পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিন যতোই গড়াচ্ছে বাণিজ্য মেলা ততোই জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। মাসব্যাপী মেলার দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিকে শুধু বিকেলে ভিড় হলেও এখন সকাল থেকেই ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর ছুটির দিন হলে তো কোনো কথাই নেই। গতকাল তা উপচেপড়া ভিড়ে রিতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে যায় গোটা শেরেবাংলা নগর। একই সঙ্গে এতোদিনের ক্রেতা ক্ষরা কেটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বিক্রয় কর্মীরা।
গতকাল ছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরুর পর তৃতীয় শুক্রবার (সাপ্তাহিক ছুটির দিন)। মেলার বেশিরভাগ দিন পেরিয়ে যাওয়া ও সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় সকাল থেকেই ঢল নামে দর্শনার্থীদের। তবে সন্ধ্যার পর পুরো মেলামাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন অফার ঘোষণা করে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করছেন দেদারছে।
মেলার গেট ও পার্কিং স্থানের দায়িত্ব পালন করা একাধিক কর্মী বলেন, দুপুর ২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের চাপ ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। তবে বিকেল ৪টার পর দর্শনার্থীদের চাপ বহুগুণে বেড়ে যায়। ফলে দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিংয় করতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়।
সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রিমা উদ্যানের ফুটপাত থেকেই সারিবদ্ধভাবে দর্শনার্থীদের আসতে দেখা যায়। এ সময় তাদের মধ্যে ভিড়ের কারণে আতঙ্কও লক্ষ্য করা যায়। এক দর্শনার্থী হাঁটতে হাঁটতে তার সঙ্গীকে বলেন, আমি বলছিলাম, আরও সকালে আসতে। আরও সকালে আসলে আরেকটু কম ভিড় থাকত।
দর্শনার্থীরা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন। সপ্তাহের কর্মদিবসে এই সুযোগ হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদেরও মেলায় উপস্থিতি লক্ষণীয়। অতিরিক্ত ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়েও কেনা-কাটার আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন না। ব্যবসায়ীদের নানা অফারে আকৃষ্ট হয়ে তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে।
ক্রেতা-দর্শনার্থীর বিষয়ে মো. রবিউল নামের বিক্রেতা বলেন, ভাই দেখছেন তো কি পরিস্থিতি। এমন অবস্থায় কথা বলবো কি করে। আপনার কিছু বলার থাকলে পরে বলেন। তিনি বলেন, আজ আল্লাহর রহমতে বিক্রি বেশ ভালো। গত শুক্র ও শনিবারও ভালো বিক্রি হয়েছে। তবে আগের দিনের তুলনায় আজ বিক্রি অনেক ভালো। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও ভালো হবে। গত সপ্তাহেও এ বিক্রয়কর্মীকে স্টলে অলস সময় পার করতে দেখা যায়। সে সময় তিনি বলেন, ‘বিক্রি এখনো জমে উঠেনি। কারণ মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী এখনো সেইভাবে আসেনি। আর কিছুদিন গেলে মেলা জমে উঠবে। তখন ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। আর ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়লে বিক্রিও বাড়বে।
ক্রেতা খরা থেকে বেরিয়ে এসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়া আইসক্রিমের স্টলগুলো। মেলায় দর্শনার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইসক্রিমের বিক্রিও বেড়েছে। অথচ মেলার তিন ভাগের এক ভাগ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর গত সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রেতা সংকটের ছিল আইসক্রিম বিক্রেতারা। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ইগলু, লাভেলো, বেলিসিমো, পোলার, বøুপ স্টল নিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে। এর পাশাপাশি ইগলু, পোলার আইসক্রিমের টোং দোকান দিয়ে বসেছেন বেস কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে মেলায় অংশ নেয়া আইসক্রিমের স্টল সংখ্যা একশর কম হবে না। আইসক্রিম বিক্রেতারা জানান, শীতের মৌসুম চললেও দুই-তিনদিন ধরে কিছুটা গরম পড়ছে। আর মেলা প্রাঙ্গণে বহু মানুষের পদচারণা থাকায় এখানে এক প্রকার গরমই দেখা যাচ্ছে। গরমের কারণে আইসক্রিমের প্রতি মানুষের চাহিদা কিছুটা হলেও বেড়েছে।
