পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাথে লড়াই চলা রণাঙ্গনের কাছে একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে আছে ইরাকি বাহিনী। বাদামি মাটিতে খাটানো হয়েছে তাদের সাদা তাঁবু। সেখানে রয়েছে সাঁজোয়া ট্রাকগুলো যেগুলো তাদের নিয়ে এসেছে এখানে। মসুলের সবচেয়ে কাছে পৌঁছেছে তারা। এখন আক্রমণের অপেক্ষা। গত মাসের গোড়া থেকেই মনে হচ্ছিল যে এই বুঝি আক্রমণ শুরু হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যখন মার্কিনীদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইরাকি বাহিনী তাদের প্রথম পুনর্দখল করা আল নাসর থেকে বিতাড়িত হয়। এখন ইরাকি বাহিনী ও মসুলের মধ্যে আরো ২৫টি ছোট শহর ও গ্রাম রয়েছে যেগুলো আইএসের দখলে। ইরাকি বাহিনীকে আরো ৬০ মাইল অগ্রসর হতে হবে।
ইরাকিদের পিছনে মাখমুর শহরের কাছে অবস্থান নিয়ে আছে কুর্দি পেশমের্গা। ২০১৪ সালে আইএসের মসুল দখলের পর থেকেই মাখমুর হচ্ছে রণাঙ্গন। ইরাকি সেনাবাহিনী আসার আগে পর্যন্ত লড়াইটা ছিল তাদের। এখন তারা অংশীদার। কিন্তু অংশীদারিত্বটা সুবিধার নয়।
উভয়পক্ষেরই বিশ্বাস যে, মসুল পুনর্দখলের পথে যা ঘটবে তা শুধু যুদ্ধের গতিপথই নয়, ইরাকের ভবিষ্যৎ রূপও পাল্টে দেবে। আর বড় রকম ঝুঁকি সত্ত্বেও এখান থেকে যে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তাতে সন্দেহ ও বৈরিতা ছায়া ফেলছে।
আইএসের আক্রমণাভিযানের দু’বছর পরও ইরাক এখনো জাতিগোষ্ঠিগত ও গোষ্ঠিগত অশান্তি এবং রাজনৈতিক গোলযোগে অচলাবস্থার শিকার। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় নয়, ইরাকি সেনাবাহিনী আইএসের মোকাবেলা করার আগেই শিয়া মিলিশিয়া ও কুর্দিদের সাথে ক্ষমতার লড়াইতে লিপ্ত। ফল হয়েছে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থতা। ইরাক কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ভোগকারী উত্তর ইরাক আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, আর কুর্দিরা সন্দেহ করছে যে ইরাকি সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
ইরাকি সেনা অবস্থান থেকে এক মাইল পিছনে কুর্দি পেশমের্গার অবস্থানে বালির ব্যাগের পিছনে ক্যাপ্টেন শওকত বলেন, ইরাকের আগের অবস্থা আর নেই। এখন সবার কাছেই তা স্পষ্ট, এমনকি পাহাড়ের উপর আমেরিকানদের কাছেও।
তার পরের অবস্থানে আরেকজন কুর্দি সেনা অফিসার লেঃ কর্নেল শ্রুদ বারজিনজি দূরবিন দিয়ে ইরাকি সৈন্যদের দেখছিলেন। তিনি বলেন, তাদের দিকে দেখুন। প্রতিটি সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্সেই আমাদের বলা হয় যে আপনার ও আপনার শত্রুর মধ্যে অবশ্যই কমপক্ষে ৫শ’ মিটার খোলা জায়গা থাকতে হবে। তারা রয়েছে পাহাড়ের নিচে, ঠিক তাদের নিচে। তাদের মধ্যে চমকে দেয়ার কোনো বিষয় নেই।
মধ্য মার্চ পর্যন্ত ইরাকি সেনাবাহিনী দূরে ছিল। তাদের সবচেয়ে অনুগত ইউনিটটি মাখমুরে ফেরত পাঠানোর আগে আনবারে মার্কিন বাহিনী তাদের পুনঃ প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। বারজিনজি বলেন, তারা যখন আল-নাসর আক্রমণ করল তখন ৩০ মাইল পিছনে পাহাড়ের উপর থেকে আমেরিকান বাহিনী কামানের গোলাবর্ষণ করে তাদের সমর্থন দিচ্ছিল। ক্যামেরা পরিচালিত তাদের কামানের লক্ষ্য গোলা ছিল মূল্যবান এবং তারা এখনো তা দখল করতে পারেনি। কয়েক ঘণ্টা পর ইরাকি সৈন্যরা পিছু হটে।
