Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাদিক খানের লন্ডন বিজয় মুসলিম নেতৃত্ব উত্থানের সূচনা

প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৭ এএম, ১২ মে, ২০১৬

স্টালিন সরকার : গণতান্ত্রিক ভোটে ভূমিকম্প হয়ে গেল লন্ডন শহরে। লন্ডন সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে হয়ে গেলো উলোটপালট। রাণীর শহরে জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলেন পাকিস্তানের এক বাস ড্রাইভারের ছেলে। তিনি আবার মুসলমান। বিশ্বব্যাপী ইঙ্গ-মার্কিনীদের ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার মধ্যেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে সাদিক খানের বিজয় বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে। বলা চলে বিশ্বরাজনীতির নেতৃত্বে মুসলিম নেতৃত্ব উত্থানের সূচনা। নির্বাচনে ইউকিপের পিটার হোয়াইট, লিবজেমের ক্যারোলাইন পিগোজল, গ্রীন পার্টির সেইন বেরি, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের রিচমন্ডের এমপি জ্যাক গোল্ডস্মীথসহ ১১ জন প্রার্থীকে পরাজিত করে লেবার পার্টির সাদিক খানের মেয়র নির্বাচিত হওয়া আগামীর বিশ্ব-রাজনীতির গতি-প্রকৃতির জন্য খুবই তৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনে ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার মধ্যেও তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। লন্ডন সিটির ভোট স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও লন্ডন সিটির গুরুত্ব আর দশটা দেশের রাজধানী থেকে আলাদা। লন্ডন সিটি, ওয়াশিংটন সিটি, নিউইয়র্ক সিটি এগুলো বিশ্ব রাজনীতি পরিচালনার কেন্দ্রস্থল। ঢাকা থেকে যেমন সারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়; ওই সব শহর থেকে বিশ্ব রাজনীতির গতিধারা নিয়ন্ত্রণ হয়। যার কারণে লন্ডন সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার গুরুত্ব খুবই তৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতি যে বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তনের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে শুরু করেছে তারই ফোরকাস্ট হলো লন্ডন সিটির মেয়র নির্বাচনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী সাদিক খানের বিজয়।
বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র নিয়ে ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের ‘বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলমানদের বিশাল উত্থান’ শিরোনামের লেখা ২৫ এপ্রিল ছাপা হয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত বিশ্লেষণধর্মী ওই লেখায় গোটা বিশ্বের চলমান অস্থির রাজনীতির মূল্যায়ন এবং আগামীর রাজনীতির গতিধারা কেমন হতে পারে তিনি সে ধারণা দেন। লেখাটিতে প্রচুর পাঠক মতামত দিয়েছেন। সমর্থন করে অসংখ্য লাইক পড়েছে। লেখাটি প্রকাশের ১০ দিনের মাথায় ৫ মে হয়ে গেল লন্ডন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আশ্চর্যজনকভাবে সে নির্বাচনে লেবার পার্টির মুসলিম প্রার্থী সাদিক খান নির্বাচিত হলেন। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথের চেয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট বেশি পান। তিনি ১৩ লাখ ১০ হাজার ১৪৩ ভোট পান। আর গোল্ডস্মিথকে ভোট দেয় ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ ভোটার। বিবিসিসহ যুক্তরাজ্যের মূল ধারার পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত নির্বাচনী খবরাখবরে দেখা যায়, লন্ডন সিটির মেয়র নির্বাচনে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, মুসলিম শব্দগুলো অধিক ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি পাকিস্তান বংশোদ্ভূত সাদিক খানকে মুসলিম উগ্রপন্থীদের লোক হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়। অথচ লন্ডনের মানুষ সাদিক খানকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৮ বছর পর কনজারভেটিভ দলের বরিস জনসনের হাত থেকে লন্ডন সিটির ঝা-া আবারো বর্তমান প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হাতে এলো। আর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের প্রথম মুসলমান মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন সাদিক খান। ইউরোপের কোনো রাজধানী শহরে তিনিই প্রথম মুসলিম মেয়র। উল্লেখ্য, লন্ডনের এ নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মতো সকাল ৯টার আগে ভোগ গ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। পোলিং এজেন্ট ও পুলিশ ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরেনি। শহরের ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন।
মিডিয়ার খবরগুলোর দিকে নজর দিলে চোখে পড়ে লন্ডন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়। এক কথায় অসুস্থ প্রচারণার চর্চা ছিল জমজমাট। নির্বাচনে লেবার দলের মেয়র প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই সাদিক খানকে মোকাবিলা করতে হয়েছে প্রতিপক্ষের নেতিবাচক অপপ্রচার। মাঝে মাঝে সে প্রচারণা হিংসাত্মক পর্যায়ে গেছে। কনজারভেটিভ পার্টির তরফ থেকে সাদিক খানের মুসলিম পরিচয় ভোটারদের সামনে তুলে ধরে প্রচারণা চালানো হয়। এমনকি সাদিকের সঙ্গে উগ্রপন্থী মুসলিমদের যোগাযোগ আছে বলেও মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ প্রচারণায় সাদিক খানকে একজন চরম বর্ণবাদী, গোঁড়া মৌলবাদী এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি অন্ধভক্ত হিসেবে তুলে ধরেন। সাদিক খান মেয়র হলে লন্ডন শহর মৌলবাদের আখড়া হবে এমন শঙ্কা প্রচার করা হয়। ফলে লন্ডন সিটির নির্বাচনী প্রচারণা কার্যত রূপ নেয় মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডায়। শুধু কি তাই! যুক্তরাজ্যের বহুল প্রচলিত ডেইলি মেইল পত্রিকায় জ্যাক গোল্ডস্মিথের একটি লেখা ফলাও করে ছাপা হয়। সেখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ২০০৫ সালে আলোচিত ‘লন্ডন বোমা হামলার’ ছবির পাশে সাদিক খানের ছবি জুড়ে দিয়ে অসত্য তথ্য তুলে ধরা হয়। এমনকি সাদিক খান ওই হামলার সমর্থক বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ এ তথ্যের কোনো প্রমাণ গোল্ডস্মিথ ভোটারদের সামনে হাজির করতে পারেননি। ফলে ল-ন শহরের ভোটাররা গোল্ডস্মিথের দেয়া তথ্য নিজেদের মতো করেই মূল্যায়ন করেন। লন্ডনের অনেকেই বিশ্বাস করতেন নির্বাচনে মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা নির্বাচনে সাদিক খানের ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভোটাররা মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাধ্য হয়েই গোল্ডস্মিথকে ভোট দেবেন। বাস্তবতা হলো- লন্ডন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। কারণ লেবার প্রার্থী সাদিক খান নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মীয় বিতর্কে না জড়িয়ে লন্ডনবাসীর জন্য কী কী করণীয় সেগুলো তুলে ধরেছেন। আবাসন সমস্যার সমাধান, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি না করা ইত্যাদি পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়েই তিনি ভোটারদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে সমর্থ হন। তিনি একজন বাস ড্রাইভারের সন্তান সেটাকে তিনি তুলে ধরেন। এখন লন্ডনের প্রধান প্রধান মিডিয়াগুলোতে নির্বাচনে হারের জন্য জ্যাক গোল্ডস্মীথের ওই ‘নোংরা’ প্রচারণাকেই দায়ী করা হচ্ছে। লন্ডন সিটির নির্বাচনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী সাদিক খানের এই বিজয় প্রমাণ করে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা লন্ডন শহরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ইউরোপের দেশে দেশে এ বার্তা ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে। কাজেই আগামীতে ইঙ্গ-মার্কিনীদের মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। আর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে নগরবাসীর জন্য সাদিক যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্যান্য শহরেও মুসলমান নেতৃত্ব সামনে চলে আসবে।