ছোট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। প্রাণের স্টলে দায়িত্ব পালন করা এক বিক্রয় কর্মী বলেন, মেলার প্রথম থেকেই বিক্রি ভালো। তবে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার অনেক বেশি বিক্রি হওয়াটাই স্বাভাবিক। গত শুক্রবারের তুলনায় মেলায় আজ ভিড় ও বিক্রি বেশি।
ঢাকা বাণিজ্য মেলার অন্যতম আকর্ষণ থাকে কমদামে ব্লেজার কেনায়। পুরো মেলাজুড়ে বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন অফারে শীতের ব্লেজার। তবে এবার মেলা একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় শীতের প্রকোপ কমে গেছে আগেই। ফলে মেলার শেষের দিকে ব্লেজার বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এ জন্য মেলার মাঝামাঝি সময়েই চলছে ‘ফাটাফাটি’, ‘গোল্ডেন’ কিংবা ‘আখেরি’ অফার।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বেশকয়েকটি ব্লেজার ও স্যুট বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবারের মেলায়। এরমধ্যে বেশিরভাগই অপরিচিত ব্র্যান্ডের। রাজধানীর নীলক্ষেত, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, ভাসানটেক, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠান মেলায় ব্লেজারের পসরা সাজিয়ে বসেছে। প্রতিটি স্যুটে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৪০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিমত, বর্তমানে পোশাক হিসেবে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ দখল করে নিয়েছে ব্লেজার। সব ঋতুতেই ব্লেজারের চাহিদা রয়েছে। তবে শীতে স্টাইলিশ হিসেবে ব্লেজারের কদর তুলনামূলক বেশি। পুরুষ ক্রেতাদের পাশাপাশি নারীরাও ফরমাল পোশাক হিসেবে স্যুট ও ব্লেজারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই বাণিজ্য মেলায় বাহারি স্যুট, কোট-ব্লেজার নিয়ে এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
মেলায় ‘ফাটাফাটি’ অফার দিয়ে ১৩০০ টাকায় ব্লেজার বিক্রি করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আশিক ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল বলেন, স্টলে ১৩০০ থেকে চার হাজার টাকা দামের বিভিন্ন কোয়ালিটির ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে। আছে মোদি কোট এবং বিভিন্ন ধরনের কটি। সব পণ্যের মান খুব ভালো।
তিনি বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি ক্রেতারা অফারের আওতায় থাকা ব্লেজারই বেশি কিনেন। এ কারণে প্রথম দিন থেকেই আমরা ১৩০০ ও ১৮০০ টাকার ফাটাফাটি অফার দেয়া শুরু করেছি। মেলায় ১৩০০ টাকায় যেসব ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে, বাহিরে এর দাম দুই হাজার টাকার নিচে হবে না। অফারের বাহিরে থাকা ব্লেজারও আমরা বাহিরের থেকে কম দামে দিচ্ছি।
প্রতিবছর ১ জানুয়ারিতে মেলা শুরু হলেও এবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। মেলা শুরুর পর ১১ জানুয়ারি ছিল প্রথম শুক্রবার। সেদিন দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও সেটা ছিল মেলার ধারণক্ষমতার তুলনায় স্বাভাবিক। এরপর ১৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় শুক্রবার দর্শনার্থীদের চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বিকেল ৩টার পর থেকে মেলা কর্তৃপক্ষকে বারবার মাইকে ঘোষণা করতে শোনা যায়, বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের চাপ বাড়ছে। যাদের মেলা দেখা ও কেনাকাটা শেষ হয়েছে তারা বেরিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ মেলায় না থাকার জন্য সন্ধ্যার পরও এভাবে ঘোষণা করতে শোনা যায় মেলা কর্তৃপক্ষকে। এরপর আগের রেকর্ড ভেঙে গতকাল দেখা গেল রিতিমতো জনসমুদ্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।