে পারেনি যেটা আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে। ২০১৪ সালের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় আড়াই বছর সময় অতিক্রান্ত হওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে সময় আছে দুই বছর। কারণ ৬ মাস নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই চলে যায়। কাজেই এই সময়ে আমরা গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রæত সম্পন্ন করতে চাই।
সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাবি জানানোর আগেই সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। সবদিকে আমরা সুযোগ করে দিয়েছি যাতে আমাদের প্রকল্পগুলো সুন্দরভাবে ও দ্রæততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। যাতে আমরা আরো নতুন নতুন প্রকল্প নিতে পারি, কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, বেতন-বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পলিটেকনিক শিক্ষকদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্য সব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দু’টি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার গঠনের সময়কার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্তে¡ও মন্দার ধাক্কা আমরা দেশের মানুষের গায়ে লাগতে দেইনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধি হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশের ওপরে। তথাপি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখতে পেরেছি। যার সুফল দেশের সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে ছিন্নমূল মেহনতি মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নের উদাহারণ টেনে বলেন, ‘এখন আল্লাহর রহমতে মানুষের পায়ে যেমন পরার জুতো, গায়ে তেমনি পোশাক রয়েছে, অতীতে যা ছিল না। তিনি বলেন, কুঁড়ে ঘর বাংলাদেশে থাকবে না এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখন আর কুঁড়ে ঘর দেখা যায় না।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশে রাস্তা-ঘাট, পুল, কালভার্ট, ব্রীজ আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানটা বিবেচনা যতটুকু আমাদের প্রয়োজন ততটুকুই আমরা করবো। রাস্তা করার পাশাপাশি সেটা রক্ষাণাবেক্ষণ করার খরচ আছে। কাজেই যত কম খরচে বেশি মানুষের যাতায়াত করার ব্যবস্থা করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে।
রেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেল অত্যন্ত অবহেলিত ছিল। সেই রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে সমগ্র বাংলাদেশকে রেল নেটওয়ার্কে আনার জন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
দক্ষিণ বাংলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দক্ষিণ বাংলাও এক সময় অবহেলিত ছিল। সেই দক্ষিণ বাংলায় আমরা পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর করতে যাচ্ছি। সেখানে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ বানিয়ে, নদী খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ, আকাশ পথ উন্নয়নে তাঁর সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন সরকার ৬টি নতুন আধুনিক বিমান যুক্ত করেছে। আরো প্লেন আসছে। সবদিক থেকেই আমরা একটা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।
সেই অনিক-হৃদয়কে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনিক এবং শাহরিয়ার হৃদয়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা পেয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আবেগাপ্লুত অনিক-হৃদয় ও তাদের পরিবারও। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন।
অনিক ও হৃদয় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের শিকার হন। সেসময় তারা ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। কোচিং থেকে বাসায় ফেরার পথে পেট্রোল বোমার আঘাতে চোখে ও মাথায় মারাত্মক আঘাত পান এ দুই শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় তাদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে পুরো পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। এগিয়ে আসেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। চিকিৎসার ব্যয়ভার নেন তাদের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত¡াবধানে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা হয় দুই শিক্ষার্থীর। একসময় সেরে ওঠেন তারা। তবে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে সে বছর পরীক্ষা দেয়া হয়নি অনিক-হৃদয়ের। এবার দু’জনই পরীক্ষায় অংশ নেন এবং জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। গত বুধবার ফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার সকালে অনিক-হৃদয় এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ড. জুলফিকার লেনিন। তিনি এ ফলপ্রাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর খুশি হওয়ার সংবাদ ও শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন তাদের কাছে। এতে আপ্লুত হয়ে ওই দুই শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রয়োজন বুঝে প্রকল্প নিন প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