পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের উদাসীনতায় দেশের নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় ৪৮ বছরে নৌপথের দৈর্ঘ্য কমেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার
আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে ভারতের ওপর- আবু নাসের খান
বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের বেশিরভাগ নদীতে। বাংলাদেশের ১৩০০ নদীর মধ্যে এখন জীবিত আছে মাত্র ২৩০টি নদী। ভারতের আগ্রাসনে দেশের নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। দেশের চল্লিশটি নদীতে কমে গেছে পানি, ভয়াবহ পানি সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নদী বাঁচান, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান’ বিষয়ে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয় নদী নিরাপত্তা বিষয়ক সামাজিক সংগঠন নোঙরের সমাবেশে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের উজানে ভারত। ভারত বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে অভ্যন্তরীণভাবে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিচ্ছে। আমরা আমাদের হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদেরকে আমাদের হিস্যাটা বুঝে নিতে হবে। এ প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে ভারতের ওপর।
তিনি আরো বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের পানি সংরক্ষণ ও এর ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। দেশের নদী, খাল ও পুকুরগুলোতে পানি ধরে রাখার জন্য খনন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রতিবছর দেশের নদীগুলোতে গড়ে জমা পড়ছে ৪ কোটি টন পলি। ৪৮ বছরে নৌপথের দৈর্ঘ্য কমেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার। নৌদুর্ঘটনা দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় কোনোভাবেই কমছে না দুর্ঘটনা। বাড়ছে প্রাণহানি। এসব যানে যেমন রয়েছে ফিটনেস ত্রুটি, তেমনি অধিকাংশ যানে নেই জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। যাত্রীবাহী জাহাজ দুর্ঘটনার ৫৬ শতাংশই হয় একটির সঙ্গে আরেকটি জাহাজের ধাক্কা লেগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট জাহাজকে বড় জাহাজগুলো ধাক্কা দেয়। আর ৩৩ শতাংশ হয় প্রতিকূল আবহাওয়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে।
নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে বেশিরভাগ নৌদুর্ঘটনা ঘটছে রাতে বেলায়। অথচ রাতে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা নৌ ব্যবসা এবং নৌযান পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা খুবই কম।
তিনি আরো বলেন, নৌযান চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব এবং আইন না মানার কারনেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সচেতনা বাড়ানোর জন্য সারাদেশেই নৌপুলিশ কাজ করছে। নৌদুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন সময়োপযোগি করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনে নোঙরের সভাপতি সুমন শামস জানান, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে ৫শ’ ৩৫টি বড় নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা তদন্তে ৮শ’ ৬৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির কোনোটিরই ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। এছাড়া নৌপথের যানবাহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তেমন কোনও ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, অন্যদিকে নৌপথ তার গতিপথ হারিয়ে এখনও ঘটছে ছোট বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা। ১৫ জানুয়ারি দিবাগত গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে একটি তেল বোঝাই কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি ট্রলার ডুবে যায়। মাটি বোঝাই ট্রলারটিতে ৩৪ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বাকি ২০ জনের ১৮ জনকেই এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, নদীমাতৃক দেশের নদীরা আজ ভালো নেই। বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের বেশিরভাগ নদীতে। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, তেরশ’ নদীর এখন জীবিত আছে মাত্র ২৩০টি নদী। উজান দেশের উদাসীনতায় ভাটির দেশের পানি কমে যাওয়ায়, আজ আমাদের নদীগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। দেশের চল্লিশটির নদীতে কমে গেছে পানি, ভয়াবহ পানি সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ। প্রতিবছর দেশের নদীতে গড়ে জমা পড়ছে ৪ কোটি টন পলি। ফলে নৌপথ ছোট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ৪৮ বছরের নৌপথের দৈর্ঘ্য কমেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার। খননে পরে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ অন্যান্য নদীগুলো এখন ধুধু বালুচর। এছাড়া দেশজুড়ে অব্যাহত রয়েছে নদী দখল ও দূষণ। ফলে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী ও উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে। মানববন্ধনে নদী ও প্রকৃতি বিসয়ক বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
নৌপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নৌদর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়ন ও অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে নৌযান নির্মাণ দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়াও রয়েছে-অবকাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস (বার্ষিক সার্ভে) প্রদান, অদক্ষ মাস্টার ও ড্রাইভার (চালক) নিয়োগ, ওভারলোডিং (অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই), অবৈধ নৌযান চলাচল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, নৌপথে দিকনির্দেশক বিকন ও বয়াবাতি না থাকা, নাব্য সঙ্কট ও ডুবোচর, নৌপথে কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা ইত্যাদি, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিকদুর্যোগ। কিন্তু নৌযান পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তরা এসব বিষয়ে তোয়াক্তা করেন না বলে ওই সূত্র জানান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।