মাখমুর রণাঙ্গন মসুলের দক্ষিণ-পূর্বে ৭৫ মাইল বিস্তৃত। সকল পক্ষই জানে যে মসুলে প্রবেশের এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম পথ। মসুলে এখনো ৬ লাখ লোক আছে বলে ধারণা করা হয়। মাখমুর ও মসুলের মধ্যে পুরো এলাকাই আইএসের দখলে। আইএসের যোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে দেশী ও বিদেশীরা। প্রতিটি গ্রামের ফোন টাওয়ার বা অন্য যে কোনো উঁচু স্থানে আইএসের ব্যানার রয়েছে। জিহাদিদের উৎখাত করা কঠিন প্রমাণিত হয়েছে।
আইএসের বহু আটক যোদ্ধাই ইরাকি সেনাদের কাছ থেকে আটক করা অস্ত্র বহন করছিল। দু’বছর আগে আইএস যখন আক্রমণ চালায় তখন ৮০ হাজার থেকে এক লাখ সৈন্য আইএসের হাতে এলাকা সমর্পণ করে ও অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়।
আরেকজন পেশমের্গা সৈনিক আইএস যোদ্ধাদের সম্পর্কে বলেন, আমরা দিনের বেলায় তাদের দেখতে পাই না। এমনকি তারা যখন আমাদের উপর মর্টারের গোলা ছোড়ে তখনো আমরা জানি না তারা কোথা থেকে আসে। তারা রাতে চলাফেরা করে। তারা সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে, বোমা পেতেছে। আমরা যখন এ গ্রামে আসি চারপাশে বোমা ছিল। মসুলের গোটা পথেই এ অবস্থা হবে। তিনি ইরাকি সৈন্যদের সম্পর্কে বলেন, আমাদের বন্ধুরা নিজেরা এসব করতে পারে না, তা তারা জানে।
পার্থক্য হচ্ছে আমরা যে জন্য লড়াই করছি তা আমরা বিশ্বাস করি। আমরা সে লক্ষ্যে বিশ্বাস করি। আমাদের নীতি ও মূল্যবোধ আছে। এটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।
ইরাকি সৈন্যরা সোমবার অগ্রগতি লাভ করেছে। তারা মাখমুর এলাকায় কাবারুক গ্রাম পুনর্দখল করেছে। আল-নাসর থেকে পিছু হটার পর এটা তাদের প্রথম সাফল্য। প্রায় ৩শ’ গ্রামবাসী কুর্দি বাহিনীর কাছে যাওয়ার পর তাদের একটি আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইরাকের কোনো এক স্থানের উদ্বাস্তু পরিবেষ্টিত বারজিনজি বলেন, কাউকে আইএস বলে মনে হলে তাকে সোজা ইরবিলে পাঠানো হবে।
উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিশের ঘরে বয়স দু’তরুণকে দেখা যায়। একজন বলে , আমার পিতা একজন আইএস যোদ্ধা ছিলেন। তার ছিল তিন স্ত্রী। তিনি সংসারের খরচ যোগাতে না পেরে আইএসে যোগ দেন। এ ছিল তার আয়ের উৎস, কিন্তু তা আমাদের জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। দ্বিতীয় জন বলে, তার ভাই আইএসে যোগ দিয়েছিল ও তাকেও নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে যায়নি।
যুদ্ধক্ষেত্র বরাবর গ্রামগুলো আইএসের কাছ থেকে পুনর্দখল করে এখন ইরাকি বাহিনীর আক্রমণ শুরুর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বারজিনজির ধারণা যে এ বছর মসুল আক্রমণ করা হবে না। তিনি বলেন, আমরা সামরিক অফিসার, আমরা সহকর্মীদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতে পারি না। কি অর্জিত হয়েছে দেখুন। সামনে কি আছে তাও দেখুন। সূত্র : দি গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।