পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : হাসপাতাল, চিকিৎসক ও রোগী এই শব্দগুলোর সাথে আরও একটি শব্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা হলো নার্স। রোগীর সেবা শুশ্রুষা ও আর্তমানবতার সেবায় তারা নিয়োজিত। নার্স’র বাংলা অর্থ সেবিকা। সেবিকা রঙে সাদা, পোশাকে সাদা, মনে সাদা। তারা সবকিছুতেই সাদা। সাদায় যেন একাকার নার্সিং পেশা। সাদা শান্তির প্রতীক। এ পেশায় আসতে হলে অবশ্যই সেবামনস্ক হতে হয়। নার্সরা পেশা ও সেবাকর্ম দিয়ে মানুষের মন জয় করে। জয় করে জীবন ও বিশ্ব।
নার্সদের সেবায় যে কোন রোগী অর্ধেক ভালো হয় যায়। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শের পর সে অনুযায়ী রোগীদের সেবা করান নার্সরা। যদিও দেশের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় যথেষ্ট পরিমাণ নার্স না থাকায় হাসপাতালগুলোতে প্রায়শই রোগীরা বিরক্ত হন, নার্সদের সেবা না পেয়ে। কারণ একটি ওয়ার্ডের ৪০/৫০ জন রোগীকে সামলাতে হয় একজন নার্সকে। রোগীরা সমান সেবা না পেয়ে, আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তাই সম্মান হারাচ্ছে নার্সি পেশা। আর তাই অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্য সেবা।
দেশে সরকারি হাসপাতালসমূহে চরম নার্স সংকট বিদ্যমান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স হওয়ার কথা। সেখানে বাংলাদেশের চিত্র বিপরীত। বর্তমানে দেশে ৬৬ হাজারের কিছু বেশি রেজিস্ট্রাড চিকিৎসক রয়েছেন। প্রটোকল অনুযায়ী সেখানে দুই লাখের বেশি নার্স থাকার কথা। কিন্তু দেশে রেজিস্ট্রার্ড নার্সের সংখ্যা মাত্র ৪১ হাজার। তারমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি নার্স বেকার। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম দিনটি স্মরণে ১৯৭৪ সাল থেকে এই দিনে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন) দিবসটি পালন করে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকবেলা করার ব্যবস্থা যুুগোপযোগী করার জন্য নার্স উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার।’
জাতিসংঘ ২০০০ সালে গৃহীত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনের জন্য ২০১৫ সালকে শেষ বছর হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বর ২০১৪ সালে জাতিসংঘ্য সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এসডিজি’র ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সব বয়সের সকলের জন্য সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা।’ সেই ধারাবাহিকতায় এবারের নার্সেস দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, যেখানে সাধারণ ওয়ার্ডে চারজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকা দরকার সেখানে বাংলাদেশে দেখা যায়, ৩০-৩৫ জন রোগীর পুরো ওয়ার্ডেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে একজন নার্সকে। অন্যদিকে আইসিইউ বা বিশেষায়িত অথবা সমপর্যায়ের জটিল পরিস্থিতিতে রোগীপ্রতি একজন নার্স থাকার কথা, কিন্তু দেখা যায় একজন নার্সের আওতায় সাত-আটজন কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশি রোগী থাকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০১৩ সালের হিসাব মতে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মোট শয্যা সংখ্যা ৯১ হাজার ১০৬টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬৫১টি। তবে সব হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগী সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। ২০১২ সালে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৮ জন। আবার দেশে মোট জনসংখ্যার গড় অনুপাতে প্রতি ১১ হাজার ৬৯৬ জনের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন নার্স। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে নার্সের (মিডওয়াইফসহ) সংখ্যা ৪১ হাজার থেকে কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০ হাজারের কিূছ বেশি নার্স (রেজিস্ট্রার্ড নার্স-মিডওয়াইফ) সরকারি নার্সিং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত এবং প্রায় সমপরিমাণ নার্স বেকার অথবা দেশে অবস্থিত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওতে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া সরকারি ১২০ জনের লিয়েনসহ মোট এক হাজার ১০০ জন নার্স বিদেশে কর্মরত আছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট নার্সের একটি বড় একটি অংশ ধাত্রী হিসেবে কাজ করেন। আরেকটি অংশ বিভিন্ন প্রশাসনিক বা দাপ্তরিক কাজে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে প্রকৃত অর্থে রোগীর সেবায় নিয়োজিত নার্সের সংখ্যা অনেক কম।
সেবা পরিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সরকারি পর্যায়ে ৫৭টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৭৪টি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। ইনস্টিটিউটগুলোয় তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স চালু আছে। আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং কলেজগুলোয় চার বছর মেয়াদি বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু আছে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট নার্সিং শিক্ষার আসন মাত্র ছয় হাজার ৬৮০টি।
বাংলাদেশ নার্সেস ঐক্যপরিষদের ঢাকা মহানগরীর সদস্য সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, দেশে পর্যাপ্ত নার্স সংকট রয়েছে। তাছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে নন-রেজিস্ট্রার্ড অ-প্রশিক্ষিত নার্সরা কাজ করছেন। উভয় ক্ষেত্রেই রোগীরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি অবিলম্বে এই সমস্যা সমধানে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম বলেন, দেশে নার্স সংকটের চরম অবস্থা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০ হাজারসহ বর্তমানে শুধু সরকারি পর্যায়ে নার্সদের শূন্য পদের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭২৮টি। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ৬ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হলো। সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ১৮ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কয়েক বছর কেটে গেছে। কিন্তু নার্স নিয়োগ হচ্ছে না। সুরাইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং দেশের মানুষের প্রয়োজন উপেক্ষা কার হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।