পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংসারের অভাব তাড়াতে এক সময় বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন নারী শ্রমিক মিনারা। বিদেশে সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। কিন্তু তাতেও ভাগ্যের চাকা প্রায় আটকে যেতো। পরে বাড়ির পাশের জামদানী ব্যবসার দিকে মন দেন। ৫ বছর আগে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে কয়েকটি তাঁত গড়ে তুলেন নিজের বাসায়। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মিনারার। ৫ বছরে শূন্য হাতের শ্রমিক এখন লাখপতি বনে গেছেন। এ ব্যবসায় এসে বদলে গেছে তার ভাগ্য। পরের চাকরি বাদ দিয়ে নিজেই এখন খাটাচ্ছেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। তাদের কেউ কারিগর, কেউ বাজার নিয়ন্ত্রক।
রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বিসিক শিল্পনগরীখ্যাত নোয়াপাড়া বাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী জামদানী পল্লী। এ পল্লীর বাইরেও বাসা বাড়িতে রয়েছে আরো অসংখ্য জামদানী তৈরীর তাঁত। আছে মিনারার মতো ৫শতাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তাদের সবাই এখন স্বাবলম্বী। বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে এ জামদানী পল্লীর ব্যস্ততা ক্রমেই বেড়ে যায়। বাঙালি নারীর ভূষনে শাড়ীর প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এক সময়ের মসলিন শাড়ীর আদলে রেশমী সুতার নকশা ও কারুকাজে খচিত সুতি সুতার মাঝেই কারিগরের সুঁই সুতার ব্যস্ততা।
শৈল্পিক গুণসমৃদ্ধ একেকজন কারিগর দীর্ঘদিন মনের মাধূরী মিশিয়ে তৈরী জামদানী শাড়ীগুলো দিয়েই তাদের জীবিকার হাল ধরেছেন। তাই জামদানী এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রতিবেশি দেশের বাসিন্দাদের পছন্দের তালিকায়। পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজাসহ নানা উৎসব এলেই নতুন অর্ডারের পাশাপাশি প্রিয়জনের জন্য একটু বিলাসবহুল শাড়ী উপহার দেয়ার রীতিটুকু যেন পালিত হয় এ জামদানী শাড়ী দিয়েই। কেউ বা বসের মন জয় করতে তাদের পতি্নকে পাঠিয়ে দেন এ দামী শাড়ী। সব মিলিয়ে জামদানী শাড়ী এখন ফ্যাশনের পাশাপাশি নারী ভূষনের অন্যতম পছন্দের পণ্য। তাই জামদানীর কারিগর ও ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো।
সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, লাল রেশমি সুতায় বাহারী জরি, বাদলাই ও পাথর ব্যবহার করে কারিগরের শৈল্পিক নকশা বুননে তৈরী হচ্ছে একেকটি জামদানী। শাড়ীর পাড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যতিক্রম সব কারুকাজ। যা নজর কাড়ে যে কোন বিলাসী ক্রেতার। তবে সাধারন ক্রেতারা বাদ যায় না এ ঐতিহ্যের ছোঁয়া থেকে। কারণ তাদের জন্যও রয়েছে জামদানীর রকমভেদে বাহারী বস্ত্র তৈরীর মূল্যভেদী শাড়ী। মাত্র দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা দামের শাড়ীও তৈরী করছেন জামদানীর কারিগররা। তাদের ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য, আমদানী ব্যয়, কারিগরের নকশা ও তাদের মুজুরী ব্যয় ও সময় ব্যয়ের উপর এ মূল্যে তারতম্য ঘটে। তাই মানভেদে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণির ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে আগেভাগেই অর্ডার করেন। পেয়ে যান মনের মত নকশা আঁকা মনের মাধূরী মেশানো শখের শাড়ি।
তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়ার জামদানী কারিগর বিল্লাল হোসেন জানান, তাদের একেকটি শাড়ী তৈরীতে ১ সপ্তাহ থেকে ৩ মাসের বেশি সময় লাগে। এসব শাড়ী স্থানীয় বিসিক শিল্প নগরীর হাট ছাড়াও পাইকারী দামে দেশের বৃহত্তম শপিং মলের কাপড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ মহাজনী কায়দায় ঋণ দিয়ে এ পল্লীতেই গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। তাদের দৌরাতে্ন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে সঠিক মূল্য পান না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগও কোন ব্যবস্থা নেন না বলে জানান।
সুরিয়াব এলাকার ইয়াছিন মিয়া জানান, দেশের মসলিন কাপড়ের পর জামদানী শাড়ির কদর এখন বেশি। প্রতিটি উৎসবেই এ শাড়ীর উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ জামদানী শাড়ী তৈরীর জন্য আধূনিক ইলেট্রিক কোন ব্যবস্থা থাকলে এ পেশায় আসা লোকজন আরো লাভবান হতে পারতেন। একেকটি শাড়ী তৈরীতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করায় এর দাম নেয়া হচ্ছে বেশি। তাই বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে এ শাড়ী প্রস্তুত করার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যবস্থা নিলে এ শিল্পটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসত।
জামদানী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবী, যে ক্রেতা জামদানী সম্পর্কে জানেন, তারা সরাসরি তাঁত থেকে কম দামেই এসব শাড়ী কিনতে পারেন। কারন হিসেবে তারা জানান, এসব শাড়ীর মধ্যে যে শাড়ীটির দাম ১০ হাজার টাকা, সে শাড়ী তাঁত থেকে ক্রয় করলে কেবল ৭ হাজার টাকায় কিনতে পারেন। তবে একই শাড়ী কাপড় সপিংমলে গেলে ২০ থেকে ৩০ হাজ টাকায় কিনতে হয় ক্রেতাদের। তাই জামদানী পল্লী থেকেই এসব শাড়ী কেনার পরামর্শ দেন তারা।
স্থানীয় তাহছিনা আক্তার বলেন, তারাব পৌরসভার পাশাপাশি রূপগঞ্জে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামেই এখন এ জামদানী তাঁত গড়ে উঠেছে। এসব তাঁতে প্রায় দেড় হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজার কারিগর কাজ করছেন। এখানকার তৈরী তাঁতের জামদানী শাড়ী দেশের বাইরেও যাচ্ছে। যা এ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলছে। তবে সরকারী পৃষ্টপোষকতা বাড়ালে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে। ক্রেতারাও কমদামেই এ শাড়ী কিনতে পারবেন। প্রতি উৎসব ছাড়াও এখানকার দোকানগুলোতে থাকে সব রকম শাড়ী। ক্রেতারা পছন্দ করে এখান থেকে সরাসরি কিনছেন তাদের প্রিয়জনের জন্য।
এ বিষয়ে তারাব পৌর মেয়র মিসেস হাছিনা গাজী বলেন, রূপগঞ্জের জামদানী পল্লীতে আসা পাইকারদের সুবিধা দিতে এ বছর ১০৯ কোটি টাকার বাজেট হতে একটি অংশ এর উন্নয়নে রাখা হয়েছে। এখানকার জামদানী ব্যবসায়ীদের হাট সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নোয়াপাড়ার জামদানী পল্লীর সকল আধুনিক সুবিধা আদায়ের জন্য বিশেষ মহলের সহযোগীতায় উন্নয়নের কাজ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।