পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন পৃৃথিবীর অনন্য সম্পদ। মাকড়সার জালের মতো ৪শ’ ৫০টি ছোট-বড় নদ-নদীতে বৈষ্টিত সুন্দরবন। দেশের নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা হয়েছে অস্বাভাবিক। নেই প্রবল তোড়। স্রোতহীন নদীর পানি একরকম চুইয়ে পড়ার মতো অবস্থার কারণে লবণাক্ততা গ্রাস করছে। উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানে প্রভাবিত। যাদের মধ্যে রয়েছে, স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক স্রোত চক্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে নদ-নদীতে পলি ও লবন পানির আধিক্য। জলবায়ু এবং ভূমি গঠনেরও পরিবর্তন ঘটছে। সুন্দরবনের বনভূমি ক্রমাগতভাবে বিপদের সন্মুখীন। ভারত অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের ফলে পদ্মা ও তার শাখা নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। বনজ ও জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ জীব বৈচিত্রের ক্ষতির সীমা-পরিসীমা নেই। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক সুন্দরবন বুক পেতে দুর্যোগের পর দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দিতে দিতে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার ওপর মিঠা পানির বদলে লবণ পানির আধিক্যে নীরবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মো. সাইবুর রহমান মোল্যা গতকাল ইনকিলাবকে জানান, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া বা নাব্য হারানোর কারণে সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের উপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নদীর স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে পানি প্রবাহ কমে গেছে। এতে সমুদ্রের লবণ পানি উজানে ধাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে অধিকমাত্রায় স্যালাইন ওয়াটার ইনট্রুশন হওয়ায় গাছপালা, জলজ ও বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হয়। তিনি জানান, বাঘ বা হরিণসহ পশু-পাখি অধিক পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদী স্যালাইন ওয়াটার পান করলে তাদের জৈবিক গুণাবলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসাথে রি-প্রোডাকশন ক্যাপাসিটিও হারিয়ে ফেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুন্দরবন ১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন থেকে শুরু করে নিকট অতীতের সিডর, আইলা ও রোয়ানুর মতো ছোট বড় ঝড় ও জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছে বিশাল এলাকার উপকুলীয় জনপদকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় প্রতিবছর একাধিকবার সমুদ্র উত্তাল হয়ে বড় ধরণের ধাক্কা দিচ্ছে। অথচ মাস্টার প্লান করে সুন্দরবনকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। সুন্দরবন রক্ষা কমিটি ও তেল গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটি জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে সুন্দরবন রক্ষার জন্য। কিন্তু তাতেও ফলাফল বিগ জিরো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, সাপ, শুকর, বানর, কাঠবিড়ালি, বাজপাখি ও শকুনসহ বিভিন্ন পশু-পাখির বিলুপ্তির পথে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে এবং তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নদী ও খালগুলো ক্রমাগতভাবে মরে যাচ্ছে। সুন্দরবনে আগের মতো বাঘের হুঙ্কার ও দাপাদাপি নেই। কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে মায়াবী হরিণের ছুটোছুটি। নানা প্রজাতির পাখির কলতানও থেমে গেছে অনেকটা। সুন্দরী. গেওয়া, শাল, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, পশুর, ধন্দুল ও গোলপাতাসহ উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গ্রীন বেল্টও ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে সিডর ও আইলার পরপর দু’টি ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে দেহ নিস্তেজ হয়ে গেছে সুন্দরবনের। নদ-নদীতে আগের চেয়ে কমে গেছে হরেকরকম মাছের সমাহার। মৎস্যসম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার সুন্দরবনের এসব নদ-নদী। বন, পরিবেশ ও নদী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুন্দরবনের মূল ৬টি নদী শিবসা, পশুর, খোলপেটুয়া, কালিন্দি, বলেশ্বর, মালঞ্চ দিয়ে নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ে। রায়মঙ্গল ও আড়পাঙ্গাসিয়া নদীসহ ছোট-বড় অসংখ্য খাল ও নালা রয়েছে সুন্দরবনে।
সূত্র জানায়, সমানতালে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বন ও লোকালয় সংলগ্ন শাখা-প্রশাখার অধিকাংশ নদ ও খাল। সুন্দরবনের নদী আড়পাঙ্গাসিয়া, মাদার, মালঞ্চ ও চূনার মধ্যখানেও জেগে উঠছে বড় বড় চর। কাকশিয়ালী নদীরও নাব্য হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। অন্যতম বেতনা নদীও তার নাব্য হারিয়ে পুরোপুরি একটি মৃত খালে রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত সুন্দরবন। ভারতের ২৪ পরগণার দক্ষিণ ভাগও সুন্দরবন। পশ্চিমে ভাগীরথি নদীর মোহনা থেকে পূর্বে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সুন্দরবন বিস্তৃত। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবনের ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ভূ-ভাগ আর ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার পানিভাগ। সমুদ্রের পানির উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যাবার আশংকা প্রবল। নদ-নদীর পাড়ের বেশ কয়েকজন জানালেন, মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে কিছু বলতেও পারছি না, সইতেও পারছি না। রীতিমতো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভারতের আগ্রাসনে দিনে দিনে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে গঙ্গানির্ভর সব নদ-নদী। তাদের কথা, ফারাক্কার ধাক্কা আর সহ্য করাতে পারছে না নদ-নদী। বছরের পর বছর ধরে ধাক্কা খেয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। নদ-নদীর কাহিল অবস্থার কারণে মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে সার্বিক পরিবেশ। পরিবেশবিগণ বলেছেন, আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে দ্রুত। পরিবর্তন ঘটছে ষঢ়ঋতুর। বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন আরো হুমকির মুখে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।