পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলে দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময়। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলে এই বিচার কার্যক্রম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ পর্যন্ত চলে তার বিচারকার্যক্রম। ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আসে ট্রাইব্যুনালে নিজামীর মৃত্যুদ-ের রায়। চলতি বছর ৬ জানুয়ারী আসে আপিলে রায়। আপিলেও নিজামীর মৃত্যুদ- বহাল থাকে। হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদ- বহাল থাকে। সর্বশেষ গত ৫ মে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে তাঁর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল থাকে। ফাঁসি রায়ের মধ্যে দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হল।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মৃত্যুদ-াদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটিতে নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করে বাকিগুলোতে খালাস দেয়া হয়। এই অপরাধগুলোর মধ্যে ছিল হত্যা, নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন ও বিতাড়নের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য চালানো হত্যাকা-। রায়ে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, এসব অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। বাকি আটটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার সেগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর ঘটনায় নিজামীর ফাঁসির রায় আসে। প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৬ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন মোট চারজন।
আপিলের রায়: ট্রাইব্যুনাল-রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। এই আপিলের ওপর ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শুরু হয় চলে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বাদশ দিনে শুনানি নিয়ে ৮ ডিসেম্বর আদালত রায়ের দিন ঠিক করে দেয়। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ নিজামীর আপিলে রায় ঘোষণা করেন। আপিলের রায়ে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল থাকে। যাবজ্জীবন কারাদ-ের সাজা বহাল রাখা হয় ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে। ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ: ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে। এরপর নিজামীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায় লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। এরপর গত ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। পরদিন তা নিজামীকে পড়ে শোনানো হয়।
যে তিন অভিযোগে মৃত্যুদ-:
অভিযোগ-২: একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ-৬: নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।
অভিযোগ-১৬: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে। রায় পুনর্বিবেচনা আবেদন: গত ২৯ মার্চ মতিউর রহমান নিজামী রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে তার দ- থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। রিভিউ আবেদনের জন্য নির্ধারিত ১৫ দিন সময় শেষ হওয়ার আগেই নিজামীর পক্ষে তার আইনজীবীরা এ আবেদন জমা দেন। আবেদনের শুনানি ৩ মে শুনানি হয় এরপর রায়ের দিন ঠিক করেন। ৫ মে রিভিউ খারিজ করেন রায় দেন আপিল বিভাগ। তিন দিন পর ৯ মে রিভিউ খারিজ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।