পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। এ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আর নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ মঙ্গলবার। সকাল ১০টায় শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে গুরুত্ব পাচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো। এতে বিকল্প চেয়ারপারসন হিসেবে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভা শেষে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। জাতীয় নির্বাচনের কারণে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর নতুন বছরে নতুন সরকারের প্রথম একনেক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ তিনটি একনেক সভায়ই ৯১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭ নভেম্বরের সভায় ২৮টি, ৪ নভেম্বরের বিশেষ সভায় ৩৯টি এবং ৩০ অক্টোবরের সভায় ২৪টি প্রকল্পের অনুমোদন মিলে। যদিও গত বছরজুড়ে কেবল পদ্মা সেতু বাদে সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত বাকি প্রকল্পগুলোতেও কাজের গতি ছিল না। এ ক্ষেত্রে কাজে আসেনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনাও। যে কারণে প্রকল্পে সময় যেমন বাড়ছে, ভারি হচ্ছে ব্যয়ের খাতাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের ঠিকঠাক ফল পেতে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির মোট ২৫টি বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রতিটি বৈঠকে গড়ে চারটি করে এক বছরে ২০০ নতুন প্রকল্প অনুমোদনের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ মাসেই।
নভেম্বর পর্যন্ত একনেকের ১৪ বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২১০ নতুন প্রকল্প। এর বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় আরো ৯৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। সব মিলে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) যোগ হচ্ছে ৩০৯ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমএডি) কর্মকর্তারা বলছেন, এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে এডিপিতে প্রকল্প ছিল ৯৯৯টি। এ সংখ্যা বেড়ে চলতি অর্থবছরে দাড়িয়েছে এক হাজার ২৭২টিতে। এ অবস্থায় নতুন অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প যোগ হলে এর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এডিপি কাটছাঁটের উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন প্রকল্প যোগ হওয়ায় অর্থায়ন সমস্যার কারণে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বিশ^ ব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বিভিন্ন শঙ্কা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চলে গেছে। তবে নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো করে নতুন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। সে জন্য প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের ডিজাইন, কারিগরি ও আর্থিকসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকল্প প্রস্তাবে রয়েছে কি না তা দেখা উচিত। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চলমান এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ চলছে। এ সময় মেগা প্রকল্প ও যেসব প্রকল্পের গতি ভালো সেগুলোতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম সেসব প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কাটছাঁট হলে সমস্যা নেই।
প্রকল্পের ভারে জর্জরিত এডিপিতে গতি আনতে ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। আরএডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় নতুন প্রকল্প নিরুৎসাহিত করে চলমান প্রকল্পে গতি আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কাজ শেষ হবে এমন প্রকল্পে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেয়ারও নির্দেশ রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এ নীতিমালায়। এত কিছুর পরও প্রকল্প অনুমোদন থামছে না। গত রোবাবর শুরু হওয়া নতুন প্রকল্পের সিরিজ বৈঠক শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি। এসব বৈঠকে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় প্রকল্পগুলোর গতি বাড়বে। সংশোধিত এডিপিতে চলতি অর্থবছরের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মধ্যেই সমন্বয় করা হবে। কাজ বাধাগ্রস্ত না করতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনের আগেই ব্যাপক নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। নভেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ২১৯ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে দুই লাখ ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। অথচ এবার এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা এডিপি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ অবস্থায় প্রথম বছরে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে নতুন প্রকল্পগুলো চালু রাখা হতে পারে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অন্য প্রকল্প থেকে অর্থ কেটে কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অনেকটা সময় চলে গেছে। আরএডিপি প্রণয়নের কাজ শেষ করতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে। এ অবস্থায় তাই নতুন প্রকল্পগুলোর অনুক‚লে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে না। বাস্তবায়ন শুরু করা, অফিস স্থাপন, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্য অল্প বরাদ্দ দেয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, গত মাসের শুরুতে আরএডিপি প্রণয়ন নীতিমালা জারি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এতে ধীরগতির রুগ্ন প্রকল্পের অর্থ কেটে দ্রুতগতির প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নতুন প্রকল্প নেয়ার পরিবর্তে চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে এমন প্রকল্পে বেশি অর্থ বারদ্দেরও নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্য বিমোচনে সরাসরি সহায়ক হতে পারে এমন প্রকল্প আরএডিপিতে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ রয়েছে নীতিমালায়। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষায় নেয়া প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। অগ্রাধিকার থাকবে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া প্রকল্পে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্পেও পর্যাপ্ত অর্থ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে নীতিমালায়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, উন্নয়ন সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি। আর অবকাঠামোর ক্ষেত্রে এতদিন বিদ্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। এখন গুরুত্ব দেয়া হবে সড়কে। অর্থাৎ নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে বিদ্যমান সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন, চার লেনে উন্নীতকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম একনেকে যেসব প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে; সেগুলো নির্বাচনের আগে সর্বশেষ একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু সে সময় সম্ভব না হওয়ায় এবার উপস্থাপন করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে ওই সময়ে বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো একনেকে পাস করা হবে। এসব প্রকল্প নির্বাচনের আগেই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছিল। সুতরাং নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে ওইভাবে সম্পর্ক নেই।
নতুন সরকারের একনেক সভায় মোট ৯টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পই রয়েছে ছয়টি।
পরিকল্পনা বিভাগ জানায়, একনেকে উঠতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ নামের প্রকল্পটি প্রথম একনেক টেবিলে স্থান পাবে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যা দু’টি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটকে সংযুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত সড়কটি এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাঁচপুর সেতু ও পোল্ডার সড়ক নির্মাণের ফলে এই সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুনিয়া-মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণ, গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি/পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ ও প্রত্যেক জেলা/উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বিদ্যমান সাতটি টেক্সটাইল ভকেশনাল ইন্সটিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ছয়টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। শিল্প ও শক্তি বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। এ ছাড়া কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতায় পিপিআর রোগ নির্মূল, ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।