 

Show all comments
  • H.k.M.M.Jakir hussain ১২ মে, ২০১৬, ১০:২৯ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ!শুনে অত্যন্ত খুশি হলাম যে,লন্ডনের মতো একটি সিটিতে মসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।সে দিন আর বেশি দুরে নয়! যে দিন সমগ্র বিশ্ব মুসলিমরাশাষন করবে!।
    Total Reply(0) Reply
  • সোহেল ১২ মে, ২০১৬, ১২:৩৫ পিএম says : 0
    সম্পাদক ও আপনার আশা জাগানো এই লেখার জন্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • ABDUL WAZED ১২ মে, ২০১৬, ২:০০ পিএম says : 0
    God is great .I hope Mr.Sadik khan will prove infront of the big leader ,muslim is not terrorist specially infront of Mr .D.trump
    Total Reply(0) Reply
  • Raj ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:২৮ এএম says : 0
    আমাদের দেশও তো মুসলিমরা শাসন করে ৷ এজন্য এখানে ভোট চুরি হয়না ৷ চাকুরি পেতে ঘুষ লাগেনা ৷ কত সুখ আমাদের!
    Total Reply(0) Reply
  • Zahidur rahaman Razu ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১২ এএম says : 0
    উনি তার কর্মের দ্বারা যেন সমস্ত লন্ডন বাসীকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন এবং মুসলিমদের মাথা উচু করতে পারেন,সে কামনা রইল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাদিক খানের লন্ডন বিজয় মুসলিম নেতৃত্ব উত্থানের সূচনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