পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শনিবার বিকেল আড়াইটা। রাজধানীর গুলিস্তানের কাপ্তানবাজার মোড়ে একটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেন দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল। এ সময় কাগজপত্র তল্লাশী করে সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়া যায়। কিন্তু আরোহীর মাথায় হেলমেট না থাকায় চালককে মামলা ঠুকে দেন দায়িত্বরত সার্জেন্ট। যাত্রাবাড়ী মোড়ে একটি প্রাইভেট কার থামিয়ে কাগজ চেক করেন সার্জেন্ট। অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মামলা ঠুকে দেন গাড়ির বিরুদ্ধে। রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন চোখে পড়ে ট্রাফিকের মামলা করার এমন দৃশ্য। শুধু গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী নয়, রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে মোটরসাইকেল, বাস বা অন্য কোন যানবাহন থামিয়ে এভাবে মামলা করে থাকেন ট্রাফিকক সার্জেন্টরা। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ শুরুর পর মামলা ও জরিমানার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
নগরবাসীর ভাষ্য, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম’ শুরু হলেও পুলিশের নজর শৃঙ্খলায় নেই। তারা মূলত মামলা-জরিমানা নিয়ে ব্যস্ত। কোন গাড়ির কাগজ পত্র ঠিক থাকলেও তাদেরকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর বড় ধরণের ত্রুটি থাকলে গাড়ি রেকার বা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। ট্রাফিকের এমন আচমকা অ্যাকশনে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকরা।
ভুক্তভোগী যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সার্জেন্টরা মোটরসাইকেলের পরে ব্যাক্তিগত গাড়ি বা নতুন গাড়ির প্রতি মামলা ও জরিমানায় আগ্রহী বেশি। অথচ লক্কর-ঝক্কর বাস, লেগুনাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ যানবাহন বহাল তবিয়তে চালু আছে। তাদের ভাষ্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশকে মাশোহারা দিয়ে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন রাস্তায় চালানো হচ্ছে। তারা বলেন, পুলিশের সবচেয়ে আগ্রহ হল দামি গাড়ি ও প্রাইভেট কারের ওপরে। এসব গাড়িকে বেশি টাকা জরিমানা করা যায় বলে তাদের এ আগ্রহ। এদিকে, অনেক চালক ও পথচারী ‘শৃঙ্খলা পক্ষে’র আড়ালে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন। এদিকে, টানা ১৯ দিন ধরে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ চললেও রাজধানীর সড়কে দৃশ্যমান কোন সফলতা চোখে পড়েনি। আগের মতোই যত্রযত্র রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা। নিষিদ্ধ বাস-লেগুনাও চলছে আগের মতো। আন্ডারপাস ও ফ্লাইওভারের পরিবর্তে ঝুঁকি নিয়ে মূল রাস্তা দিয়েই দৌঁড়ে পার হচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিশু ও অসুস্থ রোগীদের নিয়েও বেপরোয়া চলাচল করছেন অভিভাবকরা।
গতকাল রাতে শৃঙ্খলা পক্ষের বর্ধিত দু’দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত কয়েকদিন রাজধানীর শাহবাগ, পান্থপথ, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, মগবাজার, ওয়্যারলেস গেট, মৌচাক, মালিবাগ, সাতরাস্তা, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তাগোলা, মিরপুর ঘুরে আগের মতোই বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মতো লক্কর-ঝক্কার বাস চলছে, গণপরিবহন ও প্রাইভেট গাড়ির চালকরা আইন ভাঙছেন, পথচারীরাও চলছেন আগের মতো বেপরোয়া। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বেশিরভাগ পথচারী ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করছে না। ট্রাফিক সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের বোঝালেও তারা শুনতে নারাজ। দু’একজন পথচারী আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করলেও তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। তবে এই ১৯ দিনে মামলা ও জরিমানা আদায়ের সংখ্যা বেড়েছে অনেক।
আয়কর আইনজীবী রাজিফা সুলতানা রোশনি বলেন, লোক দেখানো শৃঙ্খলা পক্ষ পালিত হয়েছে। এই উদ্যোগে শৃঙ্খলা যেমন ফেরেনি তেমনি কাউকে আইন মানতে সচেতন করা যায়নি। এই আইনজীবীর মতে, এই সময়ে পুলিশের মামলা ও জরিমানা আদায় অনেক বাড়লেও সড়কে প্রাণহানি কমেনি মোটেও। বরং আগের তুলনায় অনেক বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে।
ঢাকা মহনগর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শুরুর পর গত ১৮ দিনে (১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৮০ হাজার ১৩টি মামলা দেয় পুলিশ। এ সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা।
উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে বাস/মিনিবাসের বিরুদ্ধে ২৩ হাজার ৪২৭টি, ট্রাকের বিরুদ্ধে ৭৯৮টি, কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৫টি, সিএনজি অটোরিকসার বিরুদ্ধে ১৪ হাজার ১৪৪টি, ট্যাক্সি ক্যাবের বিরুদ্ধে ২৮টি, কার/জিপের বিরুদ্ধে ১০ হাজার ৭৩৬টি, মাইক্রোবাসের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৬৬৩টি, পিকআপের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৭০২টি, হিউম্যান হলারের বিরুদ্ধে ৩০২টি, মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ৪৫ হাজার ৫৯৯টি ও অন্যান্য গাড়ির বিরুদ্ধে ২ হাজার ৬০৯টি মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাাফিক পক্ষের ১৬ দিনে ৪৪৮টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩ হাজার ৫১৬টি গাড়ি রেকার করা হয়।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট চালক ও মালিকদের ভাষ্য, মামলা-জরিমানার টাকার একটি অংশ ভাগ সার্জেন্টরা। যার কারণে শৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে মামলা-জরিমানা করার প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে বেশি। এদিকে মামলা ও জরিমানা আদায়ের সংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি মাসে শ্রেষ্ঠ ইউনিট ও কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেওয়া হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
