Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু আজ

বর্ণিল সাজে সংসদ ভবন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিএনপি ছাড়াই আজ বুধবার থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের। বেলা ৩টায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে নবগঠিত এই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনা হবে। অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের মাঠে থাকা বিরোধী দল বিএনপি অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না। প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন করার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলার সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং তার অনুপস্থিতে বিকল্প মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এদিকে জাতীয় সংসদ কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা সবাই একদিকে বসবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যারা এবার মন্ত্রী হননি তারা আগের মতো সামনের সারিতেই বসবেন। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী গত সংসদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে বসবেন। তবে সংসদ উপনেতা কে হচ্ছে তা ঠিক হয়নি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় এই সংসদ আরো বেশি কার্যকর হবে। এই সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারি দল ও মাত্র ২২টি আসন নিয়ে বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করতে চায় জাতীয় পার্টি। তবে আসনসংখ্যা কম হলেও জাতীয় পার্টির সদস্যরা সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আজ বুধবার বেলা ৩টায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনা হবে। অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রথম দিনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। এই সংসদের সরকার ও বিরোধী দলের সকল সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রথম দিনে ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন মুলতবি করা হবে। এরপর নতুন স্পিকার শপথ নিয়ে মুলতবি অধিবেশন শুরু করবেন। অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। ওই ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আগামীতে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে। দশম সংসদের মতো এই সংসদেও সরকার ও বিরোধী দল দায়িত্বশীল ভ‚মিকা রাখবেন এবং সংসদ প্রাণবন্ত হবে। দশম সংসদে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকলেও এবার শুধুমাত্র বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আমরা প্রস্তুত। সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচিতে সহযোগিতা ও নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মাধ্যমে জনগণের স্বার্থরক্ষায় সংসদে বিরোধী দল দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি জানান।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতা শেখ হাসিনা এই সংসদে চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করবেন। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন। গত ৩ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এই সংসদে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর দুইটি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর দুইটি, তরিকত ফেডারেশনের একটি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)-এর একটি এবং স্বতন্ত্র সদস্যরা তিনটি আসন পেয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন সদস্য এখনো শপথ নেননি। আর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া একটি আসনে আগামী মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
নতুন সংসদের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ওপর আনীত শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ছাড়াও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচন করা হবে। এরপর সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের পর প্রেসিডেন্টের জারি করা অধ্যাদেশগুলো সংসদে উত্থাপন করা হবে।
সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫টি অধ্যাদেশ সংসদে উত্থাপনের জন্য ওই দপ্তরে জমা পড়েছে। অধ্যাদেশগুলো হলো- ‘রিপ্রেজেনটেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স-২০১৮’, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৮’, ‘চিটাগাং হিল ট্রাক্টস (ল্যান্ড ইকুইজেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৮’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-২০১৮’ এবং ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ-২০১৯।
নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, দেশি-বিদেশি ক‚টনীতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়-স্বজনসহ ৫ শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সংগৃহীত তালিকা চ‚ড়ান্ত করে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্র ছাড়া কোনো অতিথি ওই দিন সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে সংসদের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। আইনি বিতর্কের মধ্য দিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদের সমাপ্তি হয়েছে। সংসদীয় কমিটিসহ দশম সংসদের অন্যান্য কার্যক্রম ওই দিন থেকে সমাপ্তির আদেশ জারি করা হয়েছে। আর আজ নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদের পুরোপুরি সমাপ্তি হবে।
এদিকে জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলার সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং তার অনুপস্থিতে বিকল্প মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর তাদের এ দায়িত্ব বণ্টন করা হলো। এতে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বিকল্প দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং তার অনুপস্থিতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সংসদে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং সংসদ সম্পর্কিত কার্যাদি সম্পাদন করবেন। মন্ত্রিসভার সবচেয়ে সিনিয়র মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংসদ অধিবেশনের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়া আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক নিজের মন্ত্রণালয় ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদ কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছেন। অধিবেশনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম নিজের মন্ত্রণালয় ছাড়া প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন। সংসদ অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করবেন।
সংসদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। সংসদ কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা সবাই একদিকে বসবেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যারা এবার মন্ত্রী হননি তারা আগের মতো সামনের সারিতেই বসবেন। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী গত সংসদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে বসবেন। মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রীর পেছনের সারিতে রাখা হচ্ছে, তার পেছনে প্রতিমন্ত্রীরা। আসনবিন্যাস সম্পর্কে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পেছনে তার মন্ত্রীদের দিলে উনার জন্য সুবিধা হয়। উনি নির্দেশনা দিতে পারেন। আমরা এবার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রীর পেছনে মন্ত্রীদের দিতে তার ওপরে প্রতিমন্ত্রীদের দিতে। তাহলে একদিকে গোছানো হয়ে গেল। প্রথম সারিতে যারা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছিলেন, যারা মন্ত্রী হননি তারা ওভাবেই থাকবেন। সেখানে পরিবর্তন হচ্ছে না। দশম সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগে স্পিকারের আসনের সামনের দিকে বসলেও এবার তার আসন পরিবর্তন হচ্ছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে আনা হচ্ছে। প্রথম সারিতে সৈয়দ আশরাফের আসনে এবার বসছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আগের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আসনে আসছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পেছনের আসনে বসবেন নতুন প্রধান হুইপ। তার পাশে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংসদ

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