পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং আফগানিস্তানে মোতায়েন সৈন্যদের সংখ্যা হ্রাসের আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান স্থল বাহিনীর অবস্থান এবং সেখানে তাদের রাখা জরুরি কিনা সে বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আমি নিজেকেও সে প্রশ্ন করছি। এ প্রশ্নের জবাবের আগে আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা দরকার।
আরব বসন্ত যেখানে শুরু হয়েছিল সেখানে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ পন্থায় কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটেছিল। সে দেশের নারীদের পূর্ণ ক্ষমতায়ন সাধিত হয়। সেখানে আমাদের অল্পই করার ছিল এবং আমরা লড়াই করার ও মরার জন্য সৈন্য পাঠাইনি। এটি হল তিউনিসিয়া। হ্যাঁ, তিউনিসিয়া মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে যা আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে ইরাক, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে অর্জন করার আশা করেছিলাম। গত ৫০ বছর ধরে মার্কিন উপদেষ্টাদের চেয়ে মার্কিন পিস কোরকে সে দেশে কাজ করতে দিয়ে এবং ২০১০-১১ বিপ্লবের পর মাত্র ১০০ কোটি ডলার মার্কিন সাহায্য (ও ৩টি লোন গ্যারান্টি) লাভ করে তিউনিসিয়া তা করেছে।
তুলনা থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট ১৭ বছর ধরে আফগানিস্তানকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। এ এক উন্মত্ত বৈপরীত্য। তিউনিসিয়ার স্ব-পরিচালিত গণতন্ত্র এ অঞ্চলের জন্য মডেল যদিও গণতন্ত্র সেখানে ক্রমবর্ধমান ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশটি শ্রমিক ধর্মঘটের হুমকি কবলিত, লিবিয়ার অস্থিতিশীলতা সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে করে দেশটির শিক্ষিত যুবকরা পর্যাপ্ত চাকরি বা আয় করতে পারছে না। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ঋণ সরকারকে চাকরিতে লোক নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে। এ সব কিছুই ক্ষমতার ভাগিদার প্রধান খেলোয়াড় ট্রেড ইউনিয়নিস্ট, ইসলামপন্থী, পুরনো শাসকদের গোষ্ঠি ও নয়া গণতন্ত্রী সবার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
অন্যরা যেখানে পারেনি সেখানে তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটতে পারল কেন? আসলে এর শুরু হয়েছিল এর প্রতিষ্ঠাতা জনক হাবিব বরগুইবার সময় থেকে। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি তিউনিসিয়ার নেতা ছিলেন।
অন্যান্য আরব নেতার মত তিনি যদিও আজীবন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু শাসন বৈশিষ্ট্যে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি তার সেনাবাহিনীকে ছোট রেখেছিলেন এবং তার শাসনকালে ইসরাইলকে ধ্বংসের চেষ্টা করেননি। তিনি ইসরাইলের সাথে সহাবস্থানের একমাত্র কন্ঠ ছিলেন।
তিনি তিউনিসিয়ার নারীদের শিক্ষিত ও তাদের ক্ষমতায়ন করেন। সে সাথে শক্তিশালী সুশীল সমাজের অভ্যুদয় অনুমোদন করেন। গড়ে ওঠে ট্রেড ইউনিয়ন ও আইনজীবী সিন্ডিকেট। মহিলা গ্রুপসমূহ যারা বরগুইবার স্বৈরাচারী উত্তরসূরিদের ক্ষমতাচ্যুত এবং তিউনিসিয়ার ইসলামি আন্দোলনের সাথে একটি নয়া সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ভাগ্যের আশির্বাদ হিসেবে তিউনিসিয়া সামান্য তেল সম্পদ পেয়েছে। তাই দেশটি জনগণকে শিক্ষিত করতে বিনিয়োগ করতে পেরেছিল।
গণতান্ত্রিক বিপ্লব টিকিয়ে রাখার মত সাংস্কৃতিক ভিত্তি তিউনিসিয়ার আছে। কিন্তু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তর পৃথক গতিতে ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র (আমি নিজেসহ) আফগানিস্তান ও ইরাকে দ্রæত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তর চেয়েছিল। কিন্তু পিটার ড্রাকার একবার বলেছিলেন, ‘সংস্কৃতি নাস্তার জন্য কৌশলকে খেয়ে ফেলে’। এই বাস্তবতা, সে সাথে আমাদের অযোগ্যতা ও তাদের দুর্নীতি ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে জীবন্ত খেয়ে ফেলেছে।
সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ও আফগানিস্তানে তাদের সংখ্যা হ্রাসের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত এ সবেরই ফল বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি আফগানিস্তানের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত ঠিক। আমরা সেখানে আল কায়েদাকে পরাস্ত করেছি। চমৎকারভাবে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের জন্য তালিবান ও পাকিস্তানের সাথে আলোচনার এখন সময় এসেছে। প্রত্যাহারের সময় আমাদের পক্ষে যারা কাজ করেছে তাদের যত বেশী সংখ্যককে সম্ভব সাথে নিয়ে আসতে হবে। আফগানিস্তানের চারপাশে কঠিন দেশগুলো রয়েছে- রাশিয়া, পাকিস্তান, চীন, ভারত ও ইরান। তাদের ক্ষমতা আছে আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও তা জিইয়ে রাখার।
