পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিয়ম ভেঙে রাজধানীর কাছাকাছি নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। জনপদের খুব কাছাকাছি অথবা ফসলি জমিতে ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে চললেও সেদিকে নজর নেই পরিবেশ অধিদফতরের। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, অবৈধ ভাটা চিহ্নিত করতে যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা জরুরি তা করে না পরিবেশ অধিদফতর। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও অবৈধ কোনো ইটভাটাই বন্ধ হয় না। বরং অভিযানের পর সেগুলো আগের মতো নিয়ম ভেঙ্গে চলতেই থাকে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অজুহাত হলো, তাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে না। অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হয়।
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতর অভিযানে নেমে ভাটাগুলোকে জরিমানা করলেও পরের দিন থেকেই ফের চলতে থাকে পরিবেশ দূষণকারী এসব ইটভাটা। জানা গেছে, ঢাকার আশপাশের বেশির ভাগ এলাকাতে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। শীতের এই মৌসুমে ইট তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইট পোড়ানো জ্বালানির কারণে বায়ু, পানি ও তাপদূষণ ঘটছে- যা নিয়ন্ত্রণের সদিচ্ছা নেই সরকারের। এতে করে বৃক্ষ যেমন নিধন হচ্ছে তেমনই আবাদযোগ্য জমির উপরিভাগ কেটে ফেলায় ফসলি জমি হারাচ্ছে তার উর্বর শক্তি।
পরিবেশ দূষণের দায়ে গত ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকার ধামরাইয়ে চারটি ইটভাটাকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহমেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা করে।
জরিমানা করা ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স দিপ্তী সেমি সজল ব্রিকস, মেসার্স মামুন ব্রিকস, মেসার্স এমবিএম ব্রিকস এবং মেসার্স মা ব্রিকস অ্যান্ড কোম্পানি। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সালমান চৌধুরী শাওন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ইটভাটার অবস্থান গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার জরিমানা করা হলেও পরদির বুধবার ফের চালু হয়েছে ধামরাইয়ের বেলিশ্বর গ্রামের জয়নাল আবেদিনের মালিকানাধীন মামুন ব্রিকস। স্থানীয়রা জানান, এই ইটভাটার মালিক প্রায় চার বছর ধরে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই কৃষি জমিতে ইট পুড়িয়ে আসছে। সম্প্রতি কেউ অধিদফতরে অভিযোগ করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এই ভাটার মালিককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে।
এম বি এম ও মা ব্রিকস নামের দুটি ইট খোলার মালিক বেলাল হোসেন দাবি করেছেন, তার পাশের অন্যান্য ইট খোলার পরিবেশের অনুমোদন রয়েছে। অথচ আবেদন করার পর পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন তাকে ছাড়পত্র দিতে টালবাহানা করে আসছে। বেলাল হোসেনের এই দুটি ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা ও কৃষিজমির পাশে ইট পোড়ানোর দায়ে গত ২২ জানুয়ারি সাত লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অথচ পরের দিনই ভাটা দুটোতে ইট পোড়াতে দেখেছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, যে এলাকায় ইটভাটায় পরিবেশ অধিদফতর অভিযান চালিয়েছে বা যেগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে সেগুলো কোনোটাই বন্ধ হয়নি। মালিকরা জানিয়েছেন- তাদের ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই তারা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি জমিতে ইটখোলা স্থাপনের কারণে তারা এখন ফসল ফলাতে পারছেন না। তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া, আবাসিক এলাকায় ইটখোলা স্থাপনেরও অভিযোগ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেন, ইটভাটায় গ্যাস, লাকড়ি ও কয়লা- এই তিন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। গ্যাসচালিত ভাটাগুলোতে কম ক্ষতি হয়। লাকড়ি ও কয়লাতে বায়ুদূষণ হয় ও তাপজনিত সমস্যা বেশি হয়। তিনি বলেন, সাসপেন্ডেন্ট পার্টিকুলেট ম্যাটার, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড এগুলো একটি চিমনি দিয়ে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় ছাড়ার কথা, যাতে স্পার্ক হবে এবং দূষণ কমবে। কিন্তু তা মেনে চলা হয় না। ইটভাটার আধা কিলোমিটারের মধ্যে জনপদ থাকলে স্থানীয় অধিবাসীদের শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে জামাল উদ্দীন বলেন, পাতায় বর্জ্যগুলো পড়ার কারণে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না করে কেবল জরিমানা কোনও সমাধান না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অধিদফতরের নিয়ম আছে, ইটভাটাগুলো সেসব না মানলে আইনি দন্ডেরও ব্যবস্থা আছে। আমার মনে হয়, সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সুশাসনের অভাব আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব আমলে নেয় না। আর নিলেও ন্যুনতম সাজা দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ করতে চায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল মতিন বলেন, ইটভাটার জন্য আইন আছে, সেই আইনের দুর্বলতার ফাঁকে এটা করা হয়ে থাকে। আমরা চাই, জরিমানা না, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক। কিন্তু সরকার বলবে উন্নয়নের বিষয় বন্ধ না করে সংশোধন করা দরকার। ইচ্ছা করলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো হয় ইচ্ছাকৃত, নাহলে পরিস্থিতির কারণে, কিংবা চাপে পড়ে করা হয়। কিন্তু সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে চাইলে কাজ করতে পারে। তা না-করে তাদের এক ধরনের গাফলতি আছে। ইচ্ছে করলেই এটি নিয়ন্ত্রণে এনে সমাধান করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।