Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ’লীগ ছাত্রলীগকে হটিয়ে গায়েবানা জানাজা পড়ল জামায়াত

প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশকে হটিয়ে গতকাল (বুধবার) চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজা আদায় করেছে জামায়াত। এর আগে-পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও বর্ষণ করেছে। এলাকায় সড়ক অবরোধ ও ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
বাদ জোহর নগরীর চকবাজারের প্যারেড মাঠে (চট্টগ্রাম কলেজ মাঠ) জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় জামায়াত। আর তা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে সকাল থেকে চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়। দুপুরের আগ থেকে জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্যারেড ময়দানের আশপাশে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগও মাঠের আশপাশে জড়ে হয়ে স্লোগান দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিজামীর গায়েবানা জানাজা ঠেকাতে প্যারেড মাঠের পশ্চিম গেটে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। তারা চট্টগ্রাম কলেজ রোডে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে চকবাজারের গোলজার মোড় ও আশপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। এর মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট ও কেয়ারি কর্নারে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ককটেলের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অলিখাঁ মসজিদ, টাক শাহ মসজিদ এবং প্যারেডের পূর্ব পাশের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করে।
নামাজ শেষ করে কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে এলাকা ছাড়া করে দেয়। এরপর তারা প্যারেড ময়দানের পূর্ব গেট ভেঙে ময়দানে ঢুকে যায়। এ সময় পশ্চিম পাশের গেটটিও ভেঙে দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। প্যারেড মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল গায়েবানা জানাজা। নগর জামায়াতের আমির সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম এতে ইমামতি করেন। এদিকে জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। গায়েবানা জানাজা শেষে প্যারেড ময়দান ছেড়ে উত্তর দিকে চলে যায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালে এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের নামে চট্টগ্রাম কলেজে ঢুকে পড়ে ছাত্রলীগ। ওইদিন শিবিরের সাথে সংঘর্ষের জের ধরে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের সবকটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর শিবিরের দখলে থাকা কলেজ দুটিতে ওইদিন থেকে পুলিশ পাহারায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাস থেকে নীরবে সরে গেছে ছাত্রশিবির। শিবির আতঙ্কে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের সবকয়টি গেটে তালা দেয় ছাত্রলীগ। গতকাল গেট ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে প্যারেড ময়দানে জানাজা আদায় করেছে জামায়াত-শিবির।
সকল হত্যার বদলা নেয়া হবে
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমির এবং সাবেক এমপি মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেছেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিশ্বনন্দিত ইসলামী আন্দোলনের নেতা, ইসলামী গবেষক ও শিক্ষাবিদ। শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলনসহ গণমানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে সরকার মিথ্যা অভিযোগে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের জনগণ ইসলামকে বিজয়ী করার মাধ্যমেই মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে হত্যার বদলা নেবে ইনশাআল্লাহ। জানাজাপূর্ব সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ জামায়াত আহূত দেশব্যাপী আজকের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করার আহ্বান জানান। গায়েবানা জানাজাপূর্ব সমাবেশে মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম উপরোক্ত কথা বলেন।
নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ জাফর সাদেক, উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা আমির অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, চট্টগ্রাম মহানগরী এসিসটেন্ট সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন ও অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ।
রাজশাহীতে জানাজায় পুলিশের ধাওয়া, আটক ৪
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে শিবির কর্মীরা জামায়াতের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আমির মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। আটক করেছে চারজনকে। গতকাল বুধবার দুপুর দু’টোর দিকে শিবির কর্মীরা হেতেমখা কবরস্থান সংলগ্ন মসজিদে জড়ো হয়ে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হানা দেয়। পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আয়োজনকারীরা। একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপর এ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার শিবিরকর্মীকে আটক করে। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে বলে আরএমপির মুখপাত্র সহকারী কমিশনার ইফতেখার আলম জানান।  
এদিকে গত মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নগর জামায়াতের আমির আবুল হোসেনসহ বিভিন্ন অপরাধে আটান্ন জনকে গ্রেফতার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ’লীগ ছাত্রলীগকে হটিয়ে গায়েবানা জানাজা পড়ল জামায়াত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