আমি সিরিয়াতে বিশেষ বাহিনী রাখার পক্ষে। তবে তা এজন্য নয় যে আমাদের আইএসকে পরাস্ত করতে হবে। আইএস হচ্ছে সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে ব্যাপক আঞ্চলিক লড়াইয়ের সরাসরি উপজাত। এর নেতৃতে¦ রয়েছে সউদী আরব ও ইরান। ইরাক ও সিরিয়ায় জাতিগোষ্ঠিগত নির্মূল অভিযান ও সুন্নিদের ক্ষমতাচ্যুত করতে ইরান এবং ইরাক ও সিরিয়ার ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়াদের উন্মত্ত চেষ্টার বিরুদ্ধে চরম সুন্নি জবাব হিসেবে আইএস-এর উত্থান ঘটেছিল।
ইরান যতদিন এই কৌশল অনুসরণ করবে, একভাবে না একভাবে আইএসের আগমন ঘটবে। সে কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে আজ একটিমাত্র শান্তি প্রক্রিয়াই শুধু স্থিতিশীলতা আনতে পারে। আর তা ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা নয়, ইরান-সউদী আরব শান্তি আলোচনা।
ছোট কিন্তু বিপুল ব্যয়বহুল নয়, সিরিয়ায় এ রকম একটি মার্কিন বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যে তারা সেখানে দুইভাবে প্রকৃত বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির ভীতিকে প্রতিহত করতে পারে। তারা আংশিকভাবে এটা করতে পারে কুর্দি ও মধ্যপন্থী সুন্নীদেরকে হত্যাপ্রবণ সিরিয়া ও তুরস্কের হাত থেকে রক্ষা করে। মূলধারার সিরীয় ও কুর্দিরা পৃথিবীর এ অংশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিষ্টাচার ও পাশ্চাত্য মূল্যবোধের অনুসারী। আমরা হয়ত একদিন তাদের প্রত্যাশামত শিষ্টাচারের ভূখন্ড গড়ে দিতে পারব।
আমাদের সৈন্যরা উত্তরপূর্ব সিরিয়াকে স্থিতিশীল করায় সাহায্য করতে পারে। তারা এক বিরাট উদ্বাস্তু স্রোত ঠেকাতে পারে। যা পুনরায় লেবানন ও জর্দানকে অস্থিতিশীল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে যেমনটি আগে ঘটেছে। আমার কাছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বিশ্বের আরেকটি যুক্তরাষ্ট্র। আর আমাদের ও ন্যাটোর এক গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তুদের কারণে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে ইউরোপকে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার।
চূড়ান্তভাবে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে আসার কারণে যে ৪৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ বাঁচবে তা থেকে আমি ২ বিলিয়ন ডলার চাই। গোটা আরব বিশে্ব তিউনিসিয়াকে যা অনন্য করেছে সেই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য আঞ্চলিক ভাবে তা বিনিয়োগ করব। আমরা কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাকের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, সুলায়মানি ও আফগানিস্তানের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়কে বিপুল সাহায্য দিয়েছি।
আমরা একসময় বৃত্তিদান কর্মসূচি বিপুলভাবে সম্প্রসারিত করায় শীর্ষ আরব সরকারি স্কুলগুলোর ছাত্ররা লেবানন বা এ অঞ্চলের যে কোনো মার্কিন পদ্ধতির উদার আর্ট কলেজে পড়াশোনা করতে পেরেছে। আমরা আমেরিকায় পড়াশোনা করার জন্য বিশেষ করে আরব নারীদের জন্য ব্যাপকভাবে ছাত্র ভিসা ও বৃত্তি দিয়েছি। আমরা ৫ হাজার ইরানি ছাত্র-ছাত্রীকে বিজ্ঞান, প্রকৌশল বা চিকিৎসায় স্নাতক ডিগ্রি লাভের জন্য আমেরিকায় আসতে দিয়েছি। এ তালিকা আরো দীর্ঘ হবে।
আমরা তিউনিসিয়াকে ১০০ কোটি ডলার সুদবিহীন ঋণ দিয়েছি। তিউনিসিয়ার আমেরিকান বাণিজ্য তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়ে চারগুণ করেছি। বাকি ৪৩ বিলিয়ন ডলার আমাদের আমেরিকায় নয়া অবকাঠামোতে ব্যয় করতে হবে।
৯/১১-র পর থেকে আমরা সম্পূর্ণরূপে কঠোর শক্তি প্রয়োগের উপর নির্ভরশীল। কিছু দরকার ছিল, এখনো কিছু দরকার, কিন্তু অধিকাংশই ব্যর্থ হয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের নমনীয় শক্তি ব্যবহারের চেষ্টার। যা বোঝায় যে এখন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অল্প ট্যাংক পাঠানো আর বেশী স্কুল চাই। এখন আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করার সময় এসেছে একটি মার্কিন জঙ্গি বিমানও ব্যবহার না করে যে শক্তি তিউনিসিয়াকে গণতন্ত্রে উত্তরণ করেছে, আরব ও ইরানিদেরকে সেদিকে অগ্রসর হওয়ার দিকে সক্ষম করা। হ্যাঁ, এ জন্য লম্বা সময় লাগবে। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্টকার্ট বলে কিছু নেই। পেন্টাগন নেতৃত্ব দিক বলে যদি আমরা চেষ্টা করি তবে তা বহুমুখী অচলাবস্থার শেষপ্রান্তে এগিয়ে নেবে।
(নিবন্ধকার টমাস এল.ফ্রিডম্যান। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্তব্য- সম্পাদকীয় কলামিস্ট ও পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত। তার গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।