যাত্রাবাড়ীতে এক পাজেরো গাড়ির মালিক বলেন, গত সপ্তাহে আমার ইন্সুরেন্সের কাগজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও অন্য একটি কাগজের মেয়াদ এ সপ্তাহে শেষ হওয়ার তারিখ ছিল। যার কারণে দুটি কাগজ এক সাথে নবায়ন করবো বলে আলাদাভাবে ইন্স্যুরেন্সের মেয়াদ বাড়ায়নি। এই মালিক বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্টকে বিষয়টি বোঝানোর পরেও তারা আমার গাড়িতে মামলা ঠুকে দেয়। অথচ ওই সময় আমার সামনে নিষিদ্ধ লক্কর-ঝক্কর বাস, লেগুনাসহ অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরারা গাড়ি চালিয়ে গেলেও তাদেরকে মামলা বা জরিমানা করা হয়নি। দ্বিমুখী আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সদুত্তর না দিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহার করে।
পোস্তাগোলায় ট্রাক চালক আলমগীর হোসেন বলেন, এমনিতেই পুলিশকে চাঁদা দেওয়া ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো দায়। এর মধ্যে সরকার কোন সুযোগ করে দিলে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই চালক বলেন, ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামালেই ন্যুনতম ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
যাত্রাবাড়ীতে কয়েকজন পথচারীরা বলেন, কোন কারণ ছাড়াই ডাক দিয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পকেট ও ব্যাগে তল্লাশী চালায়। অহেতুক হয়রানি করার কারণ জানতে চাইলে উল্টো গালি দেয় এবং আরও বেশি নাজোহাল করে। যদিও বেশ কয়েকবার চাঁদা নেওয়ার ছবি তুলতে গেলে পুলিশ দেখে সতর্ক হওয়ায় সম্ভব হয়নি।
এদিকে, গত বছরের ৮ সেপ্টম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময়ে ডিএমপি কমিশনার বলেছিলেন, ঢাকা মহানগরীতে কোনো ধরণের লেগুনা চলবে না। তিনি বলেন, লেগুনার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রধান প্রধান সড়কে এগুলো চলাচলের কোনো রুট পারমিট নেই। যদিও এখনো গুলিস্তান থেকে খিলগাঁও সিপাহীবাগ, মতিঝিল থেকে মুগদা, গুলিস্তান-নিউমার্কেট, সেকশন ও লালবাগসহ নিউমার্কেট-ফার্মগেট রুটে চলাচল করছে।
ট্রাফিক পুলিশের ভাষ্য, পথচারীদের বোঝানো হলেও তারা আইন মানতে অনীহা প্রকাশ করে। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পার হয়। এর কারণে বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে। বেশিরভাগ কর্মকর্তারা অধিক মামলা ও জরিমানার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সড়কে দায়িত্বরত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, সাধারণ মানুষকে হাজারবার নিষেধ করলেও তারা কথা শুনতে রাজী নয়। আইন ভাঙাকে তারা ক্রেডিট মনে করে। তবে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, বেশিরভাগ পথচারী ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানেন না। এমনকি ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কেও তাদের ধারণা নেয়। তারা পাড়া মহল্লায় লিফলেট, পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে সচেতনে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান।
ট্রাফিক পক্ষের চলমান অভিযানের সাফল্য প্রসঙ্গে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এতকিছুর পরেও সড়কের নৈরাজ্য বন্ধে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ, পরিবহন মালিকদের আন্তরিকতা এবং যাত্রী ও পথচারীরা উদ্যোগী না হলে কখনো শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী টেকসই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। শুধু চালক-যাত্রী ও পথাচারীদের সচেতনতার মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন সাথে জড়িত মালিকপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। যার কারণে ট্রাফিক আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না। দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগগুলো সাফল্য পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, রাজধানীর সড়কে শতভাগ শৃঙ্খলা ফিরেছে, এটি দাবি করব না। তবে আগের তুলনায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। তার মতে, পুলিশের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন চলমান প্রক্রিয়া। যা বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সে সময় পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও শেষ পর্যন্ত সরকার সাড়া দেয়। এর প্রেক্ষিতে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকায় ৫ আগস্ট শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। চলে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। পরে ৫-৩০ সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচি পালন করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। তৃতীয়বারের মতো ২৪-৩১ অক্টোবর সাত দিনের বিশেষ ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।