পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চৌদ্দগ্রামে কয়লার ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ১৩ শ্রমিকের মৃত্যু
৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি
বিপ্লব, শংকর চন্দ্র, সেলিম, মোরসালিন, প্রশান্ত রায়, তরুণ চন্দ্র রায় নীলফামারী জলঢাকার মীরগঞ্জ হাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ও পড়ালেখার খরচ যোগাতে গত নভেম্বর মাসে চৌদ্দগ্রামে এসেছে ইটভাটায় কাজ করতে। সেখানে তারা শ্রমিক হিসেবে কমিশন ভিত্তিতে কাজ করছিল।
চোখে ছিলো রঙিন স্বপ্ন টাকা পয়সা জোগার করে আবারো স্কুলে যাবে। পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফুটাবে কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন চাপা পড়ে গেলো ইটভাটার কয়লাতে। প্রতিদিনের ন্যায় কাজ শেষ করে গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গতকাল শুক্রবার ভোর সোয়া পাঁচটায় কয়লায় ট্রাক উল্টে চাপা পড়ে এই ছয় স্কুলছাত্রসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। শ্রমিকদের সবার বাড়ি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায়।
গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার ছুপুয়া-নালঘর সড়কের পাশে নারায়নপুর গ্রামে অবস্থিত কাজী এন্ড কোং প্রকাশ মজুমদার ইটভাটায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভুঁইয়া হাসান, থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শাহজালাল মজুমদার, ঘোলপাশা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জাফরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর। জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ভোর সোয়া পাঁচটায় কয়লাভর্তি ট্রাক (ঢাকামেট্রো-ট-১৬-০১১৪) থেকে ওই ইটভাটায় কয়লা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল শ্রমিকরা। হঠাৎ করে ট্রাকটি উল্টে গেলে কয়লাগুলো ঘুমন্ত শ্রমিকদের মেসের উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ১৩ শ্রমিক নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নিহতরা হলেন- নীলফামারী জেলার জলঢাকার উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র রায়, সুনীল চন্দ্র রায়ের ছেলে তপন চন্দ্র রায়, জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম, রাম প্রসাদের ছেলে বিপ্লব, কিশোর চন্দ্র রায়ের ছেলে শংকর চন্দ্র রায়, অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপু চন্দ্র রায়, কামিক্ষার ছেলে অমিত চন্দ্র রায়, পাঠানপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে মোরসালিন, ফজলুল করিমের ছেলে মো. মাসুম, শিমুলবাড়ি গ্রামের মনোরঞ্জন চন্দ্র রায়, খোকা চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণাল চন্দ্র রায়, রাজবাড়ি গ্রামের খোকা চন্দ্র রায়ের ছেলে বিকাশ চন্দ্র রায়, ধলু চন্দ্র রায়ের ছেলে কলেক চন্দ্র রায়।
ইটভাটার ম্যানেজার কামরুল হাসান জানান, নিহত শ্রমিকরা কমিশনে গত নভেম্বর মাসে এই ইটভাটায় কাজে যোগদান করে। বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শেষে টিনশেটের মেসে ঘুমিয়ে পড়ে আর ভোর বেলায় কয়লা চাপা পড়ে ১৩ জন মারা যায়।
নিহতদের গ্রামের বাসিন্দা ওহিদুর ইসলাম লাবলু মুঠোফোনে জানান, নিহত শ্রমিকদের সকলে হদ্রদরিদ্্র। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমার ইউনিয়নের ৪জন বাসিন্দা এই দুর্ঘটনায় মারা য়ায়। তাদের মৃত্যুতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। প্রত্যকের পরিবার খুব গরীব। নিহদের পরিবারের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে আসছে।
মীরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান হুকুম আলী খান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এ ঘটনায় আমার এলাকায় ছয় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নয়জন নিহত হয়েছে। তাদের মৃত্যুর সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার শেষে হাসপাতালে ভর্তি করি। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে।
নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
কুমিল্লায় ট্রাক উল্টে ১৩ শ্রমিক নিহতের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীকে আহ্বায়ক করে গতকাল শুক্রবার এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপন দেবনাথ, চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল-মাহফুজ এবং কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক রতন কুমার নাথ।
জলঢাকায় চলছে আহাজারি
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় কয়লার ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত ১৩ শ্রমিকের বাড়িতে চলছে কান্না আর আহাজারি। তাদের সকলের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের পাঠানপাড়া ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা। এ খবর প্রকাশিত হলে জলঢাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রাণ হারানো শ্রমিকদের বাড়িতে বাড়িতে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। পরিবারগুলোকে সহায়তার কথা জানিয়েছে নীলফামারী জেলা প্রশাসনও।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আমরা মর্মাহত। নিহত শ্রমিকদের প্রতিটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। এরই মধ্যে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠানো হয়ছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।